× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এফবিআই-র এক্স বস কোমির নতুন বই (পর্ব-৩) /ট্রাম্পের মেজাজ শান্ত রাখার কৌশল নিলাম

বই থেকে নেয়া

মানবজমিন ডেস্ক
২৭ মে ২০১৮, রবিবার

উইলিয়াম কোমি, যিনি  এফবিআইয়ের পরিচালক হওয়ার আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটর্নি জেনারেল ছিলেন, তিনি তাঁর বহুল আলোচিত নতুন বই  (‘‘এ হায়ার লইয়ালট,ি ট্রুথ, লাইজ এন্ড লডিারশপি’’)  এ আনুপঙ্খ বর্নণা করেছেন, সেই দিনের কথা, যখন তিনি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিতে অপেক্ষমাণ ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে মস্কোর  বেশ্যা প্রসঙ্গে আলোচনা করতে গিয়েছিলেন।
আগেই বলা হয়েছে, এফবিআই সিএনএন-এর কাছ থেকে ফোন পেয়েছিল যে, তারা এটি প্রচার করতে যাচেছ। সুতরাং এফবিআইয়ের চিন্তা হলো সাংবাদিকদের কিভাবে সামাল  দেওয়া যায়। এধরণের পরিস্থিতি সামলাতে সংস্থাটি যে ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে তা এফবিআইয়ের   পরিভাষায়  হলো ‘‘ডিফেন্সিভ ব্রিফিং।’’

উইলিয়াম কোমির জবানিতে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ এরকম : ‘‘আমরা কিভাবে এবিষয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে বলতে গিয়ে তাকে এই বিষয় (সিএনএন-এর সম্ভাব্য সম্প্রচার) সম্পর্কে অন্ধকারে রাখতে পারি? কিন্তু এটা খুবই বিব্রতকর ছিল যে, কর্মকর্তাদের একটি গ্রুপ, যারা বারাক ওবামা নিযুক্ত গ্রুপ বলেই মার্কিন জন প্রশাসন থেকে বিদায় নিতে চলেছে, তাদের পক্ষে এরকম একটি বিষয় দলবেধে গিয়ে কিভাবে ট্রাম্পকে বলা সম্ভব?
আমি এফবিআই পরিচালকের দায়িত্বে ছিলাম, আমাদের কাছে তথ্য (মস্কোর বেশ্যাদের সঙ্গে ট্রাম্পের যোগাযোগ) ছিল, তাই বিষয়টি নিয়ে দেশের প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টকে অবহিত করার দায় আমার ওপরই বর্তায়। আমাকেই বিষয়টি অবহিত করতে হবে, এই বিষয়টি অত্যন্ত পরিষ্কার একটি বিষয়। একজন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মস্কোর বেশ্যা নিয়ে এফবিআই পরিচালকের নিজেরই কথা বলতে হবে,এই পরিকল্পনা ছিল যুক্তিসঙ্গত। তবে কোনো সন্দেহ নেই , বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি, এটা ভাবতেই আমার খুব খারাপ লাগছিল।
কিন্তু আমার জন্য অসুখকর অনুভূতিতে আরো সংক্রমিত হওয়ার বিষয় অপেক্ষা করছিল। আমি অনেক আগে জেনেছিলাম, মানুষ সাধারণত এটাই অনুমান করে যে, একই ধরণের পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা যেভাবে পদক্ষেপ নিত সেভাবে আপনিও ঠিক তাই চিন্তা করবেন এবং একই পদক্ষেপ নেবেন।
তারা তাদেও বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি আপনার ওপর চাপিয়ে দেবে, এমনকি আপনি হয়তো দেখছেন বিশ্বটা ঠিক সেভাবে চলছে না।’’
এই পর্যায়ে কোমি ব্যাখ্যা করেছেন যে, ট্রাম্পের কাছে বিষয়টি যখন তিনি তুলে ধরবেন, তখন ট্রাম্প তাকে সম্ভাব্য কি চোখে দেখতে পারেন। রাজনীতিবিদ ট্রাম্পকে একজন হার্ডবল ডিল মেকার হিসিবেও দেখেছেন। এরপর তিনি লিখেছেন,‘‘ ট্রাম্প  অনুমান করবেন যে, আমি তার ওপর জ্যাম সৃষ্টি করতেই মস্কোর পতিতাদের বিষয়টি টেনে এনেছি। আর আমি এ থেকে ফায়দা তুলতে চাই। তিন হয়তো ধরেই নিতে পারেন যে, আমি একজন ‘‘জে. এডগার হুভার’’-কেই (এফবিআইর প্রথম পরিচালক) টেনে তুলতে চাইছি, কারণ আমার জায়গায় থেকে হুভারও ঠিক এই কাজটাই করতেন।  আর আমি যেহেতু নিশ্চিত যে, একটা ভ্রু কুঁচকানোর বিষয় এখানে রয়েছে। আমি প্রস্তুতি নিলাম যে, যদি আদৌ বলার সুযোগ আসে তাহলে তাঁকে আশ্বস্ত করার মতো একটা কিছু আমাকে বলতে হবে, যাতে তার মেজাজ শান্ত থাকে।
আমি বিষয়টি নিয়ে আমার টিমের সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে স্থির করলাম যে, আমি তাকে আশ্বস্ত করতে পারি যে, আপনার ওপর এফবিআই কোনো ধরনের তদন্ত চালাচ্ছে না। আর সেটা আক্ষরিক অর্থেই সত্যি ছিল। তার বিষয়ে আমাদের কোনো কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স ফাইল খোলা ছিল না। মস্কোতে বেশ্যাদের সঙ্গে যদি তিনি দহরম-মহরম করেই থাকেন, তাহলেও আমাদের কিছু যায় আসে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না রাশানরা এবিষয়ে তার ওপর   জবরদস্তি কিছু না করে বসে।
এফবিআইয়ের আইন উপদেষ্টা জিম বেকার শক্তিশালী যুক্তি তুলে ধরলেন। তিনি বললেন, আপনার এই কথার যুক্তিগ্রাহ্যতা থাকলেও প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টের  অন্যান্য কিছু বিষয় রয়েছে যা অবশ্যই তদন্তযোগ্য, যার মধ্যে এটাও রয়েছে যে ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচারণায় রাশানদের সংশ্লিষ্টতা ছিল কিনা। সেক্ষেত্রে আরো  উদ্বেগের বিষয় হলো, এরকম কোনো তদন্ত শুরু করতে হলে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্টের অনুমোদন নেওয়ার একটি বিষয় এফবিআইয়ের জন্য আবশ্যিক হতেই পারে। এই কথায় যে যুক্তি আছে, সেটা আমি স্বীকার করলাম। কিন্তু আমি তখন নতুন প্রেসিডেন্টকে নিয়ে আরো অনেক বড় বিপদ দেখলাম। প্রেসিডেন্ট অধৈর্য্যশীল হিসেবেই পরিচিত। তিনি কিনা এফবিআইয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। আমি সংকল্পবদ্ধ হলাম যে, নয়া প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আমি সাফল্যের সঙ্গে কাজ কতে চাই, আর তাই যা কিছু উপযুক্ত পদক্ষেপ আমি কেবল সেসব নিতেই নিজকে সীমাবদ্ধ রাখব।  সুতরাং আমি জিম বেকারের সুচিন্তিত মতামত প্রত্যাখান করলাম। আর আমি এবিষয়ে মনস্থির এবং পেছনের পকেটে ‘‘আমরা আপনার বিষয়ে তদন্ত করব না’’, এই সিদ্ধান্ত লুকিয়ে রেখেই ট্রাম্প টাওয়ারের দিকে রওয়ানা হলাম।

(চলবে)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর