× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান থেকে যেভাবে রক্ষা পেলো মিয়ানমার

বিশ্বজমিন

মানবজমিন ডেস্ক
(৫ বছর আগে) জুন ২৪, ২০১৮, রবিবার, ৮:০০ পূর্বাহ্ন

মিয়ানমারে শীর্ষ বেসামরিক নেত্রী স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি ও সামরিক কমান্ডার সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইয়ের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বা পিসমেকার হিসেবে কাজ করলেন জাতিসংঘের একজন দূত। রাখাইন পরিস্থিতি কীভাবে সরকার মোকাবিলা করছে এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত নেয়ার বিষয়ে জাতিসংঘের ভূমিকা নিয়ে দু’সপ্তাহ আগে শীর্ষ স্থানীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠক হয়। সেখানেই সুচির সঙ্গে সেনাপ্রধানের ওই সংঘাতময় অবস্থার সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে তাদের মধ্যে উত্তেজনার পারদ উপরেই উঠছিল। এমন উত্তেজনাকর সময়ে, মিয়ানমার বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূত সুইজারল্যান্ডের কূটনীতিক ক্রিস্টিন শ্রানার বার্গেনার প্রথম সফরে আসেন। তার এই প্রথম সফর শেষ হয় বৃহস্পতিবার। এ সময়ে তিনি মিয়ানমারের মূল নেতানেত্রীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এর মধ্যে রয়েছেন স্টেট কাউন্সেলর অং সান সুচি ও সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইং।
সফরে তিনি বিস্তারিত বিষয়ে আলোচনা করেন। খোলামেলা কথা বলেন। এর ফলে মিয়ানমারের রাজনীতিতে এ সময়ের প্রধান দুই নায়ক অং সান সুচি ও মিন অং হ্লাইংয়ের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়ক হয়। ক্রিস্টিন শ্রানার বার্গেনার এ সময়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের মধ্যে গঠনমূলক সম্পর্কের একটি ভিত্তি রচনা করেন। ব্যাংকক পোস্টে প্রকাশিত বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিসের সাবেক নিউজ এডিটর ও মিয়ানমার বিশেষজ্ঞ ল্যারি জাগানের লেখায় সেই চিত্র ওঠে এসেছে। গত ২৫শে আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইনে নিরাপত্তা রক্ষাকারীদের ওপর হামলা চালায় আরাকান রোহিঙ্গা সালভেশন আর্মি (আরসা)। এতে কয়েকজন নিরাপত্তা রক্ষী নিহত হন। এর বদলা নিতে সেনাবাহিনী ও তার দোসররা রাখাইনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর জঘন্য নৃশংসতা চালায়। সেই নৃশংস অভিযানের সময় যেসব মানবাধিকার লঙ্ঘিত হয়েছে তা তদন্তের জন্য সরকার একটি কমিশন ঘোষণা দেয়। এর নাম দেয়া হয় ‘ন্যাশনাল কমিশন অব ইনকোয়ারি’। এ কমিশন ঘোষণার পর পরই অনুষ্ঠিত হয় ওই বহুল আলোচিত নিরাপত্তা বিষয়ক সভা। এ ছাড়া জাতিসংঘের দুটি এজেন্সির সঙ্গে মিয়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন, তাদের পুনর্বাসন ও রাখাইনের উন্নয়ন বিষয়ে এর দু’দিন আগে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে। যদিও ওই সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত প্রকাশ করা হয় নি। তবে তা নিয়ে এরই মধ্যে সেনাবাহিনী, স্থানীয় আরাকান জনগোষ্ঠীর মধ্যে সন্দেহ, সংশয় দেখা দিয়েছে। রাখাইনের জনগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হবে এমন আতঙ্কে ওই সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত এখনো সরকার গোপন রেখেছে। তবে সামনের কয়েক দিনের মধ্যে এর বিস্তারিত প্রকাশ পাবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, জাতিসংঘের ওই দূত অং সান সুচির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন। তিনি তাকে আশ্বস্ত করেছেন, যদি সমঝোতা স্মারকের বিস্তারিত গোপন রাখা হয় তাহলে তাতে উল্টো ফল আসতে পারে। কিন্তু কেন এই সমঝোতা স্মারক নিয়ে বেসামরিক সরকার ও সেনাবাহিনীর মধ্যে বিবাদ? এর প্রধান কারণ হলো তদন্তে কমিশন গঠন করা ও তাতে বিদেশি বিশেষজ্ঞদের অংশগ্রহণ। কমান্ডার ইন চিফের সঙ্গে যোগাযোগ আছে এমন একজন সাবেক সিনিয়র সামরিক কর্মকর্তা ব্যাংকক পোস্টকে বলেছেন, এ বিষয়টি সেনাবাহিনীর জন্য পুরোপুরি অবজ্ঞামূলক। এটা একটা চূড়ান্ত রেখা। একে অতিক্রম করা যাবে না। তিনি কথাগুলো বলছিলেন জোরালোভাবে। নিরাপত্তা বিষয়ক ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অং সান সুচি ও মিন অং হ্লাইং। সেখানে সেনা কমান্ডার কড়া ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সেনাবাহিনীর শীর্ষ স্থানীয় কর্মকর্তা বা কর্মকর্তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে এমন বেশকিছু সূত্রের মতে, ওই সময় সেনা কমান্ডার সামরিক অভ্যুত্থানের হুমকিও দেন। ওই বক্তব্যে ওই সেনা কমান্ডার অং সান সুচিকে উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, যদি আপনার সরকার পরিস্থিতি সামাল দিতে না পারে তাহলে সেনাবাহিনী ক্ষমতা নেবে, যেমনটা সংবিধানে বলা আছে। তবে ওই ক্ষমতা নেয়া বলতে সেনা কমান্ডার শুধু রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার হুমকি দিয়েছেন নাকি পুরো দেশের ক্ষমতা দখলের হুমকি দিয়েছেন তা স্পষ্ট নয়। মিয়ানমারের সংবিধান সেনাবাহিনীকে সেই অধিকার দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সেনা কমান্ডার যদি মনে করেন দেশের নিরাপত্তা হুমকিতে তাহলে সংবিধান অনুযায়ী তারা জাতীয় অথবা রাজ্য পর্যায়ে প্রশাসনিক ক্ষমতা নিতে পারে। প্রকৃতপক্ষে ২০১২ সালে রাখাইনের নিয়ন্ত্রণ কিন্তু নিয়ে নিয়েছিল সেনাবাহিনী। তাতে সম্মতি দিয়েছিলেন তখনকার ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন।
ওই নিরাপত্তা বৈঠক শেষ হয় দ্রুততার সঙ্গে। এতে দু’পক্ষই সংঘাতময় অবস্থানের জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকে। বড় বড় শহরের ফ্রন্টলাইন থেকে সেনাদের তলব করে ফেরত পাঠানো হয় মূল ব্যারাকে। রাখাইন ছাড়া সব সীমান্ত অঞ্চলে অপারেশন স্থগিত করে দেয়া হয়। রাজধানী ন্যাপিডতে যে বড় কোনো সংঘাত হতে যাচ্ছে তারই ইঙ্গিত ফুটে ওঠে এতে। সেনাবাহিনীর শীর্ষ কমান্ডারকে উপদেশ দেন এমন সাবেক একজন সেনা কর্মকর্তা বলেন, তাদের কাজ সমাধান করতে কয়েক মাস সময় লাগবে। কিন্তু তার আগে সেনাবাহিনীকে প্রস্তুত হতে হবে। মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে ডাকা হয় তাতমাডা নামে। সর্ব উত্তরে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি নিয়ন্ত্রিত এলাকা থেকে প্রথম ব্রিগেড সেনা সদস্যদেরকে প্রত্যাহার করা হয়। সেখানে তাদের কর্মকা- বন্ধ রাখা হয়। তবে ভারি বৃষ্টির কারণেও এমনটা করা হয়ে থাকতে পারে। ভারি বৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী লড়াইয়ের ময়দানে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সাধারণত তাদের অপারেশন বন্ধ রাখে। এমনটা বলেছেন ওই এলাকায় সেনা গোয়েন্দা বিষয়ক বেশকিছু সূত্র।
তবে যাই হোক, বেসামরিক ও সামরিক কর্তৃপক্ষের মধ্যে এই যে দ্বন্দ্বের সূচনা হয়েছে তা শীতল হয়েছে জাতিসংঘের ওই দূতের হস্তক্ষেপে। এ সপ্তাহের শুরুতে তিনি সেনাপ্রধান মিন অং হ্লাইংয়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। এ সময়ে তিনি জাতীয় মানবাধিকার বিষয়ক তদন্তে বিদেশিদের অংশগ্রহণের বিষয়ে সম্মতি দিয়েছেন। সেনাপ্রধানের দিক থেকে এটা উল্লেখযোগ্য একটি ছাড়। তবে অবশ্যই এর অর্থ এই নয় যে, এই কমিশন একেবারে নির্ভেজাল অনুমতি পাচ্ছে। যেমনটা থাইল্যান্ডের সাবেক উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুরাকিয়ার্ট সাথিরাথাই বলেছিলেন। ডিসেম্বরে মিয়ানমার সরকার একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করেছিল তাকে চেয়ারম্যান করে। উদ্দেশ্য ছিল দেশের পশ্চিমাঞ্চলে পুনরেকত্রীকরণ, উন্নয়নে আন্তর্জাতিক সম্পৃক্ততা বৃদ্ধি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর