চ্যাম্পিয়নের দৌড়ে থাকতে হলে ব্রাজিলকে চাপ কমাতে হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও গোলরক্ষক আমিনুল হক । তিনি বলেন, রাশিয়া বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত চাপ কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ব ফুটবলের পরাশক্তি ও ফেভারিট ব্রাজিল। প্রথম ম্যাচে ভালো খেললেও প্রত্যাশিত ফল আসেনি। দ্বিতীয় ম্যাচে জয় এসেছে সত্যি কিন্তু অপেক্ষা করতে হয় অতিরিক্ত সময় পর্যন্ত। ব্রাজিল দলের জন্য এত অপেক্ষা অপ্রত্যাশিত। যদিও কোস্টারিকার গোলরক্ষক এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা গোলরক্ষকদের একজন। কিন্তু ম্যাচজুড়ে ব্রাজিলের আক্রমণভাগের সুযোগ মিসের মহড়া ছিল অসহনীয়। ব্রাজিল বিশ্বকাপ হেক্সা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে রাশিয়া গেছে।
প্রথম দুই ম্যাচে ভালো খেললেও এখন পর্যন্ত তারা চাপ মুক্ত হতে পারেনি। প্রত্যাশিত লক্ষ্য এচিভ করতে গেলে তাদের সে চাপ কাটিয়ে উঠতে হবে। আগামী ম্যাচে সার্বিয়াকে দ্রুত গোল দিয়ে নিজেদের এগিয়ে যেতে হবে। আশার বিষয় হচ্ছে, নেইমার গোল পাওয়ায় ও পরপর দুই ম্যাচে কুটিনহো দলকে এগিয়ে নেয়ায় স্বস্তির হাওয়া বইছে ব্রাজিল শিবিরে। নিজের সময়ে এশিয়ার সেরা গোলকিপার আমিনুল বলেন, বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম পরাশক্তি ও ফেভারিট আর্জেন্টিনা সারা বিশ্বের শত কোটি সমর্থককে হতাশ করেছে। দ্বিতীয় রাউন্ডে যেতে এখন তাদের সামনে যে কঠিন সমীকরণ তা উতরানো বেশ কঠিন। নাইজেরিয়ার বিপক্ষে তাদের বড় ব্যবধানে জিততে হবে। উজ্জীবিত নাইজেরিয়ার বিপক্ষে সেটা সম্ভব হবে কিনা সংশয় আছে। কারণ আর্জেন্টিনা এখন সর্বক্ষেত্রেই বিপর্যস্ত একটি দল।
আজকের ম্যাচগুলো নিয়ে ধারণা করতে গিয়ে আমিনুল বলেন, আজ জাপানের তথা এশিয়ার এগিয়ে যাওয়ার দিন। জাপান ও সেনেগাল দুই দলই প্রথম ম্যাচ জয় পেয়েছে। কিন্তু জাপানকে আমার কাছে অনেক ব্যালেন্সড মনে হয়েছে। তাদের মধ্যে অস্থিরতা কম। প্রথম ম্যাচে তারা দারুণ পজিশনাল ফুটবল খেলেছে। যার কারণে কলম্বিয়ার মতো বড় দলকে হারাতে বেগ পেতে হয়নি। বরং সেদিন সব সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হলে আরো বড় জয় নিয়ে মাঠ ছাড়াতে পারতো। সেনেগালের সঙ্গে ম্যাচে জাপানের গোলকিপার ও ডিফেন্সকে আরেকটু সতর্ক হতে হবে। এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে জাপান অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলেই আমার বিশ্বাস। অন্যদিকে পোল্যান্ড ও কলম্বিয়া দুইটি সমশক্তির দল। দুই দলই প্রথম ম্যাচ হেরেছে। তারা মরিয়া হয়ে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে চাইবে। তবে সার্বিকভাবে আমার দৃষ্টিতে কলম্বিয়া বেটার টিম। দিনের অন্য ম্যাচে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে আছে ইংল্যান্ড। পানামার মতো নতুন দলকে ম্যাচে উড়িয়ে দিতে ইংল্যান্ডের অধিনায়ক হ্যারিকেন একজনই যথেষ্ট। তাদের তারকা স্টারলিংকে ভুলে গেলে চলবে না। ইংল্যান্ড দ্রুতগতির ফুটবল খেলে। তারা ম্যাচের প্রথম অর্ধেই ফলাফল নিশ্চিত করতে চাইবে। অন্যদিকে ডিফেন্স ঠিক রেখে কাউন্টার অ্যাটাকে খেলার সম্ভাবনা রয়েছে পানামার।
আমিনুল বলেন, বেলজিয়ামের বর্তমান দলটিকে বলা হয় গোল্ডেন জেনারেশন। প্রথম ম্যাচেই পানামার সঙ্গে দাপটের সঙ্গে জিতেছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তিউনিশিয়াকে দাঁড়াতেই দেয়নি। বেলজিয়ামের লুকাকো দুই ম্যাচে চার গোল করে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে এখন গোল্ডেন বুটের লড়াইয়ে কাঁধ মিলিয়েছেন। বেলজিয়াম দলটি অনেকদূর যাবে এমন বিশ্বাস রাখাই যায়। দিনের অন্য ম্যাচে কোরিয়ার বিপক্ষে মেক্সিকো একটি ব্যালেন্সড দল। তারা জার্মানির মতো পরাশক্তি ও ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছে। ফিজিক্যালি তারা অনেক এগিয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচেই মেক্সিকোর দ্বিতীয় রাউন্ড নিশ্চিত হওয়া স্বাভাবিক। অন্যদিকে জার্মানি-সুইডেন ম্যাচটি হবে জটিল। প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়া জার্মানির সামনে বিজয় ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। অন্যদিকে সুইডেন প্রথম ম্যাচে জিতে এগিয়ে আছে। সুইডেনের আক্রমণভাগটা দুর্দান্ত না হলেও ডিফেন্স অনেকটাই প্রাচীরের মতো। জার্মানিকে টিকে থাকতে এবং সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সে প্রাচীর ভাঙতেই হবে। অবশ্যই বার্লিন প্রাচীর ভাঙার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন জার্মানি সুইডেন ডিফেন্সের প্রাচীর ভাঙতে পারবে এ বিশ্বাস রাখতেই হয়।
অনুলিখন: কাফি কামাল