ঈদের আগের দিন ১৫ই জুন থেকে ভাঙনের শুরু। মাত্র ১০-১২ ঘণ্টার ব্যবধানে ৩৬টি দোকান রাক্ষুসি মনু নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেল। দোকান মালিকরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন নদীর তাণ্ডবলীলা। দোকানের মালামাল কিছুটা রক্ষা হলেও বেশির ভাগ ভেসে গেছে স্রোতের তোড়ে। ভাঙন এলাকা দ্রুত মেরামত করা না হলে সম্পূর্ণ বাজারটি এই বর্ষা মৌসুমে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের শতবর্ষীয় কাউকাপনবাজারের ব্যবসায়ীরা এভাবে মুন নদীর ভাঙনের বর্ণনা দেন। ২৪শে জুন সরজমিন কুলাউড়া থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন, পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদ ও মৌলভীবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র চক্রবর্তী কাউকাপনবাজারে মনু নদীর ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন। কাউকাপনবাজার ছাড়াও তারা একই ইউনিয়নের মন্দিরা, টিলাগাঁও ইউনিয়নের বালিয়া এবং শরীফপুর ইউনিয়নের তেলিবিল এলাকায় মনু নদীর সৃষ্ট ভাঙন এলাকা পরিদর্শন করেন।
সরজমিন কাউকাপনবাজারে গেলে ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পরিমল চন্দ্র দে, সেক্রেটারি মখলিছুর রহমান, ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক সাইফুল ইসলাম জানান, প্রায় ৫০ ফুট জায়গা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে কমপক্ষে ৩৬টি দোকান সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিশেষ করে পীযূষ দেবনাথ, ছুটই মিয়া ও রফিক মিয়ার ৩টি বড় মার্কেট নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ৩টি মার্কেটে ১৭টি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া হাবিবুল হোসেন, সাইফুল ইসলাম, হাজী হাবিবুর রহমান, সুরণ রায়, হাজী আব্দুল খালিক, হাজী আব্দুল গফ্ফার, জয়নাল মিয়া, আব্দুস শহীদ মিয়া, তোয়াব মিয়া ও হাজী আব্দুল খালিক কনা মিয়ার দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাঙন শুরু হওয়ার পর ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন। বেশির ভাগ মালামাল নদীর স্রোতে ভেসে গেছে। ৩৬টি দোকানে ব্যবষায়ীদের মোট ক্ষতির পরিমাণ কোটি টাকা ছড়িয়ে যাবে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ব্যবসায়ীরা ক্ষোভের সঙ্গে আরও জানান, বন্যা শুরু হওয়ার আগে পানি উন্নয়ন বোর্ড এই বাজার এলাকায় কিছু বাঁশ গেড়ে কয়েক বস্তা বালু দিয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্থান হিসেবে কাউকাপনবাজার এলাকায় কিছু কাজ করে। কিন্তু সীমান্তের ওপার থেকে আসা স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড়ি ঢল সেই প্রতিরক্ষা বাঁধটি মুহূর্তেই ভাসিয়ে নিয়ে যায়। সরকার এই বাজার থেকে প্রতি বছর রাজস্ব পেয়ে থাকে। ফলে এই বাজারটি রক্ষায় ব্লক দিয়ে দ্রুত মেরামতের দাবি জানান। নয়তো পুরো বাজারটি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আর এই কাউকাপন বাজার দিয়ে ভাঙন সৃষ্টি হলে হাজীপুরে ইউনিয়নের ৫-৬টি গ্রামসহ রাজনগর উপজেলার কামারচাক ইউনিয়ন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বর্তমানে বাজারে মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া পাকা সড়ক, বিদ্যুতের ৩টি খুঁটি এবং বিধান চন্দ্র দে, আব্দুল করিম বাদশা, মোহিত মিয়া ও আছকন আলীর মার্কেটসহ পুরো বাজারটি হুমকির মুখে রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী আব্দুস শহীদ জানান, দ্রুত কাউকাপনবাজারের ভাঙন মেরামত ও ব্লক স্থাপনের জন্য একটি আলাদা প্রকল্প গ্রহণ করা হবে।
কুলাউড়া থেকে নির্বাচিত জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুল মতিন জানান, বাজারের দোকানপাট ভেঙে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড আলাদা প্রকল্প করে দেবে। যত দ্রুত সম্ভব প্রকল্পটি যাতে বাস্তবায়ন করা হয়, সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।