× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

এএফপির প্রতিবেদন / বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উন্মাদনা সহিংসতায় রূপ নিয়েছে

খেলা

মানবজমিন ডেস্ক
১৪ জুন ২০১৮, বৃহস্পতিবার

বাংলাদেশে উন্মত্ত এক নেশা তৈরি করেছে ফুটবল বিশ্বকাপ। সশস্ত্র ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মধ্যে বেধেছে সংঘর্ষ। সব জায়গায় শোভা পাচ্ছে দু’দেশের পতাকা। এর মাত্রা এতই বেশি যে, কিছু মানুষ ভিনদেশি পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অনুপস্থিতি ও বহুল সমর্থিত দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সরাসরি সম্পর্ক না থাকার পরেও পরেও বিশ্বকাপ জ্বরে কাঁপছে এখানকার ফুটবল প্রেমীরা। গত সপ্তাহে একটি শহরে লিউনেল মেসি ও নেইমারের সমর্থকরা পরস্পরের ওপর চাপাতি নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। এতে এক ব্যক্তি ও তার সন্তান গুরুতর আহত হয়। এদিকে, রাস্তার পাশে পছন্দের দলের পতাকা টানাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা গেছে ১২ বছরের এক কিশোর।

বাংলাদেশের জাতীয় ফুটবল দল বিশ্বকাপে অংশ নেয়ার যোগ্যতা অর্জন করতে পারেনি। মোট ২১১ দেশের মধ্যে র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯৪তম। বৃহস্পতিবার রাশিয়ায় এবারের বিশ্বকাপ শুরু হবে। কিন্তু তার কয়েক সপ্তাহ আগে থেকেই ১৬ কোটি মানুষের দেশে কর্তৃত্ব করছে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা। দলকে শুভকামনা জানিয়ে পতাকা মিছিল করেছে দুই দলের সমর্থকরা। উত্তরাঞ্চলীয় মদরগঞ্জ শহরে কয়েকশ সমর্থক মোটরসাইকেল র‌্যালি করেছে। স্থানীয় পুলিশ প্রধান মোহাম্মদ রফিক বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেন, আরো পাগলামির পরিকল্পনা করার জন্য তারা বৈঠক করছে। এতে আপনি বিরাজমান উত্তেজনা ও উদ্বেগের বিষয়টি বুঝতে পারেন। তবে কিছু বাংলাদেশি আবার এই উত্তাপ থেকে নিষ্কৃতি চান। একজন আইনজীবী বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী দলগুলোর পতাকা উড়ানো নিষিদ্ধ করতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। ভিন্ন দেশের পতাকা না উড়ানোর জন্য ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে নির্দেশ দিয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এসএম ইমামুল হক বলেন, সরকারের উচিত বাংলাদেশে কোনো বিদেশি পতাকা উড়ানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা।
ক্রিকেট বা ফুটবল, উভয় বিশ্বকাপেই চার বছর পর পর নিজ দলের প্রতি সমর্থন দিতে পতাকা উড়ায় বাংলাদেশি সমর্থকরা। বাংলাদেশ কখনোই ফুটবল বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেনি। ভবিষ্যতে খেলার সুযোগ পাবে এমন সম্ভাবনাও কম। তা সত্ত্বেও চার বছর পর পর বিশ্বকাপকে ঘিরে দেশ উন্মত্ত হয়ে ওঠে।
১৯৮৬ সালে দিয়াগো ম্যারাডোনা যখন অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্যে আর্জেন্টিনাকে চ্যাম্পিয়ন করেন, তখন থেকে বাংলাদেশে দক্ষিণ আমেরিকার দুই দেশকে নিয়ে দ্বন্দ্ব চলে আসছে। ক্রীড়া বিষয়ক একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক এমএম কাইসার বলেন, এখানে পেলে একটি পারিবারিক নাম ছিল। তার গল্প আমরা পাঠ্যবইয়ে পড়েছি। তাই ব্রাজিল সমর্থনের একটি প্রথাগত ভিত্তি রয়েছে। কিন্তু ১৯৮৬ সালে ম্যারাডোনার আর্জেন্টিনা বাংলাদেশিদের মন জয় করে নেয়। তখন থেকেই এই দুই দল নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। আর্জেন্টিনার পতাকা কেনার পর ১৩ বছরের কিশোর মাকসুদ এলাহী বলে শুধুমাত্র মেসির কারণে আমি আর্জেন্টিনা সমর্থন করি। তার ড্রিবলিং মনোমুগ্ধকর। বাল্যকালে রোনালদোর খেলা দেখে ব্রাজিলের প্রেমে পড়েছিলেন ২৯ বছর বয়সী ডাক্তার তানভির হায়দার। তিনি বলেন, তার জন্যই আমি ব্রাজিলকে ভালোবাসি। আর ব্রাজিলের সোনালী অতীতও রয়েছে। তারা দুর্ধর্ষ খেলা করে। প্রতি বিশ্বকাপেই তাদের দলে সুপারস্টার থাকে।
তবে বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনা বিশ্লেষণ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন সমাজবিজ্ঞানীরা। তাদের একজন এ বিষয়টিকে ‘ইনফেরিওরিটি কমপ্লেক্স’ আখ্যা দিয়েছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক নেহাল করিম বলেন, এসব মানুষের অনেকেই জানেন না যে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিল কোথায়। এ দুই দেশের সঙ্গে তাদের রক্তের বা ভাষাগত কোনো সম্পর্ক নেই। তার পরেও এদের জন্য তারা পাগল। এটার কারণ আমি বুঝি না। বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য মোকাদ্দেম হোসেন এটিকে বিশ্বায়নের প্রভাব বলেছেন।
অন্যদিকে, লেখক আশিফ ইন্তাজ রাব্বি ফুটবল উন্মাদনাকে সমর্থন করে বলেন, লাখ লাখ মানুষের জন্য বিশ্বকাপ একটি আনন্দের উপলক্ষ। আর্জেন্টিনার সমর্থকরা যদি পতাকা উড়িয়ে আনন্দ পায়, তাদের এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত করার আপনি কে? সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এক কমেন্টে এ কথা লিখেন তিনি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর