× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, বৃহস্পতিবার , ৫ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৯ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বজ্রপাতে আতঙ্ক, নিহত ৩

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১৩ জুন ২০১৮, বুধবার

বজ্রপাত এবং বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গতকাল ভোগান্তিতে পড়েন মানুষ। রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।
নরসিংদী প্রতিনিধি জানান, নরসিংদীর মেঘনা নদীতে যাত্রীবাহী একটি ট্রলারে বজ্রপাতে নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরো ১০ যাত্রী। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।
গতকাল বিকাল ৩টার দিকে নরসিংদীর চরাঞ্চল করিমপুরের মেঘনা নদীর মোহনায় এ ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এদের মধ্যে দু’জনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
নিহতরা হলেন- আলোকবালী গ্রামের ফরিদা ইয়াসমিন (৫০), একই গ্রামের রেহেনা বেগম (৪০) ও সেলিম মিয়া। আহতরা হলেন- ছানাউল্লাহ মিয়া, রুবেল মিয়া, আলী হোসেন, ফরহাদ মিয়া, জাবেদ ও ভুট্টো মিয়া।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, দুপুর আড়াইটার দিকে নরসিংদীর বিপিন সাহার ঘাট থেকে দুই শতাধিক যাত্রী নিয়ে ইঞ্জিনচালিত নৌকা (ট্রলার) সদর উপজেলার চরাঞ্চল আলোকবালী যাচ্ছিল।

নৌকাটি চরাঞ্চলের করিমপুরের কাছাকাছি পৌঁছলে মুষলধারে বৃষ্টি ও বজ্রপাত শুরু হয়।
এরই মধ্যে নৌকাটি মেঘনা নদীর করিমপুর মোহনায় পৌঁছলে বিকট শব্দে আগুনের গোলাকৃত একটি বস্তু নৌকার উপর পড়ে। এ সময় নৌকার ছাদে বসা সেলিম নামে একজন দগ্ধ হয়ে মারা যান। আহত হন আরো ১২ জন। পরে নৌকার অন্য যাত্রীরা তাদের উদ্ধার করে নরসিংদী সদর হাসপাতালে নিলে আরো দু‘জন মারা যান। গুরুতর আহত আরো দুজনকে মুমূর্ষু অবস্থায় ঢাকায় পাঠানো হয়।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মনু মিয়া বলেন, প্রচণ্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। বিকট শব্দের সঙ্গে বজ্রপাত। এরই মধ্যে আগুনের একটি গোলা পড়লো। এ সময় ছাদে থাকা একজন সঙ্গে সঙ্গে পুড়ে মারা যান। অন্যরা আগুনে দগ্ধ হন। অপর প্রত্যক্ষদর্শী হাসিব বলেন, বজ্র্রপাত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার ছাদে আগুন লেগে যায়। এ সময় হুড়াহুড়ি করে নৌকার বেশকিছু যাত্রী পানিতে ঝাঁপ দেন। পরে আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়া হয়।
টানা বর্ষণে চট্টগ্রামের লাখো মানুষ পানিবন্দি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি জানান, টানা বর্ষণে চট্টগ্রাম মহানগর ও বিভিন্ন উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। কয়েকটি উপজেলার বিভিন্নস্থানে সড়ক ডুবে নৌকায় যাতায়াত করছে পানিবন্দি লাখো মানুষ। সড়কে পানি উঠায় পার্বত্য জেলা রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের সঙ্গে কার্যত যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে গত দুইদিনেরও বেশির সময় ধরে প্লাবিত হয়ে আছে চট্টগ্রাম মহানগর ও উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা। এরমধ্যে ডুবে আছে চট্টগ্রামের শস্যভাণ্ডার গুমাইবিলসহ বহু বিলের আধাপাকা ফসল, ঘরবাড়ি ও দোকানপাট।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, চট্টগ্রামের ১৬টি উপজেলার মধ্যে প্রায় ১২টি উপজেলার প্রায় দেড় লাখেরও বেশি মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ঈদের ছুটি বাতিল করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, প্রবল বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, ফটিকছড়ি, হাটহাজারীতে মূলত বেশি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে মানুষ। পাহাড়ি ঢল ও বঙ্গোপসাগরের জোয়ারে পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দক্ষিণ চট্টগ্রামের চন্দনাইশ, সাতকানিয়া, বোয়ালখালী, বাঁশখালী, আনোয়ারা ও চট্টগ্রাম মহানগরীর অধিকাংশ এলাকার বাসিন্দারা।
তিনি জানান, প্রবল বর্ষণের কারণে সোমবার রাত থেকে চট্টগ্রাম-রাঙ্গামাটি সড়ক এবং চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। সড়কের রাউজান পৌরসভার বেশ কয়েকটি স্থান পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এজন্য ছোট-বড় যান্ত্রিক যানবাহন চলতে পারছে না। রিকশা, ভ্যান চলাচল করছে কোনরকমে।

তিনি বলেন, রাউজান ও ফটিকছড়িতেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। এখানে সবচেয়ে বেশি মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। প্রবল বর্ষণের কারণে ফটিকছড়ি উপজেলায় হালদা নদী এবং কয়েকটি খালের বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। এছাড়া উপজেলার নারায়ণহাট, ভূজপুর, হারুয়ালছড়ি, সুয়াবিল, পাইন্দং, লেলাং, রোসাংগিরি, নানুপুর, বক্তপুর, ধর্মপুর, জাফতনগর, সমিতিরহাট, আবদুল্লাপুর, ফটিকছড়ি ও নাজিরহাট পৌর এলাকা পানিতে প্লাবিত হয়ে পড়েছে। এসব এলাকায় কয়েক হাজার মানুষ পুরোপুরি পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
এছাড়া রাঙ্গৃুনিয়া উপজেলায় অবস্থিত চট্টগ্রামর শস্যভাণ্ডার গুমাইবিল উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সয়লাব হয়ে গেছে। এতে বিলের ২ হাজার হেক্টর আধাপাকা ধান তলিয়ে গেছে বলে জানান রাঙ্গুনিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কামাল হোসাইন। তিনি বলেন, উজানের ঢল আর জোয়ারের পানিতে মরিয়মনগর চৌমুহনী ডিসি সড়ক দু’দিন ধরে ডুবে রয়েছে। ফলে এ সড়কের দুই পাশের চার ইউনিয়নের লাখো মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সড়কের উপর নৌকায় যাতায়াত করছে এসব এলাকার মানুষ।
সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোবারক হোসেন জানান, উপজেলার বাজালিয়া এলাকায় পাহাড়ি ঢলের কারণে প্রবল বেগে পানি প্রবাহিত হচ্ছে সড়কের উপর দিয়ে। এজন্য চট্টগ্রাম-বান্দরবান সড়কে যানবাহন চলাচল সোমবার রাত থেকে বন্ধ আছে। সাতকানিয়ার কেরানীগঞ্জ থেকে কোন গাড়ি বান্দরবানের দিকে যাচ্ছে না।
তিনি জানান, সাতকানিয়া উপজেলার চরতি ইউনিয়নে ১৫-১৬টি বসতঘর সমপূর্ণ ভেঙে পড়েছে। একটি সড়ক ভেঙে ধসে পড়েছে। আমিলাইষ ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামও পানিতে প্লাবিত হয়েছে।

এদিকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাঙ্গু নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আ ন ম বদরুদ্দোজা। এর ফলে উপজেলার হাশিমপুর, দোহাজারী, ধোপাছড়ি, কাঞ্চনাবাদ. কেশুয়া ও বরকল ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম পানিতে প্লাবিত হয়েছে বলে জানান তিনি। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন জানান, রাউজান উপজেলায় জরুরিভাবে ত্রাণ সহায়তা পাঠানো হয়েছে। অন্যান্য উপজেলার জন্য ত্রাণ ও নগদ টাকা চেয়ে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর বাকলিয়া, চান্দগাঁও, বায়েজিদ, আগ্রাবাদ, হালিশহর, চকবাজারের বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে ডুবে রয়েছে। এসব এলাকার স্কুল, কলেজ, মাদরাসা, দোকানপাট ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়েছে। বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কোমর পানিতে ডুবে রয়েছে। স্থানীয় লোকজন স্কুলের মাঠে জাল নিয়ে মাছ ধরতে দেখা গেছে।
এদিকে স্থল নিম্মচাপের প্রভাবে সঞ্চালনশীল মেঘমালার জন্য মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে বৃষ্টি আরো বাড়বে বলে জানান চট্টগ্রাম নগরীর পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ডিউটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মাহমুদুল আলম। তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে আরও ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে। এজন্য পাহাড় ধসের ঝুঁকি প্রবল। এ জন্য পাহাড় ধসের সতর্কবার্তাসহ বিভিন্ন সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। তবে স্থল নিম্নচাপটি বাংলাদেশের কুমিল্লা অতিক্রম করে ভারতের ত্রিপুরা থেকে আরও উত্তরদিকে অগ্রসর হচ্ছে।
এদিকে পাহাড় ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ১১টি টিম চট্টগ্রাম নগরীর ১১টি পাহাড়ে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াছ হোসেন। তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে বেশি ঝুঁকির মধ্যে থাকা প্রায় ৫০০ পরিবারকে সরিয়ে নিয়েছি। আরো যারা এখনো সরেনি তাদের সরে যাবার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর