মারাকানায় ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির বিপক্ষে শিরোপার একবারে কাছে এসে হৃদয় ভাঙে আর্জেন্টিনার। আকাশী-নীল জার্সিধারীদের জন্য আরো নিদারুণ কষ্ট বয়ে আনে পরপর দুই বছর কোপা আমেরিকার ফাইনালে পরাজয়। তখন হাল ছেড়ে দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলকে বিদায় বলে দেন লিওনেল মেসি। পরে সমর্থকদের ডাকে সিদ্ধান্ত বদলে ফিরে এসে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন। বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরের মাঠে মেসির হ্যাটট্রিকেই রাশিয়া বিশ্বকাপের টিকিট কাটে আর্জেন্টিনা। মেসির অধরা বিশ্বকাপ জয়ের এটাই ‘শেষ সুযোগ’। আগামী ২৪ই জুন ৩১-এ পা রাখবেন তিনি। আর্জেন্টিনার জার্সিতে চারটি ফাইনাল খেলেও শিরোপার স্বাদ পাননি পাঁচবারের ব্যালন ডি’অর জয়ী (বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার)।
মেসির কথায়, আর্জেন্টিনায় রানার্সআপদের কোনো স্থান নেই। রাশিয়ায় আগামী ১৬ই জুন আইসল্যান্ড ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করবে দুইবারের চ্যাম্পিয়নরা। আরেকটি বিশ্বকাপ সামনে রেখে হতাশা ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন মেসি। পাঠকদের জন্য মেসির সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: মারাকানার হার এখনো কষ্ট দেয়?
মেসি: এই ক্ষত সবসময়ই থাকবে। সব আর্জেন্টাইনের মতো আমরাও (খেলোয়াড়রা) কেঁদেছি। স্বপ্ন পূরণের খুব কাছাকাছি গিয়েছিলাম। কিন্তু এটাই ফুটবল। সেরা দল সবসময় জিততে পারে না। আমাদের এটি মেনে নিয়ে সামনে তাকাতে হবে।
প্রশ্ন: আরেকটি বিশ্বকাপ চলে এসেছে। এবার শিরোপা জিততে প্রত্যাশার চাপ আরো বেশি...
মেসি: আমরা নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। ১৯৮৬ সালের পর আরেকটি বিশ্বকাপের প্রত্যাশা করা ভুল কিছু নয়। প্রতিটি আর্জেন্টাইনের মতো আমিও দেশের জন্য বিশ্বকাপ জয়ের চাপটা নিতে চাই। ২০১৪ বিশ্বকাপে আমরা প্রত্যেকেই নিজেদের উজাড় করে দিয়েছি। এখনো আমরা কিছু জিততে পারিনি।
২০১৮ বিশ্বকাপে কি পারবে আর্জেন্টিনা?
মেসি: আমার স্বপ্নটা এখনো একই রকম- ফাইনালে ওঠে শিরোপা উঁচিয়ে ধরবো। এতো দূর যাওয়া আসলেই কঠিন। গত আসরেই আমরা এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছি। এবার আমরা শিরোপাটা জিততে চাই। আমাদের প্রজন্মের বিশ্বকাপ জয়ের এটাই হয়তো শেষ সুযোগ।
প্রশ্ন: দেশের স্বপ্নপূরণে আপনার জন্য এটা অসহনীয় বোঝা?
মেসি: না, আসলে তা নয়। যদি আপনি আর্জেন্টাইন এবং ফুটবল সমর্থক হন সবসময়ই চাইবেন আর্জেন্টিনা যেন সর্বোচ্চ সাফল্য পায়। এতে কোনো ভুল নেই। আমিও সেভাবে ভাবি। আমরা সবাই জানি বিশ্বকাপ জেতা কতটা চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমরা সবাই এটি চাই। আর্জেন্টিনার এটা দরকার। আর্জেন্টিনার জন্য এটাই স্বাভাবিক ব্যাপার।
প্রশ্ন: প্রতিটি ফাইনালে হারের জন্য আপনার প্রজন্ম বিশেষ করে আপনি কঠোর সমালোচিত হয়েছেন। এটা কতটা কষ্টদায়ক?
মেসি: অবশ্যই এটা কষ্টদায়ক। কিন্তু আমাদের মতো তারাও অসহনীয় ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছে। সেটা আমরা বুঝি। আর্জেন্টিনা একটি ফুটবল পাগল দেশ। মিডিয়া যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায় কিছু ক্ষেত্রে এটা স্বাভাবিক। প্রাথমিকভাবে মনে হয় তিনটি ফাইনালে ওঠা অর্থহীন। কিন্তু এটাই আর্জেন্টিনা। এখানে রানার্সআপদের কোনো স্থান নেই।
প্রশ্ন: আইসল্যান্ড, ক্রোয়েশিয়া ও নাইজেরিয়ার সঙ্গে কঠিন গ্রুপে পড়েছে আর্জেন্টিনা। আপনার ভাবনা...
মেসি: এটা বিশ্বকাপ। এখানে কোনো কিছুর নিশ্চয়তা দেয়া যাবে না। সেরা টুর্নামেন্টে আপনাকে সেরাটাই খেলতে হবে। সেরা দলগুলোই নিজেদের দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ পায়। প্রতিটি প্রতিপক্ষই চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। তার জন্য তৈরি থাকতে হবে। সবগুলো ম্যাচই কঠিন হবে। কিন্তু আমরা এর জন্য প্রস্তুত।
প্রশ্ন: যদি ফেভারিটদের কথা বলেন...
মেসি: সবগুলো বড় ফুটবল দলই ফেভারিট হিসেবে শুরু করবে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি শিরোপা ধরে রাখার সর্বোচ্চ চেষ্টাই করবে। স্পেন অনেক ভালো দল যারা সেই দূরত্ব অতিক্রম করতে পারে। ব্রাজিল ও পর্তুগালের সঙ্গে ফ্রান্সও বাছাইপর্বে ভালো করেছে।
প্রশ্ন: ইতালি ও নেদারল্যান্ডসের মতো দল বিশ্বকাপে না থাকায় কি অবাক হয়েছেন?
মেসি: এটাই প্রমাণ করে বিশ্বকাপ কতটা চ্যালেঞ্জিং। ইতালিকে ছাড়া বিশ্বকাপ কল্পনাও করা যায় না। ব্রাজিলে সেমিফাইনালিস্ট ছিল ডাচরা। তাদেরকে টাইব্রেকারে হারিয়েই আমরা ফাইনালে উঠেছিলাম। আজ্জুরি ও অরেঞ্জদের মিস করবে রাশিয়া যারা দর্শকদের মাঝে রঙ এনে দেয়।
প্রশ্ন: রাশিয়ায় পৌঁছাতে বাছাইপর্বে অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়েছে আর্জেন্টিনা। মূল পর্ব নিশ্চিত করতে ইকুয়েডরের বিপক্ষে আপনাকে হ্যাটট্রিক করতে হয়েছিল।
মেসি: আমাদের শেষ ম্যাচটি জিততেই হতো এবং আমরা শুরুতেই পিছিয়ে পড়ি। পরে সবকিছু পরিকল্পনা মতো হয়েছে এবং আমি গোলগুলো পেয়েছি। কিন্তু দলের প্রচেষ্টাতেই এটা সম্ভব হয়। আমরা আরেকটি বিশ্বকাপের অংশ হতে মুখিয়ে ছিলাম। এটাই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য ছিল। প্লে-অফের চিন্তামুক্ত হয়ে রাশিয়ায় আসার লক্ষ্য পূরণ করতে পেরে আমরা সবাই খুব খুশি ছিলাম।
প্রশ্ন: ক্রোয়েশিয়া ও আর্জেন্টিনা একই গ্রুপে পড়ার পর ইভান রাকিতিচ আপনাকে কি বলেছে?
মেসি: খুব বেশি কিছু না। ইভান খুবই ভালো খেলোয়াড় এবং নিবেদিত টিমমেট। সে একজন যোদ্ধা এবং আমি যেভাবে খেলতে পছন্দ করি তা সে করতে দেবে না। সঙ্গী হিসেবে লুকা মদ্রিচকে পাচ্ছে। কিন্তু বিশ্বকাপ শেষে আমরা আগের মতোই থাকবো। বার্সেলোনায় অনুশীলনের সময় সুন্দর মুহূর্ত ভাগাভাগি করি, ম্যাচ নিয়ে আলোচনা করি। এটাই বলবো।