× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আনোয়ার ইব্রাহিম মুক্ত / মালয়েশিয়ায় নতুন যুগের সূচনা হয়েছে

প্রথম পাতা

মানবজমিন ডেস্ক
১৭ মে ২০১৮, বৃহস্পতিবার

জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন মালয়েশিয়ার সংস্কারপন্থি সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম। রাজকীয়
সাধারণ ক্ষমা পাওয়ার পর বুধবার তাকে মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পেয়েই তিনি ছুটে যান ইস্তানা নেগারা রাজপ্রাসাদে। সেখানে সাক্ষাৎ করেন রাজা ইয়াং ডি-পারতুয়ান আগোং সুলতান মুহাম্মদ (পঞ্চম)-এর সঙ্গে। পরে এক সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন তিনি। দুঃসময়ে সমর্থন দেয়ার জন্য দেশবাসীকে ধন্যবাদ জানান। এ সময় তিনি দ্রুতই রাজনীতিতে সক্রিয় না হওয়ার ঘোষণা দেন। জানান, শিগগিরই মন্ত্রিসভায় যোগ দেয়ার কোনো ইচ্ছা তার নেই।
এছাড়া প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের সঙ্গে তার সকল বিরোধের অবসান হয়েছে বলেও জানান তিনি। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও আল জাজিরা।
খবরে বলা হয়, ছেরাস রিহ্যাবিলিটেশন হাসপাতাল থেকে স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে এগারটায় মুক্তি পান আনোয়ার। কারাবন্দি অবস্থায় সেখানে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। এরপরই ছুটে যান রাজপ্রাসাদের উদ্দেশে। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী ও মালয়েশিয়ার বর্তমান উপ-প্রধানমন্ত্রী আজিজা। স্থানীয় সময় দুপুরে তিনি রাজপ্রাসাদে উপস্থিত হন। সেখানে তাকে প্রথম যিনি অভিনন্দন জানান তিনি হলেন প্রধানমন্ত্রী ড. মাহাথির মোহাম্মদ। রাজপ্রাসাদের ১ নম্বর গেট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করেন আনোয়ার। রাজার সঙ্গে দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা করেন। সাধারণ ক্ষমা দেয়ার জন্য তাকে ধন্যবাদও জানান।
রাজপ্রাসাদ থেকে ফিরে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ইতিমধ্যেই মাহাথিরের সঙ্গে সব বিরোধ মিটিয়ে ফেলেছি। আমি তাকে ক্ষমা করে দিয়েছি। সে তার যোগ্যতা প্রমাণ করেছে। এখন তার সঙ্গে শত্রুতা করার কি দরকার? এ সময় সমর্থকরা আনোয়ারের বক্তব্যকে সাধুবাদ জানান। তিনি বলেন, মালেশিয়ায় নতুন যুগের সূচনা হয়েছে। এজন্য ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মালয়েশিয়ার সকল জনগণকে ধন্যবাদ জানান। এদিকে, মঙ্গলবার মাহাথির আবারো বলেছেন, তিনি এক বা দুই বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করবেন। পরে আনোয়ারের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করবেন।
আনোয়ার ইব্রাহীমের মুক্তির সময় হাসপাতাল প্রাঙ্গণে বিপুলসংখ্যক সমর্থক জড়ো হন। নেতার প্রত্যাবর্তনে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা। এক সমর্থক বলেন, তার মুক্তি দেখে আমি আবেগাপ্লুত। কিন্তু আমাদের আন্দোলন এখনো শেষ হয়নি। আমরা তাকে দ্রুতই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাই। এ সময় সমর্থকদের অনেকেই আনোয়ারের ছবি সংবলিত টি-শার্ট পরিধান করেন। আনোয়ারের ঘোষণা অনুযায়ী তারা মালয়েশিয়ার নতুন যুগের সূচনা দেখছেন। সমর্থকরা আশা প্রকাশ করেন আনোয়ার ও মাহাথির মালয়েশিয়াকে বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা করবেন।
মাহাথির নেতৃত্বাধীন জোট মালয়েশিয়ায় জাতীয় নির্বাচনে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জনের পর আনোয়ার ইব্রাহীমের মুক্তির পথ খুলে যায়। তার মুক্তির জন্য রাজার কাছে সুপারিশ করেন বিশ্বের প্রবীণতম প্রধানমন্ত্রী মাহাথির। এরই প্রেক্ষিতে বুধবার মুক্তি পেলেন আনোয়ার। ২০১৫ সালে ৭০ বছর বয়সী আনোয়ার ইব্রাহিমকে সমকামিতার অভিযোগে জেল দেয়া হয়। তবে তার দাবি, তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারকে ধ্বংস করার জন্য তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে। তার সাজার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ৮ই জুন। কিন্তু তার আগেই রাজকীয় মুক্তি লাভ করলেন তিনি।
আনোয়ার ইব্রাহীমের রাজনৈতিক ক্যারিয়ার যেন উত্থান-পতনে ভরা জীবন্ত চলচ্চিত্র। বুধবারের মুক্তির মাধ্যমে এই চলচ্চিত্রে নতুন পর্দার উন্মোচন ঘটলো। পূর্বে মাহাথির ও আনোয়ার ছিলেন ঘনিষ্ঠ মিত্র। নব্বইয়ের দশকে মাহাথিরের মন্ত্রিসভায় উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আনোয়ার। কিন্তু মাহাথিরের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে তার বিরুদ্ধে সমকামিতার অভিযোগ তোলা হয়। পরে ১৯৯৮ সালে তাকে ছয় বছরের সাজা দিয়ে জেলে পাঠায় আদালত। ২০০৪ সালে মুক্তি পান আনোয়ার। কিন্তু ২০১৫ সালে মাহাথিরের উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন আনোয়ার। এবারো তাকে জেলে পাঠানোর জন্য সমকামিতার অভিযোগ তোলা হয়। অন্যদিকে, উত্তরসূরি নাজিব রাজাকের অবাধ দুর্নীতিতে বিরক্ত হয়ে পড়েন মাহাথির। সংশোধনে ব্যর্থ হয়ে নিজের শিষ্যের বিরুদ্ধেই নির্বাচনে লড়াই করার ঘোষণা দেন তিনি। নিজেই গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল। নাজিব রাজাককে পরাজিত করে নিজের হাতে গড়া মালয়েশিয়াকে রক্ষা করার জন্য জোট করেন পূর্বের মিত্র আনোয়ারের সঙ্গে। রাজনৈতিক প্রজ্ঞা দিয়ে পরাজিত করেন ক্ষমতাসীন নাজিব রাজাকের দলকে। এ সময় আনোয়ারের প্রতি সহানুভূতিশীল হন মাহাথির। সম্প্রতি তিনি আনোয়ার ও তার পরিবারের দুর্দশার বিষয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আনোয়ারের কষ্ট আমি বুঝি। আমার শাসনামলেই তাকে জেলে পাঠানো হয়েছিলো। তাই তার পক্ষে আমাকে গ্রহণ করে করমর্দন করা সহজ কাজ না। শুধু আনোয়ারই না, তার পরিবারও দুর্ভোগের শিকার হয়েছে। ২০ বছর ধরে তারা ভুগছে।
বুধবারের মুক্তি মাধ্যমে আনোয়ার ও তার পরিবারের দুর্দশার অবসান ঘটেছে। মুক্তির পর পূর্বের বন্ধু, পরে শত্রু, পরে আবারো বন্ধুতে পরিণত হওয়া মাহাথিরের সঙ্গ করমর্দন করেন আনোয়ার। মালেশিয়ার রাজনীতিতে রাজকীয় প্রত্যাবর্তন করেন তিনি। এখনই সরাসরি সরকার বা দলের কোনো দায়িত্ব গ্রহণ না করলেও মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন সরকার ও ক্ষমতাসীন জোটকে দেশ পরিচালনায় সহায়তা করবেন।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর