সিঙ্গাপুর বৈঠকের মাত্র ১০ দিন পাড় হয়েছে। এরই মধ্যে সুর পাল্টে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের। তিনি ১০ দিন আগে উত্তর কোরিয়াকে আর কোনো পারমাণবিক হুমকি মনে করেন না বলে টুইট করেন। কিন্তু নতুন করে আবার বললেন উত্তর কোরিয়া এখনও ব্যতিক্রমধর্মী এক হুমকি (এক্সট্রাঅরডিনারি থ্রেট)। শুধু তাই নয়। পাশাপাশি দেশটির বিরুদ্ধে নতুন করে অবরোধ আরোপ করলেন। উল্লেখ্য, ১২ই জুন তিনি সিঙ্গাপুরে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে। বৈঠক শেষে বলা হয়, কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চলে পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত করতে রাজি হয়েছেন কিম।
তার ফলশ্রুতিতে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়া তাদের আরো দুটি সামরিক প্রশিক্ষণ বাতিল করার ঘোষণা দেয়। তারপর কেন ট্রাম্প এমন পদক্ষেপ নিলেন? পেন্টাগন বলছে, এর লক্ষ্য হলো কূটনৈতিক সমঝোতা প্রক্রিয়াকে সমর্থন দেয়া। আগামী আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ সামরিক মহড়া দেয়ার কথা ছিল। সেই মহড়াও স্থগিত করার ঘোষণা দেয়া হয়েছে প্রায় এক সপ্তাহ আগে। মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে বার্ষিক যুদ্ধ যুদ্ধ গেম খেলা বন্ধ করারও প্রতিশ্রুতি দিয়ে গেছেন ট্রাম্প ওই কিম জং উনের কাছে। তিনি এমন যুদ্ধ যুদ্ধ খেলাকে প্ররোচণামুলক ও ব্যয়বহুল হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। এমন ঘোষণা অনেকের কাছেই হতাশাজনক শুনিয়েছিল। কারণ, এর আগে যুক্তরাষ্ট্র বলেছিল ওই মহড়া হলো নিরেট প্রতিরক্ষার জন্য। আর এক্ষেত্রে তাদের মূল সামরিক জোট হলো সিউল। ট্রাম্প কি এখন তাহলে তার সুর পাল্টে ফেলেছেন। বিবিসি লিখেছে, তেমনই মনে হচ্ছে। ২০০৮ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের একটি জাতীয় জরুরি অবস্থান রয়েছে। তারপর থেকে নিয়মিতভাবে অবস্থান পরিবর্তন, পরিবর্ধন করছেন প্রেসিডেন্ট। কোরিয়া উপদ্বীপ অঞ্চল থেকে পারমাণবিক অস্ত্রের ঝুঁকি ও অস্তিত্ব রয়েছে এবং উত্তর কোরিয়া সরকারের নীতির কারণে শুক্রবার থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ‘ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি’ বৃদ্ধি করেছেন ট্রাম্প। কংগ্রেসের কাছে এ মর্মে একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন তিনি। তাতে বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্র নীতি ও অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক ও ব্যতিক্রমী হুমকি সৃষ্টি করছে এসব ঘটনা। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ডেমোক্রেটরা। তারা বলছেন, ট্রাম্প একেক সময় এক এক রকম কথা বলছেন। তিনি সিঙ্গাপুর সামিট শেষে বলেছিলেন সেখানে ব্যাপক সফলতা পেয়েছেন। তারপরই ১৩ই জুন তিনি মার্কিনিদের উদ্দেশে বলেছিলেন, মার্কিনিরা রাতে সুন্দরভাবে ঘুমাতে পারবে। এর অর্থ এমন হতে পারে যে, উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের বশে এসেছে। তারা পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত হতে রাজি হয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আর কোনো ভয় নেই। সিনেটে ডেমোক্রেট দলের নেতা চাক শুমার বলেছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিবৃতি বা বক্তব্য তার গত কয়েক সপ্তাহের কথার গুরুত্বকে কমিয়ে দিয়েছে। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে যে সমঝোতা হওয়ার কথা বলা হয়েছে তাকে একটি ফটো শুট হিসেবে না দেখে একে আরো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত আমাদের। বলা হয়েছে উত্তর কোরিয়া সমস্যা সমাধান হয়ে গেছে। আসলে তা হয় নি।