শুক্রবার সকাল থেকে থেমে থেমে বৃষ্টি। রোববার বিকাল থেকে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটিবাসীর জনজীবন। টানাবর্ষণের ফলে অত্রাঞ্চলে পাহাড় ধসেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে ব্যাপকভাবে। এমন পরিস্থিতিতে পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত বাসিন্দাদের নিরাপদ স্থানে সরে যাওয়ার জন্য রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করার পাশাপাশি গভীর রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সরজমিন অবস্থান করে জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে অনুরোধ করেছেন জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ। লাগাতার ভারি বৃষ্টির কারণে পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটির বিভিন্নস্থানে ব্যাপক ভূমি ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাঙ্গামাটির সঙ্গে খাগড়াছড়ি জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রোববার থেকে বন্ধ হয়ে গেছে। রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়কের সাপছড়ি ও শালবাগান এলাকায় সড়কের উপর পাহাড় ধসে পড়ায় রাঙ্গামাটি-চট্টগ্রাম সড়ক যেকোনো সময় বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। রোববার থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি শহরের রাঙ্গামাটি সিনিয়র মাদরাসা, শিমুলতলী, রূপনগর, পুরাতন বাস স্টেশন, ওমদা মিয়া হিল একাধিক জায়গায় ভূমি ধসের ঘটনা ঘটে।
তবে এসব ঘটনায় কারো প্রাণহানি ঘটেনি। রোববার রাতে শহরের বনরূপা এলাকায় সড়কের ওপর গাছ ভেঙে পড়ায় দীর্ঘক্ষণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকে। বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙ্গে পড়ায় রাঙ্গামাটিতে দীর্ঘ ১৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার পর সোমবার ভোররাত থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু করা হলেও শহরের অধিকাংশ স্থানে পানি সরবরাহ বন্ধ আছে। রাঙ্গামাটি আবহাওয়া অফিস সূত্র জানা গেছে রোববার সকাল ৬টা থেকে সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত রাঙ্গামাটির বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসরত লোকজনদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে আনা হয়। জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ, পৌর মেয়র আকবর হোসেন চৌধুরীর নেতৃত্বে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং পৌর কাউন্সিলরগণ ঝুঁকিপূর্ণ স্থানসমূহের উদ্ধারকাজ পরিচালনা করেন। বিভিন্নস্থানে ভূমিধসের পর পরই রাঙ্গামাটি দমকল বাহিনীর কর্মীরা দ্রুত দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছে উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে প্রবল বর্ষণের কারণে রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার বিভিন্নস্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন।
তিনি জানান, উপজেলায় একাধিক আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেখানে ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনদের সরিয়ে আনা হচ্ছে। অপরদিকে কাউখালী উপজেলার সঙ্গে দেশের অন্যান্য স্থানের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা রোববার মধ্যরাত থেকে বন্ধ হয়ে আছে। উপজেলার নিম্নাঞ্চলে বসবাসরত ৫ হাজারের অধিক পরিবার বর্তমানে পানিবন্দি অবস্থায় আছে। রাঙ্গামাটি জেলার সিভিল সার্জন (ভাঃ) ডা. নীহার রঞ্জন নন্দী জানিয়েছেন দুর্যোগ মোকাবিলায় রাঙ্গামাটি জেনারেল হাসপাতালসহ সকল উপজেলায় একাধিক মেডিকেল টিমকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে সোমবার মধ্যরাতে রাঙ্গামাটির জেলা প্রশাসক একেএম মামুনুর রশিদ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে সকলকে সরে যাওয়ার নির্দেশ প্রদান করেন। অন্যদিকে সোমবার সকাল থেকে রাঙ্গামাটিতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ বেশকিছু এলাকার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। শহরজুড়েই রাঙ্গামাটি জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলো থেকে মানুষজনকে নিরাপদে সরে যেতে মাইকিং চলছে।