× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

নি র্বা চ নী হা ল চা ল (ভোলা-২) /অস্বস্তিতে আওয়ামী লীগ বিএনপিতে স্বস্তি

শেষের পাতা

মনিরুল ইসলাম, ভোলা থেকে
২৬ এপ্রিল ২০১৮, বৃহস্পতিবার

দ্বীপ জেলা ভোলা। বাংলাদেশের ভেতর যেন আরেক বাংলাদেশ। যার অপরূপ সৌন্দর্য মন কাড়ে সবার। এ দ্বীপেরই বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখান উপজেলা নিয়ে গঠিত ভোলা-২ আসন। এ আসনের বর্তমান এমপি আলী আজম মুকুল। ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সন্তান। বর্ষীয়ান নেতা, বর্ণাঢ্য রাজনীতির ধারক-বাহক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের ভাইপো হলেন আলী আজম মুকুল। চাচার হাত ধরেই রাজনীতিতে প্রবেশ।
চাচার হাত ধরে এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন তিনি। আগামী নির্বাচনকে ঘিরেও প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। শুধু তাই নয়, সম্ভাব্য প্রার্থীরা এলাকামুখী হচ্ছেন। পোস্টার, ফেস্টুন ও বিলবোর্ডে জানান দিচ্ছেন প্রার্থিতার কথা। এ আসনের আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী সাবেক মন্ত্রী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত নাজিউর রহমান মঞ্জুর মেজো ছেলে ড. আশিকুর রহমান শান্ত। তবে শান্ত আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেতে চেষ্টা চালাচ্ছেন। ড. শান্ত ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর থেকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। তার বড় ভাই আন্দালিব রহমান পার্থ পিতার দলকে আঁকড়ে থাকলেও শান্ত আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত। এ অবস্থায় মুকুল না শান্ত- কে পাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন? এ নিয়ে অস্বস্তিতে রয়েছে আওয়ামী লীগ।

এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগ দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম আজাদের নামও শোনা যাচ্ছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিমের মনোনয়ন অনেকটা নিশ্চিত। তবে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে জাহাঙ্গীর এম আলমের নামও শোনা যাচ্ছে। এ আসনে জাতীয় পার্টি থেকে সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, কেফায়েত উল্যাহ নজীব ও মিজানুর রহমান সম্ভাব্য প্রার্থী।

এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে প্রথম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন ভাষাসৈনিক রেজা-এ-করিম চৌধুরী (চুন্নু মিয়া)। পরে ১৯৮৬ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ। ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির নেতা সিদ্দিকুর রহমান সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৯১ ও ১৯৯৬ সালে পরপর দুইবার তোফায়েল আহমেদ আওয়ামী লীগ থেকে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন হাফিজ ইব্রাহিম। ১/১১ সরকারের বিভিন্ন মামলার কারণে হাফিজ ইব্রাহিম ২০০৮ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। পরে ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে লড়াই করেন বিজেপির প্রার্থী ডক্টর আশিকুর রহমান শান্ত। ওই নির্বাচনে ২৫ হাজার ভোটের ব্যবধানে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তোফায়েল আহমেদ। সর্বশেষ ২০১৪ সালে তোফায়েল আহমেদ ভোলা-১ (সদর) আসনে নির্বাচন করায় ভোলা-২ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন আলী আজম মুকুল ।

আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আসনে আওয়ামী লীগে মনোনয়ন নিয়ে উত্তেজনা বিরাজ করছে। একদিকে প্রচার-প্রচারণায় মাঠে রয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল। অন্যদিকে এ আসন থেকে মনোনয়ন পেতে এলাকায় যোগাযোগ রক্ষা করছেন ড. আশিকুর রহমান শান্ত।

এ ব্যাপারে আলী আজম মুকুল মানবজমিনকে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকার ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে দৌলতখান বোরহানউদ্দিনের জনগণের জন্য বিরতিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছি। তাই তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই আমাকে নির্বাচিত করবেন।

ড. আশিকুর রহমান শান্ত বলেন, আওয়ামী লীগ থেকে যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে ভোলা-২ আসন থেকে আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করবো এবং দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিন থেকে সকল ধরনের দুর্নীতি ও সন্ত্রাস নির্মূল করবো।

এ ব্যাপারে দৌলতখান উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ইকবাল বলেন, ‘নির্বাচনী মাঠে হাফিজ ইব্রাহিমই দলের একক প্রার্থী। অন্য কাউকে মাঠে দেখা যাচ্ছে না আর কেউ আসেও না। হাফিজ ইব্রাহিমই একমাত্র নেতার যিনি দুঃসময়ে দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনের নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন।

সাবেক সংসদ সদস্য হাফিজ ইব্রাহিম বলেন, ‘আমি ভোলা-২ আসনে সাধারণ মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করেছি। দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলাম। তাই দলীয় নেতাকর্মীদের আমার ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। এখানে অন্য কোনো প্রার্থী নেই। আগামীতে কেউ আসতে চাইলে এখানকার সাধারণ মানুষ ও নেতাকর্মীরা মেনে নিবে না। বিএনপি আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে এই এলাকার মানুষ আমাকেই বিজয়ী করবেন। ইন্‌শাআল্লাহ।

অন্যদিকে এই আসনের আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আবুল কালাম আজাদ। দলের মনোনয়ন পেতে প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন নির্বাচনী এলাকায়। তিনি বলেন, আমি ছাত্রজীবন থেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে আসছি। দলের জন্য কাজ করেছি। বিগত কয়েক বছর ধরে কেন্দ্রের পাশাপাশি এলাকায় প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবো। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে মনোনয়ন দিলে এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করবো।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশায় রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন, সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান, কেফায়েত উল্যাহ নজীব ও ঢাকা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক পার্টির উত্তরের আহ্বায়ক মিজানুর রহমান। মাঝে মধ্যে সাবেক সংসদ সদস্য সিদ্দিকুর রহমান এলাকায় আসলেও এখন অসুস্থতার কারনে তাকে ততটা এলাকায় আসতে দেখা যায় না। তবে তার পক্ষে ছেলে সোহেল আহমেদ নিয়মিত নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে যাচ্ছেন।

জাপার মনোনয়ন প্রত্যাশী মিজানুর রহমান বলেন, আমি দলের হয়ে মনোনয়ন প্রত্যাশা করছি। সেই লক্ষ্যে এলাকায় কাজ করছি। দল আমাকে মনোনয়ন দিলে নির্বাচন করবো।

এ আসনে বিজেপির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী মরহুম নাজিউর রহমান মঞ্জুর ভোট ব্যাংক এবং আন্দালিভ রহমানের জনপ্রিয়তায় শক্ত অবস্থানে রয়েছে বিজেপি ২০ দলীয় জোটের অন্যতম একটি শরিক দল। আগামী নির্বাচনে জোট যাকে প্রার্থী দিবে তার পক্ষেই সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বিজেপির নেতাকর্মীরা। ভোলা জেলা বিজেপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আমিরুল ইসলাম রতন ও সম্পাদক মোতাছিম বিল্লাহ বলেন, দুর্দিনেও ভোলার প্রতিটি আসনে এককভাবে নির্বাচন করার অভিজ্ঞতা বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির রয়েছে। বর্তমানে ভোলার ৪টি আসনেই শক্তিশালী সাংগঠনিক ভিত রয়েছে বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির। ভোলা-২ আসন থেকে ২০ দলীয় জোট যাকে প্রার্থী দিবে তারপক্ষেই সর্বশক্তি দিয়ে কাজ করে যাবে বিজেপি। জামায়াতের শক্তিশালী সাংগঠনিক কাঠামো রয়েছে। ১৯৯৬ সালে এ আসনে এককভাবে প্রার্থী ছিলেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা কামাল উদ্দিন জাফরী। বর্তমানে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর কার্যক্রম প্রকাশ্যে না চললেও গোপনে নেতাকর্মীরা সক্রিয়। মাঝেমধ্যেই পুলিশ জামায়াতের বিভিন্ন সাংগঠনিক বৈঠক থেকে নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করলেও সাংগঠনিক কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনের জামায়াত নেতারা।

জামায়াতের ভোলা জেলার ভারপ্রাপ্ত আমির বলেন, ভোলা-২ আসনে জামায়াত নিয়মিত সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে একক প্রার্থী দিলে তার পক্ষে কাজ করার সকল প্রস্তুতি রয়েছে জামায়াতের।

আগামীকাল: সিরাজগঞ্জ-৪
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর