বাস, ট্রেন ও লঞ্চে ঈদ উপলক্ষে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড় বাড়ছে। স্বজন ও প্রিয়জনের কাছে সান্নিধ্য পেতে সবাই ছুটছেন নিজ নিজ গন্তব্যে। সবার চোখেমুখে বাড়ি ফেরার অপেক্ষা। গতকাল রাজধানীতে বৃষ্টি মাথায় নিয়ে ছুটছিলেন ঘরমুখো মানুষ। সড়কগুলোয় ছিল যানজট। কিছু ট্রেন সময়মতো স্টেশনে না পৌঁছায় যাত্রীদের অপেক্ষা করতে হয়েছে। নাড়ির টানে মানুষ ঢাকার বাইরে যাওয়ায় ফাঁকা হয়ে আসছে রাজধানী। গতকাল সকালে কমলাপুর স্টেশনে দেখা গেছে, ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়।
প্রতিটি প্লাটফর্মেই ট্রেনের অপেক্ষায় ঘরমুখো মানুষ। ট্রেন ছাড়ার অনেক আগেই স্টেশনে হাজির হয়েছেন যাত্রীরা। সবার হাতেই ব্যাগ-লাগেজ। যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ৩রা জুন যারা অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছিলেন তারাই মঙ্গলবার বাড়ি গেছেন। কিশোরগঞ্জ যাবেন জামাল হোসেন। তিনি জানান, ৩রা জুন অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করেছেন। স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করার জন্য গ্রামে যাচ্ছিলেন তিনি। গত ১০ই জুন থেকে ঈদযাত্রা শুরু হয়েছে। সেই হিসেবে তৃতীয় দিনের মতো কমলাপুর স্টেশন থেকে ট্রেনযোগে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে যাচ্ছেন মানুষ। গত কয়েক দিনের তুলনায় মঙ্গলবার যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে বেশি। আগামী তিন দিন এই ভিড় আরও বাড়বে বলে মনে করছেন স্টেশন সংশ্লিষ্টরা। মঙ্গলবার সুন্দরবন এক্সপ্রেস, নীলসাগর এক্সপ্রেস, অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস ও দিনাজপুর এক্সপ্রেস কিছুটা দেরি করে ছেড়েছে বলে জানা গেছে। কমলাপুর রেলওয়ে ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী জানিয়েছেন, মঙ্গলবার মোট ৬৬টি ট্রেন কমলাপুর থেকে দেশের বিভিন্ন বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। ঈদ উপলক্ষে প্রতিদিন কমলাপুর থেকে প্রায় ৭০-৭৫ হাজার মানুষ বিভিন্ন প্রান্তে যাবেন। যাত্রী চাপ সামলাতে প্রায় প্রতিটি ট্রেনেই অতিরিক্ত বগি সংযুক্ত করা হয়েছে। এছাড়া যাত্রীদের সুবিধার্থে বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা আছে। তবে দু-একটি ট্রেন স্টেশনে দেরিতে পৌঁছায় কয়েক মিনিট দেরিতে ছেড়েছে। এদিকে দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নৌপথে ঢাকা ছাড়তে শুরু করেছেন ঘরমুখো মানুষ। ঈদ সামনে রেখে নির্ধারিত ভাড়ার দোহাই দিয়ে লঞ্চের টিকিটে অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা গেছে, সদরঘাট থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪৩টি রুটে লঞ্চ চলাচল করে। লঞ্চে কেবিনের ক্ষেত্রে সাধারণত অগ্রিম টিকিট দেয়া হয়। গত ৮ই জুন থেকে দেয়া হচ্ছে কেবিনের অগ্রিম টিকিট। বছরের অন্য সময় একজনের (সিঙ্গেল) কেবিন ভাড়া ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা হয়। সেখানে নেয়া হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকা। দুজনের (ডাবল) দুই হাজার ৬০০ টাকা পর্যন্ত । যা আগে দুই হাজার টাকা ছিল। পটুয়াখালী যাওয়ার জন্য অগ্রিম টিকিট নিতে এসেছেন মাকসুদুর রহমান । তিনি বলেন, আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ডাবল কেবিনের টিকিট নিয়েছেন। এই ভাড়া অন্য সময়ে সর্বোচ্চ দুই হাজার টাকা। লঞ্চ মালিকরা সরকারকে ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে একটি ভাড়ার তালিকা করিয়ে নিয়েছেন। সময়মতো এটা তারা ব্যবহার করেন। অতিরিক্ত ভাড়া অনেক সাধারণ যাত্রীর ঈদযাত্রার দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয়। বাড়তি ভাড়ার নেয়ার বিষয়ে লঞ্চ মালিক সমিতির নেতা শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া গণমাধ্যমকে বলেন, প্রতিযোগিতার কারণে সারা বছর অনেক লঞ্চ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেয়। এ ছাড়া ঈদের সময় একমুখী যাত্রী পরিবহন করতে হয়। তাই পোষাতে ভাড়া খানিকটা বাড়লেও নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি নেয়া হয় না। তিনি বলেন, তার পরও কেউ অতিরিক্ত ভাড়া নিচ্ছে কি-না তা তদারকি করি, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকলে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি। অন্যদিকে সায়দাবাদ, গাবতলী ও মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীদের নিয়ে একের পর এক বাসগুলো দূরপাল্লার উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেছেন। বিভিন্ন বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।