× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ১৪ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৮ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালিত /দেশে প্রায় পৌনে দুই কোটি মানুষ ম্যালেরিয়া ঝুঁকিতে

দেশ বিদেশ

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২৬ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার

বান্দরবানের সদর উপজেলার থোয়াইংগ্য পাড়ায় বাস মারমা জনগোষ্ঠীর। এই পাড়ার বাসিন্দা মিয়ানু প্রু। বয়স ৪৫ বছর। দু’বছর আগে তিনি ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। জুম চাষ করে তাদের জীকিকা নির্বাহ করতে হয়। সরজমিনে তার সঙ্গে কথা হয় তাদের পাড়ায়। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান, হঠাৎ করে তার জ্বর হয়। জ্বর হওয়ার দুই দিনের মাথায় তিনি স্থানীয় ব্র্যাকের স্বাস্থ্য কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
এবং ওই স্বাস্থ্য কর্মী পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে মিয়ানু প্রুকে জানান তার ম্যালেরিয়া হয়েছে। এরপর তিন-চার দিন ওষুধ সেবনের পর তার ম্যালেরিয়া সেরে যায়। মিয়ানু প্রু আরো জানান, তার ম্যালেরিয়া হওয়ার আগে তার পরিবারের পাঁচ বছর বয়সী নাতি জুচানুরেরও ম্যালেরিয়া হয়েছিল। শুধু মিয়ানু বা তার নাতি নন, বান্দরবান জেলা বাংলাদেশের ম্যালেরিয়া প্রবণ জেলাগুলোর শীর্ষে। তিন পার্বত্য জেলায় ম্যালেরিয়ার প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা জানান, ম্যালেরিয়া বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান জনস্বাস্থ্য সমস্যা। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৩টি দক্ষিণ এবং উত্তর-পূর্ব সীমান্তবর্তী জেলার ৭১টি উপজেলায় ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব রয়েছে। প্রায় ১ কোটি ৭৫ লাখ ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী এই ম্যালেরিয়াপ্রবণ জেলায় বাস করেন। এই ১৩টি জেলার মধ্যে উচ্চ ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল হচ্ছে তিন পার্বত্য জেলা (বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়ি), মধ্য ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চল কক্সবাজার এবং নিম্ন ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলগুলো হচ্ছে চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, ময়মনসিংহ, শেরপুর ও  কুড়িগ্রাম। সীমান্তবর্তী পাহাড় ও বনাঞ্চলবেষ্টিত এবং বৃষ্টিপাত বেশি হওয়ায় শুধুমাত্র তিন পার্বত্য জেলায়- বান্দরবান, রাঙ্গামাটি ও খাগড়াছড়িতে মোট ম্যালেরিয়া রোগীর প্রায় ৯৩ শতাংশ আক্রান্ত হয়ে থাকে। এর মধ্যে বান্দরবানেই ৬০ শতাংশ ম্যালেরিয়া রোগী গত বছর শনাক্ত করা হয়। বান্দরবানের আলীকদম ও থানচিতে সবচেয়ে বেশি ম্যালেরিয়া রোগী শনাক্ত হয় গেলো বছর। এই জেলাতে ২০১৭ সালে আক্রান্ত হয় ১৭ হাজার ৪৯২ জন। এই সংখ্যা ২০১৬ সালে ছিল ১৪ হাজার ১৮৬ জন। ২০১৬ সালের তুলনায় বৃদ্ধির হার ২৩ শতাংশ বেশি। বান্দরবানে ২০১৫ সালে ছিল ১৮ হাজার ২৬২ জন ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত রোগী। এলাকাগুলো দুর্গম ও পাহাড়ি বন হওয়ায় দ্রুততম সময়ের মধ্যে রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা প্রদান করা বেশ কষ্টসাধ্য বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বাংলাদেশে মূলত দু’ধরনের ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে- ফ্যালসিপেরা ও ভাইভেক্স ম্যালেরিয়া। ২০১৭ সালে প্রাপ্ত ম্যালেরিয়া রোগীর প্রায় ৮৫ শতাংশ ফ্যালসিপেরাম জীবাণুঘটিত; যা পরবর্তীতে মারাত্মক ম্যালেরিয়া এবং ম্যালেরিয়া রোগের মৃত্যুর জন্য মূলত দায়ী। দেশে গত তিন-চার বছরে ম্যালেরিয়া আক্রান্তের হার ক্রমান্বয়ে কমেছে। ২০১৪ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৪৮০ জন। ২০১৫ সালে তা কমে ৩৯ হাজার ৭১৯ জনে এবং ২০১৬ সালে আরো কমে ২৭ হাজার ৭৩৭ জনে দাঁড়ায়। ২০১৭ সালে ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়েছে ২৯ হাজার ২৪৭ জন। তবে ২০১৫ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে ম্যালেরিয়ায় মৃত্যুর হার ৮ জন বেড়েছে। ২০১৫ সালে যেখানে এই রোগে মৃত্যু হয়েছিল ৯ জনের, সেখানে ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১৭ জনে। ২০১৭ সালে মারা গেছে ১৩ জন। ২০১৫ সালের তুলনায় ৪৪ শতাংশ রোগী বেশি মারা গেছে। ম্যালেরিয়া মশাবাহিত একটি সংক্রামক রোগ। বিশ্বের অনেক দেশেই এখনো এটি ঘাতক রোগ হিসেবে পরিচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, প্রতি বছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে প্রায় ৫০০ মিলিয়ন এবং মারা যাচ্ছে প্রায় ১০ লাখ মানুষ। এর অধিকাংশই শিশু। ম্যালেরিয়ার জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল হচ্ছে আফ্রিকার সাহারা অঞ্চলের দেশগুলো। এ ছাড়া এশিয়া, ল্যাটিন আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এমন কি ইউরোপের কয়েকটি দেশেও ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। চিকিৎসকরা বলেন, পার্বত্য এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। দুর্গম এলাকায় ম্যালেরিয়ার প্রবণতা বেশি। তাই সেসব এলাকায় ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে মশারি বিতরণ ও সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে। চিকিৎসকরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে এখানে ভাষাগত কারণ, জুম চাষ, কুসংস্কার, দেরিতে চিকিৎসা আসাকে দেখছেন। সীমান্তবর্তী দেশগুলোর সঙ্গে সফল সমন্বিত কার্যক্রম চালানো না হলে বাংলাদেশে ম্যালেরিয়া নির্মূল করা সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, দেশে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। নিয়ন্ত্রণ নয়, চিরতরে ম্যালেরিয়া নির্মূল কর্মসূচিতে নেমেছে বাংলাদেশ। আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ম্যালেরিয়া নির্মূলকরণে ম্যালেরিয়াজনিত স্থানীয় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার কর্মপরিকল্পনা চলছে। এক্ষেত্রে পার্শ্ববর্তী দেশসমূহেও ম্যালেরিয়া নির্মূলে সফলতা আসতে হবে। ম্যালেরিয়ার জাতীয় পর্যায়ের কর্মসূচির ডেপুটি ম্যানেজার ডা. এমএম আক্তারুজ্জান বলেন, সরকারকে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশকে ম্যালেরিয়া মুক্ত করতে হবে। কিন্তু আমাদের নতুন চ্যালেঞ্জ সামনে চলে এসেছে।
পাশের দেশ ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়ায় ওষুধ প্রতিরোধী প্লাজমোডিয়াম ফেলসিপ্যারাম ছড়িয়ে পড়েছে। কক্সবাজারে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে এ ধরনের ওষুধ প্রতিরোধী ম্যালেরিয়ার জীবাণু বহন করছে এমন মানুষ থাকতে পারে। এর নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে এটা দেশের জন্য ভয়াবহ (চ্যালেঞ্জ) হতে পারে। এ পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও সরকারি-বেসরকারি নানা উদ্যোগ গতকাল বিশ্ব ম্যালেরিয়া দিবস পালন করা হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর