× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

চট্টগ্রামে লোডশেডিংয়ের মূলে ‘জরাজীর্ণ লাইন’

বাংলারজমিন

ইব্রাহিম খলিল, চট্টগ্রাম থেকে
২৪ জুন ২০১৮, রবিবার

বিদ্যুৎ লোডশেডিংয়ের কবল থেকে রেহাই মিলছে না চট্টগ্রামবাসীর। এই আছে তো এই নেই বিদ্যুৎ। ঘণ্টাখানিক বিদ্যুৎ যে এলাকায় থাকে সে এলাকায় শোনা যায় বোমা বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ। আসলে সেটি বোমা নয়, বিস্ফোরণ ঘটছে ট্রান্সফরমারের।
শুধু তাই নয়, বিদ্যুৎ লাইনের কোথাও না কোথাও ঘটছে আগুন লাগার ঘটনাও। আর এসব মেরামতে দিন যায় বিদ্যুৎ সরবরাহ লাইনে নিয়োজিত কর্মচারীদের। তাও আবার কর্মচারী সংকট ও ট্রান্সফরমারের ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবিকৃত টাকা না পেলে মেরামত হয় না। এতে দীর্ঘ সময় এমনকি দিন-রাত কোনো কোনো এলাকা ডুবে থাকে অন্ধকারে।

আর এসব সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়ার অজুহাতে থেমে থেমে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে চট্টগ্রাম মহানগর জুড়ে। ফলে কোনোমতেই বিদ্যুতের লোডশেডিং থেকে রেহাই মিলছে না চট্টগ্রামবাসীর। ঘন ঘন বিদ্যুৎ লোডশেডিং সম্পর্কে জানতে গিয়ে এমন তথ্য দিয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
পিডিবি’র চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বিদ্যুৎ সরবরাহে নাজুক অবস্থার কথা স্বীকার করে বলেন, বিতরণ লাইন ও যন্ত্রপাতিসমূহ অনেকদিনের পুরনো হওয়ায় ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই লাইন ও উপকেন্দ্রসমূহ ওভারলোডেড এবং যন্ত্রপাতিসমূহ আন্ডার রেটেড হয়ে আছে। গড়ে উঠেছে অনেক নন স্ট্যান্ডার্ড লাইন। অন্যদিকে বেড়েই চলেছে গ্রাহকের সংখ্যা ও চাহিদা।
তিনি বলেন, প্রতিবছর গড়ে ১০ শতাংশ হারে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির ফলে এ অঞ্চলের পুরো বিতরণ ব্যবস্থার পুনর্বাসন, সমপ্রসারণ ও বর্ধিতকরণ জরুরি হয়ে পড়েছে। যা অনুধাবন করে পিডিবি প্রায় এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। প্রকল্পের আওতায় কিছু কিছু জায়গায় সঞ্চালন লাইন সংস্কার চলছে। প্রায় তিন বছরে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। তিনি জানান, চট্টগ্রামে জরাজীর্ণ লাইনের কারণে বছরের পর বছর বিদ্যুৎ লোডশেডিং চলছে। গত ৯ বছরে বিদ্যুৎ উৎপাদন দ্বিগুণ বাড়লেও সুফল পাচ্ছে না গ্রাহকরা। বরং নিয়মিত লোডশেডিংয়ের যন্ত্রণা পোহাচ্ছে অধিকাংশ এলাকার মানুষ।
গ্রাহকদের ভোগান্তি সম্পর্কে জানতে চাইলে পিডিবি, চট্টগ্রামের সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, বর্তমানে চট্টগ্রামে গড়ে ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং হচ্ছে। কয়েকবছর বছর আগের তুলনায় একে লোডশেডিং বলা যায় না।
তিনি বলেন, বর্তমানে বিদ্যুতের আসা-যাওয়া লোডশেডিংয়ের জন্য হচ্ছে না। এটি হচ্ছে মূলত: উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি সঞ্চালন লাইনের সক্ষমতা বৃদ্ধি না করায় ওভারলোডেড হয়ে গ্রিড অকার্যকর হওয়ার কারণে।
তিনি বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়লেও সঞ্চালন লাইনে লোড নেয়ার সক্ষমতা রয়ে গেছে ১০ বছর আগের চাহিদা অনুযায়ী। একে সময়োপযোগী করা দরকার।
পিডিবি’র কর্মকর্তারা বলছেন, তিন দশক আগের জরাজীর্ণ বিতরণ লাইন নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যে কোনো এলাকায় ঘণ্টার চেয়ে বেশি বিদ্যুৎ সরবরাহ করলে ট্রান্সফরমার বিস্ফোরণ ঘটে। এমনকি লাইনের কোথাও কোথাও আগুন লেগে যায়।
পিডিবি’র আগ্রাবাদ বিতরণ কার্যালয়ের অদূরে একটি শিপিং প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা শাহীদুল আলম বলেন, আধাঘণ্টা পরপর প্রতিদিন লোডশেডিং করা হচ্ছে। শুধু শুনি ট্রান্সফরমার বিকল হয়ে গেছে। ট্রান্সফরমার মেরামতের জন্য টাকা দিতে হবে। এ নিয়ে অভিযোগ করেও প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না।
আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকায় অবস্থিত এক গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠানের বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে বিকল্প বিদ্যুতের (জেনারেটর চালাতে) ব্যবস্থা করতে প্রতিদিন ৩/৪ হাজার টাকার ডিজেল কিনতে হচ্ছে। ট্রান্সফরমার একবার বিকল হলে ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত গ্রাহকদের দিতে হয়।
অভিযোগ রয়েছে, পিডিবি’র সুযোগসন্ধানী কর্মকর্তারা ট্রান্সফরমার মেরামত করার নামে বড় অংকের টাকা দাবি করে। অজুহাত হিসেবে এই খাতে সরকারের কোনো বরাদ্দ নেই বলে জানায়। দাবিকৃত টাকা না পেলে ট্রান্সফরমার মেরামতের জন্য না নিয়ে ফেলে রখে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রাম পিডিবি’র একজন নির্বাহী প্রকৌশলী ট্রান্সফরমার মেরামতে টাকা আদায়ের কথা স্বীকার করে বলেন, বিকল ট্রান্সফরমার মেরামত করার জন্য নগরীর মনসুরাবাদের কারখানায় নিয়ে যেতে ক্রেন ও গাড়ি বাবদ কমপক্ষে পাঁচ থেকে ৮/১০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ এই খাতে আমাদের কোনো বরাদ্দ নেই। পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় ট্রান্সফরমার খোলা ও নিয়ে যাওয়ার জন্য যারা কাজ করেন তাদের পারিশ্রমিক দেবো কোথা থেকে। তাই সংশ্লিষ্ট এলাকার দায়িত্বরত পিডিবি কর্মকর্তাকে এসব আনুষঙ্গিক খরচের টাকা বহনের জন্য গ্রাহকদের দ্বারস্থ হওয়া ছাড়া উপায় থাকে না। পিডিবি’র সিনিয়র সহকারী পরিচালক (জনসংযোগ) মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, এ ধরনের অভিযোগ আমরা মাঝে-মধ্যে পেয়ে থাকি। তবে আমি আমার এলাকার কর্মকর্তাকে সাবধান করে দিয়েছি, যা-ই করো যাতে গ্রাহকরা অসন্তুষ্ট না হন সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে। পিডিবি’র হিসেব মতে, চট্টগ্রামের ১৩টি বিদ্যুৎকেন্দ্রে বর্তমানে দৈনিক গড়ে সাড়ে ৯০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়ে থাকে। আর এখানকার বিদ্যুৎ চাহিদা সাড়ে ৮০০ মেগাওয়াট। চাহিদার অতিরিক্ত ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরও বর্তমানে চট্টগ্রামে গড়ে ২০ থেকে ২৫ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম বিতরণ অঞ্চলের অধীনে বর্তমানে ৩৩ কেভিএ’র লাইন রয়েছে এক হাজার ৩৮৫ দশমিক ৫ কিলোমিটার, ১১ কেভিএ লাইন রয়েছে ৩ হাজার ২৩১ দশমিক ৩ কিলোমিটার এবং ৪ হাজার ১৯৫ দশমিক ৯৫ কিলোমিটার দশমিক ৪ কেভিএ লাইন রয়েছে। কিন্তু এসব বিতরণ লাইন তিন দশকের পুরনো। নবায়ন না করায় এসব বিতরণ লাইন ইতোমধ্যে জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে।
পিডিবি’র এক পরিসংখ্যানে বলা হয়, ২০১৫-১৬ সালে চট্টগ্রাম থেকে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সঞ্চালিত হয়েছে ২৬৫ কোটি ইউনিটের মতো। ২০১৬-১৭ সালে সঞ্চালিত হয়েছে ৪৬০ কোটি ইউনিটেরও বেশি। কিন্তু সঞ্চালন লাইন ওভারলোডেড ও নাজুক হওয়ায় গ্রিড অকার্যকর হওয়ার ঘটনা ঘটছে। এতে লোডশেডিং এর যন্ত্রণায় ভুগছেন নগরবাসী।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর