× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ১২ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৬ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ চাইবে বাংলাদেশ

দেশ বিদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার
২৬ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার

রাখাইন পরিস্থিতির উন্নয়ন ও রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসনে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি হস্তক্ষেপ চাইবে বাংলাদেশ। রাখাইন ও রোহিঙ্গা পরিস্থিতি সরজমিন  দেখতে আগামী শনিবার নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা কক্সবাজারে যাচ্ছেন। সেখানে তারা দু’দিন থাকবেন। ঘুরে দেখবেন রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও নো-ম্যান্সল্যান্ডে থাকা রাখাইন থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের খুপরি ঘরগুলো। তারা  কোনাবাড়ী এলাকা ঘুরে দেখবেন। সেখানে দেশি- বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা।

নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের আসন্ন সফর নিয়ে গতকাল বিকালে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দীর্ঘ প্রস্তুতি সভা সম্পন্ন হয়েছে। সেখানে সফরের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। ওই বৈঠকে অংশ নেয়া এক কর্মকর্তা সন্ধ্যায় মানবজমিনকে জানান, নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী ও অস্থায়ী সব সদস্য রাষ্ট্রের প্রতিনিধি একসঙ্গে কোনো একটি দেশে কোনো বিশেষ ইস্যুতে সফরের বাড়তি তাৎপর্য রয়েছে।
এটাকে কূটনৈতিক সাফল্য হিসেবেও দেখছেন তারা। ওই কর্মকর্তার মতে, নিরাপত্তা পরিষদ রোহিঙ্গা নির্যাতনের আদ্যোপান্ত জানে। তারা শুরু থেকেই সোচ্চার রয়েছে। চীন ও রাশিয়াও বাস্তব পরিস্থিতি বুঝে। কিন্তু হয়তো তারা নানা কারণে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে সায় দেয়নি। বাংলাদেশ আশা করছে রোহিঙ্গা ক্যাম্প ঘুরে যাওয়ার পর এখানকার করুণ চিত্র দেখে যাওয়ার পর রাশিয়া এবং চীনও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দুনিয়ার অন্য বন্ধু রাষ্ট্রের সঙ্গে সায় দেবে।

ঢাকার কর্মকর্তারা বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের কাছে বাংলাদেশের কয়েকটি চাওয়া থাকবে। তা হলো যে সময় পেরিয়ে গেছে সেটি নিশ্চিত ভাবেই আর ফেরত আসবে না। রোহিঙ্গাদের ওপর যা হয়েছে সেটি তো হয়েই গেছে। কিন্তু যারা বেঁচে আছে তাদের টেকসই জীবনমান উন্নয়ন এবং মর্যাদার সঙ্গে বেঁচে থাকার অধিকার নিশ্চিত করার এখনই সময়। বহু বছর ধরে জাতিগত ভাবে নিধনযজ্ঞের শিকার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নির্মূলের হাত থেকে বাঁচাতে জাতিসংঘকে যা করার এখনই করতে হবে। তাদের  টেকসই প্রত্যাবাসনে কার্যকর পদক্ষেপ এখনই নিতে হবে।

কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা বাংলাদেশ সফরের পরপরই মিয়ানমার যাবেন। বাংলাদেশ সফরকালে তাদের কাছে বর্মী নৃশংসতার করুণ চিত্র তুলে ধরবে ঢাকা। তাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের বৈঠকে এটি তুলে ধরা হবে। একই সঙ্গে মিয়ানমারে মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রেক্ষাপটে কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনা বাস্তবায়নে নিরাপত্তা পরিষদের হস্তক্ষেপ কামনা করা হবে। সেই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের স্বভূমে টেকসই প্রত্যাবাসনসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনকারীদের জবাবদিহিতা ও স্বাধীন অনুসন্ধানের ওপরও গুরুত্বারোপ করা হবে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনকালে তাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ সংখ্যক নির্যাতিত নারী-পুরুষ ও শিশুর সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময়ের আয়োজন থাকছে। সেখানে তারা ভিকটিমদের মুখ থেকে সরাসরি বর্মী বর্বরতার  লোমহর্ষক ঘটনাগুলো শুনতে পারেন। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন কক্সবাজারের উখিয়াস্থ রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন ছাড়াও নো-ম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের বাসিন্দাদের অবস্থাও সরজমিন  দেখানো হবে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদের। পরিষদের ৫ স্থায়ী সদস্য- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, রাশিয়া, চীন এবং অস্থায়ী ১০ সদস্যের দূতরা আগামী ২৮শে এপ্রিল বিশেষ বিমানে চড়ে বিকালে কক্সবাজারে পৌঁছাবেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম এমপি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব রিয়ার এডমিরাল (অব.) খুরশিদ আলম কক্সবাজারে তাদের স্বাগত জানাবেন।

 সেগুনবাগিচার কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, প্রতিনিধিদলের ১৫ সদস্য রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত বা স্থায়ী প্রতিনিধি ছাড়াও দেশগুলোর এ অঞ্চলে দায়িত্বপ্রাপ্ত কূটনীতিকদের অনেকে ওই সময়ে বাংলাদেশ সফর করবেন। ২৯শে এপ্রিল তারা রোহিঙ্গা ক্যাম্প ও নো-ম্যান্সল্যান্ডের কাছাকাছি এলাকা সরজমিন ঘুরে  দেখবেন। ঢাকায় ফিরে পরদিন সকালে প্রধানমন্ত্রী  শেখ হাসিনাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তাদের সাক্ষাৎ-বৈঠক ও মতবিনিময় হবে। ওইদিন সরকার প্রধান তার পূর্বনির্ধারিত অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে দেশে ফিরবেন। আর তার সঙ্গে বৈঠকের জন্যই নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যদের প্রস্তাবিত ঢাকা সফর দু’দিন  পেছানো হয়েছে। পূবের্র প্রস্তাবনা অনুযায়ী ২৭-২৮শে এপ্রিল সফরটি হওয়ার কথা ছিল।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিউ ইয়র্কের কূটনৈতিক সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, ঢাকায় আসার আগে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা ইরাক সফর করবেন। ২৬শে এপ্রিল থেকে তাদের যাত্রা শুরু হবে। যা শেষ হবে ১লা-২রা মে মিয়ানমার সফরের মধ্যদিয়ে। নিরাপত্তা পরিষদের বর্তমান সভাপতি (এপ্রিলের জন্য) জাতিসংঘে নিযুক্ত পেরুর স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত গুস্তাভো মেজা-সুআদ্রা চলতি মাসের শুরুতে রাখাইন ও কক্সবাজার সফরের সিদ্ধান্তের কথা জানান। এই সময়ে ইরাক সফরের কথাও জানান। সভাপতি সুআদ্রা সেই সময় সাংবাদিকদের বলেন, সংখ্যালঘু  রোহিঙ্গা মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিষয়টি তাদের সফরের মূল ফোকাস। নিরাপত্তা পরিষদ প্রতিনিধিদের মিয়ানমার সফরে অং সান সুচি সরকার সবুজ সংকেত দিয়েছে জানিয়ে সুআদ্রা সে সময় বলেন- পরিষদ সদস্যরা রাখাইন রাজ্য সফরে আগ্রহী। কিন্তু মিয়ানমার সেই সুযোগ দেবে কি-না? তাদেরকে সেই অনুমতি দেয়া হবে কিনা- তা এখনো নিশ্চিত হয়নি। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো  মেজা সুয়াদ্রা গণমাধ্যমকে এ-ও বলেন, নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিরা আশা করছেন তারা মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইন রাজ্য সফর করতে পারবেন। মিয়ানমার সরকার তাদের অনুমতি  দেবে। ওই রাজ্যে বিদ্রোহীদের দমনের নামে বর্মী  সেনারা বর্বর কায়দায় যে অভিযান চালিয়েছে তা  থেকে প্রাণে বাঁচতে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে এখনো কিছু রোহিঙ্গা রয়েছেন। সেই সময়ে নিরাপত্তা পরিষদ সভাপতি বলেন, রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি  দেখার চেয়ে তাদের সফরে ভালো কিছু আর হতে পারে না। উল্লেখ্য, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের এই সফরকে আয়োজন করছে বৃটেন, কুয়েত ও  পেরু।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর