মেসি নিজের সেরাটা ঢেলে দেবে: নেইমার
ঘরের মাটিতে ব্রাজিলের ২০১৪ বিশ্বকাপ শেষ হয় চরম হতাশার মধ্যদিয়ে। সেমিফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলে হারের দুঃস্মৃতি আজও তাড়িয়ে বেড়ায় সেলেকাও সমর্থকদের। ওই ম্যাচটিতে খেলতে পারেননি ব্রাজিলের ভরসার প্রতীক নেইমার। কলম্বিয়ার বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ইনজুরির শিকার হয়ে টুর্নামেন্ট থেকেই ছিটকে যান তিনি। চার বছর কেটে গেছে। কোচ লিওনার্দো বাচ্চির তিতের অধীনে ব্রাজিল দল এখন অনেক বেশি পরিণত। রাশিয়ায় এবার শিরোপার অন্যতম দাবিদার পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। দলের সেরা তারকা নেইমার কী ভাবছেন? এক সাক্ষাৎকারে বিশ্বকাপ ভাবনা তুলে ধরেন তিনি।
ব্রাজিলকে ফেভারিটই বলছেন নেইমার। তবে নকআউট পর্বে উঠতে হলে যে সেরাটা ঢেলে দেয়ার বিকল্প নেই সতীর্থদের সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন। প্রসঙ্গ যখন বিশ্বকাপ, নেইমারের ইনজুরি থেকে ফিরে আসার কথা তো আসবেই। এখন শতভাগ ফিট আছেন বলে ভক্তদের আশ্বস্ত করেন তিনি। নেইমারের কাছে চার বছর আগের জার্মানি ম্যাচ অতীত। ওই ম্যাচের পর ব্রাজিল অনেক দূর এগিয়েছে বলেও দাবি তার। সময়ের দুই সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি ও ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেছেন নেইমার। পাঠকদের জন্য সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরা হলো:
প্রশ্ন: আপনার আরেকটি বিশ্বকাপ। এবার কি ব্রাজিল শিরোপা জিততে পারবে?
নেইমার: আমি সবসময়ই বিশ্বাস করি আমরা পারবো। আমরা খুবই ভালো দল এবং কঠোর পরিশ্রম করেছি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে আমাদের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সামর্থ্য রয়েছে।
প্রশ্ন: বিস্তারিত বলতে গেলে...
নেইমার: দক্ষিণ আমেরিকা থেকে প্রথম দল হিসেবে আমরা বিশ্বকাপে উত্তীর্ণ হয়েছি। বাছাইপর্বের ১৮টি ম্যাচ সহজ নয়। ভিন্ন দেশে এবং ভিন্ন কন্ডিশনে খেলতে হয়। ফুটবলারদের জন্য এটা কঠিন পরীক্ষা। আমরা দারুণভাবে তা করতে পেরেছি, ম্যাচ হাতে রেখে মূল পর্ব নিশ্চিত করি। এটা সবার জন্য অসাধারণ অনুভূতি। রাশিয়ায় আমরা সেই পারফরম্যান্স অব্যাহত রাখতে চাই।
প্রশ্ন: প্যারিস সেইন্ট জার্মেইয়ের (পিএসজি) হয়ে খেলার সময় ইনজুরির শিকার হন। পায়ের পাতার হাড়ে অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছে। বিশ্বকাপ সামনে রেখে এটা উদ্বেগের...
নেইমার: এখন আমি সম্পূর্ণ ঠিক আছি। হ্যাঁ, আমার জন্যও এটা উদ্বেগের ছিল। বিশ্বকাপের কথা ভেবে তাৎক্ষণিকভাবেই অস্ত্রোপচারের (গত মার্চের শুরুতে) সিদ্ধান্ত নিই। আমি মনে করি বিশ্বকাপে আমার ও দলের জন্য সবকিছু ঠিকঠাক থাকবে।
প্রশ্ন: ২০১৪ বিশ্বকাপে ইনজুরি আক্রান্ত হয়ে সেমিফাইাল খেলতে পারেননি। ব্রাজিল নিজেদের বিশ্বকাপ ইতিহাসে সবচেয়ে বাজে হারের অভিজ্ঞতা নেয়...
নেইমার: ওই ম্যাচের পর আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। এটা হজম করা কঠিন ছিল, বিশেষ করে আমার জন্য। ইনজুরির কারণে খেলতে পারিনি, যেটি (মেরুদণ্ডে আঘাত) আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দিতে পারতো। এটা ভয়ানক ইনজুরি ছিল। আমাকে হুইলচেয়ারে বসতে হয়েছে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ যে আমি দ্রুত ফিরে এসেছি এবং খেলা অব্যাহত রাখতে পেরেছি, যেটি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করি। এবার আমি চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।
প্রশ্ন: ‘ই’ গ্রুপে সুইজারল্যান্ড, কোস্টারিকা ও সার্বিয়ার সঙ্গে পড়েছে ব্রাজিল। প্রতিপক্ষ নিয়ে আপনার ভাবনা...
নেইমার: এটা বিশ্বকাপ। বিশ্বের সেরা ৩২টি দল এখানে খেলতে পারে। সহজ ম্যাচ বলে কিছু নেই। সুইজারল্যান্ডের চমৎকার ফুটবল ইতিহাস রয়েছে। নতুন দেশ হিসেবে জন্মের পর থেকে একটা চিহ্ন রেখে গেছে তারা। কোস্টারিকা কতটা শক্তিশালী হতে পারে তার একটা ধারণা নেয়া যেতে পারে, যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়া বিশ্বকাপে নেই কিন্তু কোস্টারিকানরা রয়েছে। এটা কঠিন একটা গ্রুপ। আমি এটিকে অন্যতম কঠিন গ্রুপ বলবো। নকআউট পর্বে উঠতে হলে মাঠে আমাদের সেরাটা দিতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি স্পেনে লিওনেল মেসির সঙ্গে এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বিপক্ষে খেলেছেন। তাদের বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা কতটুকু?
নেইমার: দুজনই গ্রেট ফুটবলার, নিজেদের প্রজন্মের সেরা। আমি মেসির সঙ্গে খেলেছি এবং এটা আমার জন্য অনেক সম্মানের। আমি তাকে সত্যিই অনেক পছন্দ করি, ফুটবলার হিসেবে এবং মানুষ হিসেবে দুই দিক থেকেই। একই ক্লাবে মেসির সঙ্গে খেলা আমার স্বপ্ন ছিল। আমার কাছে, মেসিই সেরা। কিন্তু আপনি ক্রিস্টিয়ানোকে বাইরে রাখতে পারবেন না। রেকর্ডবুকে তার সংখ্যাগুলোও অসাধারণ। যা-ই হোক, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ও পর্তুগালকে কঠিন পরীক্ষা দিতে হবে। কিন্তু এই দুই জাদুকর দেশের হয়ে সর্বোচ্চ সাফল্য পেতে নিজেদের সেরাটা উজাড় করে দেবে।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপ জয়ের দৌড়ে আপনার ফেভারিট?
নেইমার: অবশ্যই ব্রাজিল! আমাদের সঙ্গে আরো কয়েকটি দল রয়েছে। দক্ষিণ আমেরিকা থেকে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে। বিশ্বকাপ ইউরোপে হওয়াতে ফেভারিট তালিকায় আরো বেশি ইউরোপিয়ান দল থাকবে। বর্তমান চ্যাম্পিয়ন জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম এবং পর্তুগাল...ফেভারিট হিসেবে একটি দলকে বেছে নেয়া কঠিন।