ফরাসি প্রেসিডেন্ট বললেন ‘ত্রুটিপূর্ণ এক সিদ্ধান্তের’ কথা। জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাণিজ্যে বিঘœ সৃষ্টি হওয়া নিয়ে হতাশা প্রকাশ করলেন। আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) প্রধান বললেন, সাম্প্রতিক পররাষ্ট্র নীতি ‘সামনে যাওয়ার সঠিক পন্থা নয়।’ তারা কেউই কিন্তু রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট
ভ্লাদিমির পুতিনের সমালোচনা করছিলেন না, যাকে আমেরিকা বিশ্বমঞ্চ থেকে একঘরে করে ফেলার চেষ্টা করে আসছে। বরং, পুতিন তাদের পাশেই বসে ছিলেন। মৃদু মাথা ঝাঁকিয়ে সমর্থন করছিলেন তাদের বক্তব্য। আমেরিকার প্রথাগত মিত্র দুই দেশের নেতারা আসলে সমালোচনা করছিলেন খোদ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের। এ খবর দিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
খবরে বলা হয়, সম্প্রতি পুতিনের নিজের শহর সেইন্ট পিটার্সবার্গে আয়োজিত এক ব্যবসায়িক ফোরামে অংশ নিতে একত্রিত হয়েছিলেন এই রাষ্ট্রপ্রধান ও জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।
ব্যবসা নির্বাহীদের উপস্থিতিতে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইম্যানুয়েল ম্যাক্রন বললেন, তিনি আন্তর্জাতিক জলবায়ু চুক্তিতে রয়ে যেতে, ইরান পারমাণবিক চুক্তি মেনে চলতে কিংবা জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তর থেকে বিরত থাকতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রত্যেকবারই তাকে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়েছে। জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তকে ত্রুটিপূর্ণ বলে আখ্যা দেন তিনি।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে জানালেন, প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলোর মধ্যকার একটি বাণিজ্য চুক্তি থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নিলেও তিনি ওই চুক্তি এগিয়ে নিচ্ছেন। তবে হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘এই ধরণের ন্যায়সঙ্গত আচরণ আমাদের প্রয়োজন। কিন্তু দূর্ভাগ্যবশত যুক্তরাষ্ট্র চলে গেল।’
আন্তর্জাতিক মূদ্রা তহবিলের পরিচালক ক্রিস্টাইন লাগার্দে বলেন, চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপের যেই হুমকি ট্রাম্প প্রশাসন দিয়েছে, তা বিশ্ব অর্থনীতিকে কাঁপিয়ে দিচ্ছে। তার মতে, কেবল বাণিজ্য ঘাটতি থাকলেই শুল্ক আরোপ করতে হবে তা নয়। তিনি বলেন, ‘এটি একটি আজব অভিযোগ।’ বাণিজ্য নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পন্থা এটি নয় বলেও মত দিলেন তিনি।
যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করার জন্য বেশ অদ্ভুত ফোরামই বলতে হবে একে। সুইজারল্যান্ডের দাভোসের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের আদলে সেইন্ট পিটার্সবার্গ ইন্টার্ন্যাশনাল ইকোনমিক ফোরাম হলো রাশিয়ায় ব্যবসা আছে এমন বিদেশী বিনিয়োগকারী ও নির্বাহীদের একটি বার্ষিক সম্মেলন। বারাক ওবামা যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখন তার প্রশাসন এই সম্মেলনে যোগ দিতে অন্যদেরকে নিরুৎসাহিত করেছে। কিন্তু এবার রাশিয়ায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত এতে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু শুনেছেন নিজের বসের বিরুদ্ধে কটুকথা।
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এর আয়োজক। অপরদিকে ফ্রান্স ও জাপানের নেতাদ্বয় ছিলেন অতিথি, যেই দুই দেশ আবার রাশিয়ার ওপর অবরোধও আরোপ করে রেখেছে। অপরদিকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বললেন, সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সংলাপ ও যোগাযোগই হলো একমাত্র পন্থা।
নিজের বক্তব্যে পুতিন বলেন, আন্তর্জাতিক রীতিনীতি একদিকে প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে, অপরদিকে নিজেই ওই রীতিনীতি নিজের মতো করে পরিবর্তন করছে। তিনি কৌতুক করে বলেন, ‘দুনিয়ার বর্তমান অবস্থান হলো যে, সবাই জুডো খেলার নিয়মনীতি নিয়ে ফুটবল খেলছে! ফলে আমরা না খেলতে পারছি জুডো, না ফুটবল। বেশ বিশৃঙ্খল অবস্থা।’
পুরো সম্মেলনে কূটনৈতিক রাখঢাক বজায় রেখেছেন বরং চীনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ওয়াং কিশান। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রশংসা করে বলেন, দেশটির কাছ থেকে শেখার আছে চীনের। তার ভাষ্য, ‘আমেরিকা বিশ্বের একমাত্র বৈশ্বিক সুপারপাওয়ার।’
খবরে বলা হয়, ফ্রান্স ও জাপানের ক্ষোভ থেকে বোঝা যায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দেশটির ঐতিহ্যগত মিত্ররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করতে রাশিয়ার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টাই যেন সত্য হওয়ার দিকে মোড় নিচ্ছে।