ইরানের সঙ্গে অর্থনৈতিক লেনদেন করে এমন ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইতিমধ্যেই দেশটি এ সংক্রান্ত প্রস্তুতি নিয়েছে। এমনটিই জানিয়েছেন মার্কিন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা। এ খবর দিয়েছে দ্য গার্ডিয়ান।
খবরে বলা হয়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বৈদেশিক নীতি বিষয়ক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা বলেছেন, ইরান চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য মিত্রদের ওপর অব্যাহতভাবে চাপ প্রয়োগ করবে যুক্তরাষ্ট্র। এমনকি ইরানের সঙ্গে ব্যবসায়িক সম্পর্ক আছে এমন কোম্পানিগুলোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
সম্প্রতি ইরানের সঙ্গে সম্পাদিত পারমাণবিক চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র বেরিয়ে গেলেও চুক্তি বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে রাশিয়া ও চীনসহ ইউরোপীয় দেশগুলো।
ওই চুক্তি অনুযায়ী, পারমাণবিক কর্মসূচি সীমিত করার বিনিময়ে ইরানকে অর্থনৈতিক অবরোধ থেকে মুক্তি দেয়া হয়। ফলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে ইরানের বাণিজ্য করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। এ সময় ইউরোপের অনেকগুলো কোম্পানি ইরানের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্যিক চুক্তি স্বাক্ষর করে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র ইরানের সঙ্গে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করে দেশটির ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার ফলে ইরান ও ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে স্বাক্ষরিত এসব চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কেননা পারমাণবিক চুক্তি বাতিলের কারণে ইরান আর মার্কিন কোম্পানিগুলোর সঙ্গে ব্যবসা করতে পারবে না। পাশাপাশি ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আছে এমন সব বিদেশি প্রতিষ্ঠান মার্কিন ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন করতে পারবে না। সে দিক দিয়ে ইতিমধ্যেই এক ধরনের নিষেধাজ্ঞার অধীনে রয়েছে ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলো ।
এরই মধ্যে ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টন বলেছেন, ভবিষ্যতে ইউরোপীয় দেশগুলো নিজেদের স্বার্থেই যুক্তরাষ্ট্রকে অনুসরণ করবে। মূলত এর মাধ্যমে তিনি চাপ প্রয়োগ করে ইউরোপীয় দেশগুলোকে পারমাণবিক চুক্তি বাতিল করার প্রতি ইঙ্গিত দিয়েছেন। ইউরোপীয় কোম্পানিগুলোর উপর আসলেই কোনো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে কিনা সে বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে বোল্টন বলেন, এমনটি করার সম্ভাবনা আছে। তবে তা নির্ভর করছে সংশ্লিষ্ট দেশের আচরণের ওপর। এ বিষয়ে রোববার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, পারমাণবিক চুক্তির সুযোগ নিয়ে ইরান অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হয়েছে। আর এই অর্থ তারা মধ্যপ্রাচ্যে ‘বিদ্বেষী কার্যক্রম’ পরিচালনা করতে ব্যবহার করছে।
পারমাণবিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কড়া সমালোচনা করেছে চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ইউরোপীয় দেশগুলো। তারা চুক্তি বহাল রাখার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। চুক্তি থেকে ট্রাম্পের বেরিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে ফ্রান্স। দেশটির শীর্ষস্থানীয় তেল ও গ্যাস কোম্পানি ‘টোটাল’ ইরানের সঙ্গে ৫ বিলিয়ন ডলারের চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। ফ্রান্স ভিত্তিক আরেক উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এয়ারবাসও ইরানের সঙ্গে বিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেছে। চুক্তি অনুযায়ী ইতিমধ্যেই ইরানে জেট বিমান সরবরাহ শুরু করেছে কোম্পানিটি। অন্যদিকে, জার্মান গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ভক্সওয়াগন ইরানে গাড়ি রপ্তানি শুরু করেছে। এ সপ্তাহে জার্মানিতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করছে এমন জার্মান কোম্পানিগুলোর উদ্দেশ্যে এক টুইটার বার্তায় বলেন, তাদের উচিত অবিলম্বে ইরানের সঙ্গে লেনদেন কমিয়ে আনা।
এদিকে, ইউরোপের নেতারা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা রুখে দেয়ার জন্য পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানিয়েছেন। ইউরোপের প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে পারে এমন আশঙ্কার প্রেক্ষিতে গত সপ্তাহে ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ইউরোপের দেশগুলোর সমন্বিত পদক্ষেপ নেয়া উচিত।