× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মেসিডিয়ান সভ্যতা ভ্যানিশ?

প্রথম পাতা

সাজেদুল হক
২৩ জুন ২০১৮, শনিবার

হতাশ। শূন্য দৃষ্টি। নিচু মাথা। বিধ্বস্ত। লিওনেল মেসি মাঠ ছাড়লেন কারো সঙ্গে হাত না মিলিয়েই। হারিয়ে গেলেন ড্রেসিংরুমের দিকে। যেন এক জাদুকরের অকস্মাৎ  হারিয়ে যাওয়া। ফুটবল ইতিহাসের একটি অধ্যায়ও কী শেষ হয়ে গেল।
বার্সেলোনার হয়ে বরাবরই তিনি দুর্দান্ত। জাতীয় দলে তার নিবেদন নিয়ে কখনো কখনো প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু গত বিশ্বকাপেই বা পায়ের জাদুতে মোহিত করেন সবাইকে। দলকে নিয়ে যান ফাইনালে। যদিও বিশ্বকাপ জিততে পারেননি। কিন্তু তার পারফরমেন্স নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি। আর এবার বাছাই পর্বে প্রায় একক নৈপুণ্যে দলকে নিয়ে এনেছেন বিশ্বকাপে। কিন্তু হায়! বিশ্বমঞ্চে এসেই যেন হারিয়ে গেলেন লিওনেল মেসি। কোথায় তিনি। প্রথম ম্যাচে ছিলেন প্রায় বোতলবন্দি। আর কালতো মনে হলো তিনি মাঠেই নেই। অবস্থাটা এমনই ছিলো যে বিরতির সময় এক আর্জেন্টাইন সমর্থক ফেসবুকে লিখলেন, দ্বিতীয়ার্ধে যদি মেসি নামে। ভাগ্য যদি বদলায়। তখনও হয়তো কেউ জানতেন না, কী লজ্জাটাই না অপেক্ষা করে আছে মেসিদের জন্য।
এটা হয়তো অনেকেরই মনের কথা। যেটা ম্যাচ শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এক টুইট বার্তায় জানিয়ে দিলেন গ্রেট গ্যারি লিনেকার। ‘মদ্রিচ দুর্দান্ত। কিন্তু এত বছরে এমন দুর্বল আর্জেন্টিনা কখনো দেখিনি।’ গ্যালারিতে ছিলেন দিয়াগো ম্যারাদোনা। একবারও হাঁসতে দেখা যায়নি তাকে। কখনো হতাশ হয়ে মুষ্টি ছুড়ে মারছেন। কখনো বা অশ্রু সজল। পেলে-ম্যারাদোনার পর এমন দ্বৈরত ফুটবল দুনিয়াতে আর একটিও নেই। রোনালদো বনাম মেসি। ক্লাব থেকে জাতীয় দল। সর্বত্র তারা নিজ দলের প্রাণভোমরা। এই বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত রোনালদো দুর্দান্ত। গোল করেছেন চারটি। দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যাওয়ার লড়াইয়ে রেখেছেন ভালোভাবেই।
পাঁচবারের বিশ্বসেরা লিওনেল মেসি বিশ্বকাপে একটি গোলও করতে পারেননি। উল্টো পেনাল্টিও মিস করেছেন। এসবও অভাবনীয় নয়। সবচেয়ে বিস্ময়কর হয়ে দেখা দিয়েছে মাঠে তার কার্যকর অনুপস্থিতি। সেই চিরচেনা ড্রিবলিং বলতে গেলে দেখাই যায়নি। তারপরও অবশ্য শিষ্যের পক্ষে দাঁড়ালেন সাম্পাওলি। আর্জেন্টাইন কোচ বলেন, দলের অন্য খেলোয়াড়রা মেসির জন্য ঠিকমতো বলের জোগান দিতে পারেনি। সাম্পাওলি যাই বলুন না কেন, সর্বকালের সেরা হতে গেলে সবসময় পাসের জন্য অপেক্ষা করে থাকলে চলে না।
আর্জেন্টিনার প্রিমেরা ডিভিশনের দল তাইগ্রের কোচ লোমবার্দির দাবি অবশ্য বিস্ময়কর। তার বক্তব্য, ‘মনে হচ্ছে মেসি ইচ্ছে করেই খারাপ খেলেছে।’ এ কথায় বাড়াবাড়ি থাকলেও কিছু পরিসংখ্যান চোখ কপালে তোলার মতোই। প্রথমার্ধে মেসির চেয়ে (২০) আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক উইলি কাবায়েরোই (২২) বেশিবার বল ধরেছেন। ধারাভাষ্যকারেরাও বলেছেন, ম্যাচের প্রথমার্ধে ক্রোয়াট পেনাল্টি বক্সের মধ্যে মেসিকে বল ধরতে দেখা যায়নি। প্রথম ম্যাচে আইসল্যান্ডের গোলপোস্টে ১১টি শট নিয়েছিলেন মেসি। কিন্তু কাল ক্রোয়েশিয়ার পোস্টে মেসি শট নিয়েছেন মাত্র ১টি!
মেসির এই মৌসুমের হতাশাজনক পারফরমেন্সের অনেক কারণ থাকতে পারে, যেগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছেন বিবিসির ক্রীড়া সাংবাদিকরা।
শারীরিকভাবে ক্লান্ত
২০১৭-১৮ ইউরোপীয় মৌসুমে ৫৪টি ম্যাচ খেলেছেন মেসি, ২০১৪-১৫ মৌসুমের পর যা সর্বোচ্চ। গত মৌসুমে মোট ৪৪৬৮ মিনিট খেলেছেন তিনি আর গড়ে প্রতি ম্যাচে ৮২.৭ মিনিট মাঠে ছিলেন। মৌসুম শেষে বার্সেলোনার হয়ে ৪৫টি গোল আর ১৮টি অ্যাসিস্ট করেন মেসি।
ছোট একটি ইনজুরিতে ভুগছেন তিনি
২০১৮’র এপ্রিলে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের সূত্রের বরাত দিয়ে দেশটির পত্রিকা ক্লারিন প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে ডান পায়ের উরুর মাংসপেশিতে সামান্য চোট রয়েছে মেসির, যার কারণে দৌড়ানো ও গতি পরিবর্তন করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে তার। বিশ্বকাপের আগে ইতালি আর স্পেনের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে মেসি না খেললে বিষয়টি আলোচনায় আসে।
আর্জেন্টিনা দলের বাজে পারফরমেন্স
রাশিয়া বিশ্বকাপের দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বে আর্জেন্টিনার পারফরমেন্স ছিল দারুণ হতাশাজনক। নানা সমীকরণ শেষে বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলা নিশ্চিত করতে সক্ষম হয় তারা। বাছাইপর্বে সাত গোল করে মেসি আর্জেন্টিনার সর্বোচ্চ স্কোরার হলেও সমর্থক ও গণমাধ্যমের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয় তাকে। গত বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা ফাইনাল খেললেও তাদের শেষ বিশ্বকাপ বিজয় ছিল ১৯৮৬ সালে। ২০০৪ আর ২০০৮ এ পরপর দু’বার অলিম্পিক শিরোপা জিতলেও, ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকার পর গত ২৫ বছরে কোনো মেজর টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারেনি তারা।
রোনালদোর সঙ্গে তুলনার মানসিক চাপ
গত প্রায় এক দশক ধরে বিশ্ব ফুটবলে মেসির একমাত্র তুলনা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। এবারের বিশ্বকাপে মেসির ঠিক বিপরীত ফর্মে রয়েছেন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। স্পেনের বিপক্ষে দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিক করে রোনালদোর রাশিয়া বিশ্বকাপ শুরু হয় যেখানে ফ্রিকিক থেকে নেয়া রোনালদোর তৃতীয় গোলটি বিশ্বকাপের ইতিহাসের অন্যতম স্মরণীয় গোলগুলোর একটি হয়ে থাকবে। দ্বিতীয় ম্যাচেও রোনালদোর একমাত্র গোলেই মরক্কোকে হারায় পর্তুগাল। এবারের টুর্নামেন্টে রোনালদো যেখানে অপ্রতিরোধ্য ফর্ম প্রদর্শন করছেন, সেখানে পুরো আসরে মেসির বলার মতো মুহূর্ত বলতে আইসল্যান্ডের সঙ্গে পেনাল্টি মিস। আর মেসি যা এখনো করতে পারেননি দু’বছর আগে ইউরো ২০১৬ তে দলকে শিরোপা জিতিয়ে তাই করে দেখিয়েছেন রোনালদো।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর