× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, মঙ্গলবার , ১০ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৪ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বিশ্বকাপে মেতেছে সিরিয়ার শরণার্থীরা

খেলা

মানবজমিন ডেস্ক
২৫ জুন ২০১৮, সোমবার

প্রায় এক দশক ধরে চলা বহুপক্ষীয় হামলায় ধ্বংসযজ্ঞে পরিণত হয়েছে মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সিরিয়া। নিহত হয়েছে লাখ লাখ মানুষ। স্বজনদের হারিয়ে যারা প্রাণে বেঁচে আছেন তাদেরও মৃত্যু তাড়া করে ফেরে প্রতিক্ষণ। সংঘাতে মৃত্যুর পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ৩
হাত থেকে বাঁচতে তাদের অনেকে আশ্রয় নিয়েছেন অস্থায়ীভাবে নির্মিত শরণার্থী শিবিরে। তবে স্বজন হারানোর বেদনা ও মৃত্যুর শঙ্কার মধ্যেও তাদের জন্য নির্মল আনন্দে মেতে ওঠার সুযোগ করে দিয়েছে বিশ্বকাপ ফুটবল। ক্ষণিকের জন্য হলেও তাদের বিনোদনে মাতিয়ে রাখছে ফুটবলের সবচেয়ে বড় এই আসর।
বার্তা সংস্থা এএফপির খবরে বলা হয়েছে, শরণার্থীদের জন্য নির্মিত সিরিয়ার অস্থায়ী শিবিরগুলোতে জায়ান্ট স্ক্রিনে বিশ্বকাপের খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। উত্তর সিরিয়ার ‘আইন ইসা’ শরণার্থী শিবিরে একটি দাতব্য সংস্থার অর্থায়নে প্রজেক্টরে খেলা দেখানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।
স্থান সংকুলান না হওয়ায় সেখানে গাদাগাদি করে বিশ্বকাপের খেলা উপভোগ করেন বিভিন্ন বয়সের মানুষ। সিরিয়ার প্রায় সব শরণার্থী শিবিরেই অধিবাসীদের মধ্যে বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। রাকা প্রদেশের একটি শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেয়া ফুটবল ভক্ত আব্দুল্লাহ আল উবায়েদ বলেন, শরণার্থী শিবিরে বিশ্বকাপের খেলা দেখানোর ব্যবস্থা খুবই ভালো একটা উদ্যোগ। সবাই ফুটবলকে ভালোবাসে। বিশ্বকাপের উত্তেজনা অল্প সময়ের জন্য হলেও আমাদের দুঃখ-কষ্ট ভুলিয়ে রাখে। প্রিয় দলের জয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন সমর্থকরা। এখানে এমন উল্লাসের উপলক্ষ্য খুব কমই আসে।
বাস্তুচ্যুত হওয়ার পূর্বে উবায়েদ আলেপ্পো প্রদেশে বাস করতেন। নিজের শহর মাস্কানার ফুটবল টিমের সদস্য ছিলেন তিনি। কিন্তু জঙ্গিগোষ্ঠী দায়েশের আবির্ভাব হওয়ার পর তাদের সে সোনালী সময়ের ইতি ঘটে। জঙ্গিরা খেলার মাঠে ঢুকে খেলোয়াড়দের ধরে নিয়ে যেতে শুরু করে। এরপর থেকে আর সেখানে ফুটবল খেলার সুযোগ হয়নি। দীর্ঘ সময় পর আবারো ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হতে পেরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন উবায়েদ। তিনি বলেন, আল্লাহর শুকরিয়া যে, আমরা জঙ্গিদের থেকে মুক্তি পেয়েছি। আবারো খেলা দেখতে পারছি। বিশ্বকাপে তিনি মিসরের ফুটবল টিমের সমর্থক ছিলেন। দেশটির তারকা খেলোয়াড় মোহাম্মদ সালাহর ভক্ত তিনি।
তাঁবু দিয়ে তৈরি এসব আশ্রয়কেন্দ্রে তীব্র গরম উপেক্ষা করে খেলা দেখেন শত শত শরণার্থী। বাদ যায়নি শিশুরাও। তারা বাবা-মার কোলে বসে উপভোগ করেন সবচেয়ে জনপ্রিয় এই খেলা। আরেক শরণার্থী ফুটবল ভক্ত মুবাদ আল মোহাম্মদ বলেন, এবারের বিশ্বকাপ এমন সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন আমাদের জীবন খুবই দুর্দশাগ্রস্ত। ২৩ বছরের এই শরণার্থী বাস্তুচ্যুত হওয়ার আগে রাকায় বসবাস করতেন। তিনি বলেন, এখানে খুবই গরম। খেলা দেখার সুযোগ পেলেও বিশ্বকাপ নিয়ে আগের সেই উত্তেজনা মনে পড়ছে। তখনকার বন্ধুদেরও মনে পড়ছে। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ রাকায় নিজের শহরে বসে উপভোগ করেন তিনি। কিন্তু একদিন আইএস জঙ্গিরা তাদের খেলা দেখার দোকানে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা জোরপূর্বক দোকানটিতে খেলা দেখানো বন্ধ করে দেয়। তার ভাষায়- ‘যুদ্ধ আমাদের থেকে অনেক ভালো জিনিস ছিনিয়ে নিয়েছে। এর মধ্যে খেলা অন্যতম।’
ফুটবলভক্ত আব্দুল বাসিত জানান, বড় পর্দায় বিশ্বকাপের খেলা দেখতে পেরে তিনি খুবই রোমাঞ্চ অনুভব করছেন। এখানে বসবাসকারী শরণার্থীরা তাদের প্রিয় ফুটবলারের পায়ের জাদু দেখতে পারছেন। যা বাস্তুচ্যুত সিরিয়ানদের জন্য বড় পাওয়া। তবে নতুন প্রজন্ম নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন আব্দুল বাসিত। তিনি বলেন, শিশুরা সাত বছর ধরে খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না। যা খুবই ভয়াবহ একটি বিষয়। তবে ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী তিনি। বলেন, আশা করি পরবর্তী বিশ্বকাপ নিজেদের বাড়িতে বসে দেখতে পারব।
উল্লেখ্য, প্রায় এক দশক ধরে সিরিয়ায় সংঘাত চলছে। এতে নিহত হয়েছে সাড়ে তিন লাখেরও বেশি মানুষ।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর