১৯০৪ সালের ২১শে মে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে প্রতিষ্ঠিত হয় ফেডারেল ইন্টারন্যাশনাল দে ফুটবল এসোসিয়েশন (ফিফা)। কিন্তু বৈশ্বিক একটি ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করতে তাদের সময় লাগে ২৬ বছর। ১৯২১ সালে ফ্রান্সের সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জুলে রিমে ফিফা’র তৃতীয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। অলিম্পিকে বিভিন্ন দেশের ফুটবলের দারুণ সাফল্যে উজ্জীবিত হয়ে ওঠেন জুলে রিমে। দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই তিনি আলাদা একটি বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট আয়োজন করার চিন্তা-ভাবনা করেন। আর এরই ফলস্বরূপ ১৯৩০ সালে ফিফা প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজন করে উরুগুয়েতে। সেবার প্রতিবেশী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে বিশ্বকাপের প্রথম শিরোপা জিতে নেয় স্বাগতিক উরুগুয়ে। এরপর প্রতি ৪ বছর অন্তর এই আসর নিয়মিত বসছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে।
কখনো আমেরিকায়, কখনো ইউরোপে, কখনো আফ্রিকায় আবার কখনো এশিয়ায়। দরজায় কড়া নাড়ছে বিশ্বকাপের আরেকটি আসর। রাশিয়ায় বসতে যাচ্ছে ফুটবল এই মহাযজ্ঞ। আগের প্রতিযোগিতাগুলো কেমন ছিল- ফুটবল উৎসবের বাণে ভেসে যাওয়ার আগে ইতিহাসের পাতায় একটু চোখ বুলিয়ে নেয়া যাক-
২০০২ বিশ্বকাপ: কোরিয়া-জাপান
চ্যাম্পিয়ন: ব্রাজিল, রানার্স আপ: জার্মানি
এশিয়ার মাটিতে প্রথম বিশ্বকাপের আয়োজন করে যৌথভাবে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান। শতাব্দীর প্রথম সহস্রাব্দেরও প্রথম এই আয়োজনটি ছিল অত্যন্ত আড়ম্বরপূর্ণ। ২০০২ সালের বিশ্বকাপে বাছাই পর্বে সর্বোচ্চ অংশগ্রহণ করে ১৯৮টি দেশ। ১৯৯৪ সালে বিশ্বকাপ জিতেছিল ফুটবল পরাশক্তি ব্রাজিল। মাঝে ১৯৯৮ সালের বিশ্বকাপে সেটা তাদের হাতছাড়া হয়ে যায়। ব্রাজিলকে ফাইনালে হারিয়ে শিরোপা জেতে ফ্রান্স। তবে এক বিশ্বকাপ বাদে আবারো নিজেদের শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন করে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ ব্রাজিল। বিশ্বকাপের ইতিহাসে প্রথম কোন পাঁচবার বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্ব দেখায়। রোনালদো এই বিশ্বকাপে করেন সর্বোচ্চ ৮ গোল। ১৯৭০ সালে মেক্সিকো বিশ্বকাপে গার্ড মুলারের ১০ গোল করার এটিই কোনো আসরে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত গোল ছিল। জার্মানির বিপক্ষের ফাইনালে ব্রাজিলের হয়ে দু’টি গোলই করেন রোনালদো। ফাইনালে প্রতিপক্ষকে ২-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ব্রাজিল। অথচ এই বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার সময় ব্রাজিলের পক্ষে বাজি ধরার মতো কেউ ছিল না। তারা অনেক কষ্ট করে বাছাই পর্ব পেরিয়ে দক্ষিণ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপে অংশগ্রহণ করেছিল।
২০০৬ বিশ্বকাপ: জার্মানি
চ্যাম্পিয়ন: ইতালি, রানার্স আপ: ফ্রান্স
এই বিশ্বকাপে হট ফেভারিট ছিল স্বাগতিক জার্মানি। সবাই ধরে নিয়েছিল ১৯৭৪ সালের মতো স্বাগতিক দেশ হিসেবে এবারো শিরোপা জিতবে জার্মানি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে তারা সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয়। ফাইনালে উঠেছিল ফ্রান্স ও ইতালি। শিরোপার চূড়ান্ত লড়াইটি ছিল নাটকীয়তায় ভরপুর। ২০০৬ সালের বর্ষসেরা খেলোয়াড় ফ্রান্সের জিনেদিন জিদানের ‘ঢুস কাণ্ড-’ ঘটে এই ফাইনালে। ইতালির খেলোয়াড় মার্কো মাতেরাজ্জিকে মাথা দিয়ে গুঁতো দিয়ে চিত করে ফেলে দেন জিদান।
তখনকার বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে প্রবল চাপে পড়ে ফ্রান্স। শেষ পর্যন্ত অতিরিক্ত সময়েও খেলা ১-১ গোলে ড্র থাকে। শিরোপা নির্ধারণের জন্য খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
সেখানে ফ্রান্সকে ৫-৩ গোলে হারিয়ে শিরোপা জিতে নেয় ইতালি। জার্মানির মিরোস্লাভ ক্লোসা এই আসরে সর্বোচ্চ ৫টি গোল করেন। ২০০৬ সালের বিশ্বকাপে সবচেয়ে চমক দেখায় পর্তুগাল। তরুণ তুর্কি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর কাঁধে সওয়ার হয়ে এই বিশ্বকাপে পর্তুগাল সেমিফাইনালে ওঠে। ১৯৬৬ সালের পর বিশ্বকাপে এটি ছিল তাদের প্রথম সেমিফাইনাল।
তবে শেষ চারে ফ্রান্সের কাছে হেরে তারা বিদায় নেয়। অন্যদিকে এই বিশ্বকাপে ব্রাজিলের রোনালদো ঢুকে যান বিরল ইতিহাসে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫ গোল করার রেকর্ড গড়েন তিনি এই আসরে।