গ্রুপ পর্বে সাবেক চ্যাম্পিয়ন স্পেনের নৈপুণ্যে খুশি নয় ভক্ত-সমর্থকরা। শেষ ম্যাচে মরক্কোর কাছে ইনজুরি সময়ের গোলে হার ঠেকিয়ে নকআউট পর্বের টিকিট কাটে ২০১০’র চ্যাম্পিয়নরা। এবার স্প্যানিয়ার্ডদের অগ্নি পরীক্ষা।
নকআউট পর্বে আজ স্প্যানিয়ার্ডদের চ্যালেঞ্জ স্বাগতিক রাশিয়া। শেষ ষোলো রাউন্ডে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে রুশ-স্প্যানিশ লড়াই শুরু রাত ৮টায়। রাশিয়া দ্বৈরথ সামনে রেখে স্প্যানিয়ার্ড মিডফিল্ডার থিয়াগো আলকানতারা বলেন, গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচেই আমাদের প্রতিপক্ষ দলের পক্ষে গলা ফাটাতে দেখেছি সমর্থকদের। আর শেষ ষোলো রাউন্ডে আমরা খেলবো স্বাগতিকদেরই বিপক্ষে। এটা মাথায় রয়েছে আমাদের।
গ্রুপ পর্বে ডিফেন্সিভ কৌশল আর কাউন্টার অ্যাটাকে স্পেনকে ভোগায় ইরান ও মরক্কো। ২০১০ আসরের চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে একই কৌশল কাজে লাগাতে চায় রাশিয়া। দলের ৩৮ বছর বয়সী অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার সার্জেই ইগনাশেভিচ বলেন, ‘স্পেনের ডিফেন্ডাররা অনেক উপরে ওঠে খেলে। তাদের রক্ষণভাগে অনেক স্পেস তৈরি হয়। এতে কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের দারুণ সুযোগ পায় প্রতিপক্ষ। গ্রুপ পর্বে এটাই ছিল স্পেনের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। মরক্কো ও ইরান এই কৌশল কাজে লাগিয়েছে। আমরাও সেই চেষ্টা করবো।’ স্বাগতিক দর্শকদের সামনে ম্যাচটা খুব কঠিন হবে বলেই মনে করেন স্পেন রাইটব্যাক দানি কারবাহাল। তিনি বলেন, ‘স্বাগতিক দেশের বিপক্ষে ম্যাচটা খুবই কঠিন হবে। প্রথম দুই ম্যাচে তারা ৮ গোল করে। পুরো দেশ তাদের পাশে। রাশিয়া খুবই শক্তিশালী ও গতিময় দল। বলের নিয়ন্ত্রণ হারানো যাবে না। আমরা নিজেদের খেলার দিকে দৃষ্টি রাখছি। রাশিয়া দলের দুর্বলতা ও ম্যাচে তাদের ভুল কাজে লাগাতে চাই। এখন থেকে প্রতিটি ম্যাচই জীবন-মৃত্যুর সমান। ড্র করার জন্য কেউ খেলে না। হয় জিততে হবে নতুবা বাড়ি ফিরতে হবে।’ স্পেন কোচ ফার্নান্দো হেইরোর কোনো ইনজুরি উদ্বেগ নেই। অন্যদিকে লাল কার্ডের নিষেধাজ্ঞার কারণে খেলতে পারছেন না রাশিয়ান ডিফেন্ডার ইগোর স্মোলিনকভ। ইনজুরি কাটিয়ে ফিরতে পারেন মিডফিল্ডার অ্যালান ডিজাগোয়েভ। মরক্কোর বিপক্ষে (২-২) গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইনজুরি সময়ের গোলে হার এড়ায় স্পেন। পর্তুগালের সমান ৫ পয়েন্ট হলে বেশি গোল করায় ‘বি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন হয়ে শেষ ষোলোতে পা রাখে তারা। পর্তুগালের বিপক্ষে স্পেনের প্রথম ম্যাচে ৩-৩ গোলের রোমাঞ্চকর ড্র দেখে দর্শকরা। দ্বিতীয় ম্যাচে ইরানের বিপক্ষে ১-০ গোলে কষ্টার্জিত জয় পায় স্পেন। অন্যদিকে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার ম্যাচে উড়ন্ত রাশিয়াকে মাটিতে নামায় উরুগুয়ে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচটিতে ৩-০ গোলে হারের হতাশায় ডোবে স্বাগতিক শিবির। উদ্বোধনী ম্যাচে সৌদি আরবকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করার পর মিশরের বিপক্ষে ৩-১ গোলের জয় উদযাপন করে রাশিয়া। ৩ গোল নিয়ে টুর্নামেন্টে রাশিয়ার সর্বোচ্চ গোলদাতা ডেনিশ চেরিশেভ। সমান ৩ গোলে স্পেনের শীর্ষ গোলদাতা দিয়েগো কস্তা। সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে ভাগ হওয়ার পর প্রথমবার বিশ্বকাপের দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলতে যাচ্ছে রাশিয়া। ১৯৯৪ বিশ্বকাপ থেকে এককভাবে খেলছে রাশিয়া। এটি তাদের চতুর্থ বিশ্বকাপ। মাঝে তিন আসরে বাছাইপর্ব পেরোতে পারেনি তারা। ২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপে রাশিয়ার মতোই গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নেয় স্পেন। এবার দাপটের সঙ্গে বিশ্বকাপে পা রাখে স্প্যানিশরা। ২৩ ম্যাচ ধরে অপরাজিত স্পেন।
তারা সবশেষ হার দেখে ২০১৬ ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের (ইউরো) শেষ ষোলোতে ইতালির বিপক্ষে (২-০)। ছয়বারের সাক্ষাতে এক ম্যাচেও স্পেনকে হারাতে পারেনি রাশিয়া (২ ড্র ও ৪ হার)। সবশেষ গত বছরের নভেম্বরে দুইদলের মধ্যকার গোল উৎসবের প্রীতি ম্যাচটি ৩-৩ সমতায় শেষ হয়। বড় প্রতিযোগিতায় স্পেন ও রাশিয়া শেষবার মুখোমুখি হয় ২০০৮ ইউরোর সেমিফাইনালে। ম্যাচটিতে ৩-০ গোলের দাপুটে জয় পায় ওই আসরের চ্যাম্পিয়ন স্পেন।