এ নিয়ে ১৬ বারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিচ্ছে উত্তর আমেরিকার দেশ মেক্সিকো। ১৯৩০ বিশ্বকাপে সর্বপ্রথম অংশ নেয় তারা। ঐ আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় মেক্সিকো। এর পরে ১৪ বার বিশ্বকাপে অংশ নিলেও ১২ বারই গ্রুপ পর্বের গণ্ডি পেরোতে পারেনি তারা। বিশ্বকাপে উত্তর আমেরিকার এ দেশটির বড় সাফল্য দুইবার কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা। সেগুলো ১৯৭০ ও ১৯৮৬’র আসরে। এবারের বিশ্বকাপে ‘এফ’ গ্রুপে মেক্সিকোর প্রতিপক্ষ শিরোপাধারী জার্মানি, সুইডেন ও দক্ষিণ কোরিয়া। তবে রাশিয়া বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন্স হওয়ার জন্যই মাঠে নামবে মেক্সিকো।
এমনটাই মনে করেন দলের সেরা তারকা হাভিয়ের হার্নান্দেজ। গতকাল স্পোর্টস মেইলকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, আমি বিশ্বকাপ জিততে চাই। এই একটা বিষয় আমার মনে সব সময় ঘুরপাক খাচ্ছে। সাক্ষাৎকারের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: এ নিয়ে তৃতীয়বার বিশ্বকাপে মেক্সিকোর প্রতিনিধিত্ব করছেন। কেমন লাগছে?
হার্নান্দেজ: দেশের হয়ে বিশ্বকাপে খেলাটা যে কোনো ফুটবলারের জন্য অনেক বড় ব্যাপার। আর দেশের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে খেলাটা তো আরো গৌরবের। দলে নিজেদের অবস্থান ধরে রাখার জন্য সবাই লড়াই চালিয়ে যাবে। গত দুই আসরের মতো এবারো আমাকে দলে নেয়ায় কোচ ও ম্যানেজমেন্টকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এবং এবারের আসরে আমি আমার সেরাটা দিয়ে খেলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপে আপনার সেরা মুহূর্ত্ব কোনটি?
হার্নান্দেজ: বিশ্বকাপে সবারই অনেক স্মৃতি থাকে। যেটা আমারো রয়েছে। তবে ২০১০ আসরে ফ্রান্সের বিপক্ষে গোল করে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছিলাম আমি। যেটা আমার স্মৃতিতে এখনো ভেসে উঠে।
প্রশ্ন: এবারের বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন জার্মানির মুখোমুখি হবে মেক্সিকো। জার্মানি যে কোনো দলের জন্যই শক্ত প্রতিপক্ষ। এ ম্যাচটাকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
হার্নান্দেজ: হ্যাঁ, এ ম্যাচ নিয়ে আমাদের অনেক পরিকল্পনা রয়েছে। তবে আমি আপনাকে একটা কথা স্মরণ করিতে দিতে চাই যে, ২০১০ বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে চ্যাম্পিয়ন স্পেনও সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরেছিলো। যদিও আমাদের জন্য এ ম্যাচটা জেতা সহজ হবে না। তবে কার বিপক্ষে খেলছি সেটা না ভেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে খেললেই ম্যাচের ৩ পয়েন্ট পাওয়া সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি। ক্লাব ফুটবল কিংবা দেশের ফুটবল, প্রকৃতপক্ষে কেউই ফেভারিট না। আপনি যদি একটু পেছনের দিকে তাকান তাহলে দেখবেন গত দুই মৌসুম আগে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড, ম্যানচেস্টার সিটি, চেলসি, আর্সেনালের মতো দলকে পেছনে ফেলে লেস্টার সিটি ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগের শিরোপা জেতে। আর ২০০৪-এ সেরা দলগুলোকে হারিয়েই ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতে গ্রিস। তাই আপনি কখনোই বলতে পারবেন না যে আসলে শিরোপা কে জিতবে। এবার আমাদের প্রধান লক্ষ্যই হচ্ছে শিরোপা জেতা। আর এটা আমরা পারবো বলে দলের সবাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করি।
প্রশ্ন: গত বছরও জার্মান ক্লাব বেয়ার লেবারকুসেনের হয়ে খেলেছেন। জার্মানিতে খেলার অভিজ্ঞতা কি এবারের বিশ্বকাপে কাজে লাগবে বলে মনে করেন?
হার্নান্দেজ: হ্যাঁ এটা অবশ্যই কাজে আসবে। তবে (জার্মানি) তারা দুর্দান্ত ফুটবল খেলবে। যদি তারা চার থেকে পাঁচটা সুযোগ পায় তাহলে কমপক্ষে চার গোল করবে। কিন্তু এ ম্যাচে আমরা তাদের এমন সুযোগ দিবো না। তবে আমি মনে করি এবারের আসরে যদি জার্মানি কোনো কঠিন প্রতিপক্ষের মুখোমখি হয় সেটা হবে আমাদের (মেক্সিকো) বিপক্ষে।
প্রশ্ন: ছোটকালে ফুটবল নিয়ে কি আপনার কোনো স্বপ্ন ছিল?
হার্নান্দেজ: ছোটকাল থেকেই আমার স্বপ্ন ছিলো জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপে এবং ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোতে খেলা। কিন্তু আমার প্রধান লক্ষ্য ছিলো একজন পেশাদার ফুটবলার হওয়া।
প্রশ্ন: গত বছর রাশিয়ায় কনফেডারেশন কাপে খেলেছেন? এবারের বিশ্বকাপে এটা কতটা কাজে দিবে আপনাদের?
হার্নান্দেজ: এটা আমার জন্য বড় এক অভিজ্ঞতা। আমরা সব সময় আমাদের ঐতিহ্যগত ফুটবল খেলি, যেটা আপনারা সব সময় মাঠে দেখে থাকেন। যদি আপনি আমাদের ফুটবল ইতিহাস দেখেন তাহলে দেখবেন আমরা ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, জার্মানি, স্পেন অথবা ইতালির মতো দল নই। আমাদের খেলাটা অন্যদের থেকে অনেকটাই ভিন্ন ধরনের। তবে আমরা এবার বিশ্বকাপ জিততে চাই এবং এবার সেটা মাঠে প্রমাণ করে দেখাতে চাই।
প্রশ্ন: যখন আপনি বিশ্বকাপ নিয়ে চিন্তা করেন, তখন কি কখনো আপনার কল্পনায় আসে যে এবারের বিশ্বকাপ উঁচিয়ে ধরবেন?
হার্নান্দেজ: আমি আবারো বলছি আমরা এবারের বিশ্বকাপটা জিততে চাই। এ বিষয়টা আমার মনে সব সময় ঘুরপাক খাচ্ছে। জাতীয় দলের হয়ে আমার অনেক সুখের স্মৃতি রয়েছে এবং এগুলো আবার পুনরায় ফিরিয়ে আনতে চাই যতটুকু আমার দ্বারা সম্ভব। কারণ এটা দ্বারা বোঝা যায় যে, আমি আমার দলকে সাহায্য করছি। কিন্তু আমার প্রধান চিন্তা এবং লক্ষ্যই হচ্ছে চ্যাম্পিয়ন হওয়া।