সাঁথিয়ায় তানজিলা (১৯) নামে একজন গৃহবধূর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় জল্পনা-কল্পনা নানামুখী গুঞ্জন শুরু হয়েছে। পরিবারের দাবি, তাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দিয়েছে পাষণ্ড স্বামী। ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার দাড়ামুদা গ্রামে।
থানা ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৮-৯ মাস আগে উপজেলার নন্দনপুর ইউনিয়নের দাড়ামুদা গ্রামের বোনু ব্যাপারীর ছেলে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে পার্শ্ববর্তী ধোপাদহ ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামের দিনমজুর আ. হাকিমের কন্যা তানজিলার বিয়ে হয়। সুখেই চলছিল তাদের সংসার। মেয়ের সুখের জন্য পিতা অনেক কষ্টের মাঝেও গয়না, খাট-তোষক দিয়েছিলেন। ১৬ই জুন ঈদে তানজিলাকে স্বামী জাহাঙ্গীর বাবার বাড়িতে আসতে না দেয়ায় তাদের মধ্যে ঝগড়া হয়। ঈদের পরদিন বিকালের দিকে তানজিলা তার ঘরে ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যা করে।
তানজিলার বড় বোন মর্জিনা খাতুন বলেন, নানা-নানিকে নিয়ে ঈদের পরের দিন বিকালের দিকে তানজিলাকে আনার জন্য তার শ্বশুর বাড়িতে যান। তানজিলাকে না দেখে ডাকাডাকি করে তার ঘরের দরজা খুলে দেখি সে গলায় ফাঁস নিয়ে ঝুলছে। তার চোখের কোণে কালো দাগ, ডান হাতের আঙুল ভাঙা, শরীরে কোনো গয়না ছিল না। এমনকি নাক ফুলও না। তার দাবি, তানজিলাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে লাশ ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। এ প্রতিবেদকসহ সাঁথিয়া প্রেস ক্লাবের কয়েকজন সাংবাদিক আ. হাকিমের বাড়িতে গেলে তানজিলার নিকটতম স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। তানজিলার মৃতদেহ গোসল করানো কুলসুম (৪০), বিমলা খাতুন (৪২), আনোয়ারা খাতুন (৪৭) সাংবাদিকদের বলেন, তানজিলার বাম চোখে আঘাতের কালো দাগ ও ডান হাতের আঙুলগুলোতে আঘাতের দাগ দেখা গেছে। তানজিলার মা শিল্পী খাতুন কান্নায় বারবার মূর্ছা যান। তার দাবি তানজিলাকে হত্যা করে গলায় ফাঁস দিয়ে ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ধোপাদহ ইউনিয়নের সংরক্ষিত সদস্য জয়নব খাতুন বলেন, তানজিলা ধৈর্যশীল, ভদ্র ও ভালো মেয়ে ছিল। সুষ্ঠু তদন্ত করে বিচার দাবি করেন তিনি। জাহাঙ্গীরের মামা নন্দনপুর ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আ. হামিদ বলেন, তার ভাগ্নে বউ তানজিলা ভালো ও সাংসারিক ছিলেন।
সে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে ন্যায়বিচার দাবি করেন। সাঁথিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) আ. মজিদ বলেন, প্রাথমিকভাবে ইউডি মামলা হয়েছে। লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের ওপর নির্ভর করছে এ মামলা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, জাহাঙ্গীরকে তার স্ত্রী তানজিলার দাফনের সময় দেখা যায়নি। স্ত্রীর দাফনে স্বামী না থাকার হেতু কী- এই নিয়ে এলাকায় নানা গুঞ্জন শুরু হয়েছে। প্রান্তিক কৃষক আ. হাকিম কি পাবেন কন্যা তানজিলার মৃত্যুর সুষ্ঠু বিচার? নাকি বিচারের বাণী নিভৃতে কাঁদবে- এ প্রশ্ন সাধারণের।