ঘোষণা দিয়েও সেন্ট পিটার্সবার্গ স্টেডিয়ামে মিশরের বিপক্ষে ম্যাচটি দেখতে যাননি ভ্লাদিমির পুতিন। হয়তো ম্যাচটি নিয়ে অতি টেনশনে ছিলেন বলেই যাননি রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট। টেনশন করারই কথা। এই ম্যাচ জিতলেই যে প্রথমবারের মতো নকআউট পর্বের টিকিট পাবে রাশিয়া। হয়েছেও তাই। সালাহর মিশরকে ৩-১ গোলে রাশিয়া বিশ্বকাপে প্রথম দল হিসেবে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয় স্বাগতিকরা। এতে উৎসবে মেতেছে পুরো রাশিয়া। বিশেষ করে রাজধানী মস্কোতে উৎসব হয়েছে রাতভর।
নেচে গেয়ে জয়টি উদযাপন করেছে মস্কোবাসী।
বিশ্বকাপে অংশ নেয়া দলগুলোর মধ্যে রাশিয়ার অবস্থান তলানিতে। শেষ কবে ম্যাচ জিতেছে জিজ্ঞেস করলে, আমতা আমতা করে তারিখ হাতড়ে বেড়াবেন দলটির সমর্থকরা। অথচ এই দলই কিনা বিশ্বকাপের মঞ্চে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই পেয়েছে দুর্দান্ত জয়, প্রতিপক্ষ সৌদি আরবের জালে দিয়েছে ৫ গোল! দ্বিতীয় ম্যাচে মিশরের বিপক্ষেও পেয়েছে অসাধারণ জয়। দুই ম্যাচ মিলিয়ে দিলো ৮ গোল। কোনো জটিলতা ছাড়াই দলটির দ্বিতীয় রাউন্ড প্রায় নিশ্চিত। এ যেন স্বপ্ন! স্বপ্নের ম্যাচটি হয়েছে মস্কো থেকে প্রায় ছয়শ’ কিলোমিটার দূরের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে। কিন্তু সকাল থেকেই মস্কোর জনগণ ভিড় করে ইউনিভার্সিটি প্রোস্পাকার্ট মস্কোর ফিফা ফ্যান ফেস্টে। ম্যাচ শুরুর ঘণ্টা দু’য়েক আগেই ফ্যান ফেস্টটি কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। শুরু হয় রাশিয়ানদের চিৎকার চেঁচামেচি। নানা রংয়ে নানা ঢংয়ে তারা হাজির হয় ফ্যান ফেস্টে। ৮০ মিটার জায়ান্ট স্ক্রিনে ম্যাচটি উপভোগ করেন প্রায় দুই লাখ দর্শক। দর্শকদের চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যে প্রথমার্ধ কাটে গোলশূন্য। তবে দ্বিতীয়ার্ধে রাশিয়া গোল করার পরেই উৎসবে ফেটে পড়ে পুরো মস্কো। যার রেশ থাকে সারারাত। মেট্রো রেল, বাস আর রাস্তাতে গান গেয়ে জয় উদযাপন করতে থাকে রুশ তরুণ-তরুণী।
মদ খেয়ে বুঁদ হয়ে থাকার পরও তাদের এই উদযাপনে কোনো বাঁধ সাধেনি রাশিয়ান পুলিশ। সাধারণত ম্যাচের দিন ছাড়া রাত ১টায় মেট্রো রেল বন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু এই জয়কে কেন্দ্র করে রাত তিনটা পর্যন্ত মেট্রো রেল চালু রাখে মস্কো সিটি করপোরেশন। উৎসবে শামিল হয়ে দলকে উৎসাহ দিতে মস্কো থেকে ওই রাতেই সেন্ট পিটার্সবার্গে চলে যান পুতিন। সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে হারানোর পরও পুরো দলকে উৎসাহ দিতে ডেকে কথা বলেন রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট।
বিশ্বকাপের আগের সাত ম্যাচের সবক’টিতে হেরেছিলো স্বাগতিকরা। প্রস্তুতি ম্যাচটির দুটির রেজাল্টও তাদের পক্ষে ছিল না। বিশ্বকাপের রেকর্ডও ভালো ছিল না। আগে অংশ নেয়া তিন আসরে টানা দুই ম্যাচে জয় কিংবা দ্বিতীয় রাউন্ডে যাওয়ার রেকর্ড নেই দলটির। ২০১৮ বিশ্বকাপে স্বাগতিক হওয়ার মান রাখলো দলটি। সৌদি আরবকে হারানোর পর মিশরকেও হারালো পুতিনের দেশ। তবে বিশ্বকাপে টানা দুই জয় না পেলেও দুই ড্রয়ের রেকর্ড রয়েছে রাশিয়ার। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে দক্ষিণ কোরিয়া এবং আলজেরিয়া দুই দলের সঙ্গেই ১-১ গোলে ড্র করেছিল। বিশ্বকাপে রাশিয়ার যাত্রা শুরু ১৯৯৪ সালে। প্রথম ম্যাচে ক্যামেরুনকে ৬-১ গোলের বিশাল ব্যবধানে হারিয়েছিল রাশিয়া। এরপর ২০০২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে জেতে তিউনিশিয়ার বিপক্ষে। সেখানে ব্যবধান ছিল ২-০ গোলের। এর আগে এই দুটি ম্যাচই জিতেছিল রাশিয়া। আগামী ২৫ জুলাই উরুগুয়ের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ খেলবে রাশিয়া। জিতলে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়েই পরবর্তী রাউন্ড খেলবে স্বাগতিকরা।