× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ স্থগিত

প্রথম পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
২৪ জুন ২০১৮, রবিবার

অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে মালয়েশিয়া। দেশটির দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে বলা হচ্ছে, দেশটিতে কর্মী প্রেরণে নিয়োজিত দশ এজেন্সির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এই অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে, গত দুই বছরে সিন্ডিকেটটি অন্তত ২০০ কোটি রিংগিত হাতিয়ে নিয়েছে। এ অভিযোগের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্থগিত থাকবে কর্মী নিয়োগ। দেশটির মানবসম্পদ মন্ত্রীকে উদ্ধৃতি দিয়ে শুক্রবার এ খবর  দিয়েছে মালয়েশিয়ার ইংরেজি সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইন। তবে কর্মী নিয়োগ স্থগিতের বিষয়টি অস্বীকার করেছে বাংলাদেশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। তারা বলছে, এ ব্যাপারে দেশটির পক্ষ থেকে অফিসিয়ালি কোনো ধরনের নোটিশ করা হয়নি। এমনকি কর্মী প্রেরণ অব্যাহত রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

স্টার অনলাইন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে,  বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় লোক পাঠাতে যেখানে মাথাপিছু দুই হাজার রিংগিত খরচ হওয়ার কথা, সেখানে এজেন্টরা বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার রিংগিত আদায় করছে। এর অর্ধেক টাকা যাচ্ছে ওই চক্রের হাতে, যার বিনিময়ে তারা ওয়ার্ক পারমিট ও উড়োজাহাজের টিকিটের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে।

প্রবাসী এক বাংলাদেশি ব্যবসায়ীর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগসাজশে শ্রমিকদের কাছ থেকে দুই বছরে অন্তত ২০০ কোটি রিঙ্গিত হাতিয়ে নিয়েছে। এ অভিযোগ ওঠার পর দেশটি কর্মী নেয়ার সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছে। মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রী এম কুলাসেগারানকে উদ্ধৃত করে দেশটির ইংরেজি সংবাদমাধ্যম স্টার অনলাইন জানিয়েছে, ওই চক্রের বিষয়ে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে। স্টার অনলাইনের অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই চক্রটি মালয়েশিয়া সরকারের ওপরের মহলে যোগসাজসের মাধ্যমে বাংলাদেশে এজেন্ট অনুমোদন দিয়ে একচেটিয়া কারবার গড়ে তুলেছে। এই প্রক্রিয়ায় ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত এক লাখের  বেশি বাংলাদেশি শ্রমিক মালয়েশিয়ায় গেছে। আরও অন্তত এক লাখ লোক মালয়েশিয়ায় যাওয়ার অপেক্ষায় আছে।

মালয়েশিয়ান মন্ত্রী বলেন, একটি চক্র শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়াকে মানবপাচারের মতো ব্যবহার করছে। তারা শ্রমিকদের শোষণ করছে। এ অভিযোগের পূর্ণ তদন্ত না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ প্রক্রিয়া স্থগিত থাকবে। এই অনিয়মের জন্য পূর্বের সরকারকে দোষারোপ করেন এম কুলাসেগারান। তিনি বলেন, পূর্ববর্তী প্রশাসন শ্রমিক নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে ব্যবসা করেছে। এতে লাভবান হয়েছে গুটিকয়েক ব্যক্তি। এটি পুরোপুরিভাবে একটি বিশৃঙ্খল প্রক্রিয়া। যার সুযোগ নিয়েছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। মূল সমস্যা চিহ্নিত করার চেষ্টা করছি। আশা করি, দ্রুতই একটি সমাধানে পৌঁছাতে পারবো। তত দিন পর্যন্ত সরকারিভাবে আবেদন প্রক্রিয়া চলবে।  

তিনি বলেন, মন্ত্রী বলেন, বিগত সরকারের সময়ে মানবসম্পদ আমদানির বিষয়টি পরিচালনা করা হয়েছে ব্যক্তিগত ব্যবসার কায়দায়, যাতে কেবল ব্যক্তিবিশেষই লাভবান হয়। বলেন, যেভাবে বাংলাদেশ থেকে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি নেয়া হচ্ছিল তাতে শ্রমিকদের কাছ থেকে মোটা অংকের বাড়তি অর্থ আদায় করা হচ্ছিল, আর তা যাচ্ছিল দুই দেশের কিছু দালালের পকেটে। স্টার অনলাইনকে কুলাসেগারান জানান, তার আগ পর্যন্ত মালয়েশিয়া সরকার পুরনো পদ্ধতিতে (জি টু জি) ফিরে যাবে, যাতে আবেদন প্রক্রিয়া চালু রাখা যায়।

একটি সূত্রের বরাত দিয়ে স্টার অনলাইন লিখেছে, ওই দশ এজেন্সির মধ্যে কয়েকটি ছিল রাতারাতি গজিয়ে ওঠা কোম্পানি। মালয়েশীয় চাকরিদাতা ও বাংলাদেশি শ্রমিকদের মধ্যে দালালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়াই ছিল সেসব কোম্পানি গড়ে তোলার উদ্দেশ্য। এসব কোম্পানি শ্রমিকদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২০ হাজার রিংগিত আদায় করে। অথচ দুই সরকারের চুক্তি অনুযায়ী বিমানভাড়াসহ সব মিলিয়ে এজেন্টের খরচ পড়ে দুই হাজার রিংগিতের কম।   

মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশি হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম এ বিষয়ে বলেন, এ ব্যাপারে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। তিনি বলেন, সংবাদটি দেখেছি, তিনি কোন প্রেক্ষাপটে বলেছেন তা আমাদের জানা নেই। তিনি বলেন, স্থগিত হলে তো আমাদের জানার কথা। হাইকমিশনার এর বেশি মন্তব্য করতে চাননি। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, বাংলাদেশের দশটি এজেন্সি এখন মালয়েশিয়ায় লোক পাঠায়। যারা কাজটি করে তারা প্রত্যেকেই বাংলাদেশে থাকে। মালয়েশিয়া স্টারের ওই প্রতিবেদনটি আমি পড়েছি। সেখানে যে প্রবাসী বাংলাদেশির কথা বলা হচ্ছে তার বিষয়ে কোনো তথ্য আমার জানা নেই। তিনি বলেন, আমার জানামতে এ ব্যাপারে অফিসিয়ালি কোনো চিঠি পায়নি। এছাড়া কর্মী প্রেরণ অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি জানান।

উল্লেখ্য, সরকারি হিসাবে পাঁচ লাখের বেশি নিবন্ধিত বাংলাদেশি দেশটিতে বিভিন্ন পেশায় কাজ করেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে দুই দেশের সরকারি পর্যায়ে (জি টু জি) পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি নিতে শুরু করে মালয়েশিয়া। কিন্তু ওই প্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ার ‘প্ল্যান্টেশন’ খাতে কাজ করতে আগ্রহীর সংখ্যা কম হওয়ায় সে সময় ভালো সাড়া মিল ছিল না। পরে মালয়েশিয়া জনশক্তির জন্য বাংলাদেশকে তাদের ‘সোর্স কান্ট্রির’ তালিকাভুক্ত করে। ফলে  সেবা, উৎপাদন, নির্মাণসহ অন্যান্য খাতেও বাংলাদেশি কর্মী নেয়ার সুযোগ তৈরি হয়।
মালয়েশিয়া সরকার তাদের পাঁচটি খাতে সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের সমন্বয়ে ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিতে রাজি হওয়ার পর ২০১৬ সালে ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি এই চুক্তির আওতায় লোক পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয় ওই দশটি জনশক্তি রপ্তানিকারক এজেন্সিকে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর