ব্রাজিলিয়ান ফুটবল তারকা নেইমারকে মাঠে গড়াগড়ি ও যন্ত্রণায় কুঁকড়াতে দেখে অভিনয়ের শিক্ষক জিম কাল্ডারের মনের মধ্যে কেঁদে উঠে। তার মতে, নেইমার একদমই আনাড়ি অভিনেতার মত অভিনয় করছেন। প্রায় তিন দশক ধরে নিউ ইয়র্কের টিচ স্কুল অফ আর্টসে অভিনয় শেখানো কাল্ডারেরতো এটা জানারই কথা। ইতালীর ফ্লোরেন্সে থিয়েটার কর্মশালায় ছাত্রদের সঙ্গে দিনভর চিল্লানোর কারণে এমনিতেই তার গলা ভেঙ্গে যায়। এরপর ক্লাস শেষে তিনি যখন বিশ্বকাপ ফুটবল দেখতে বসেন তখন ও ফুটবলারদের অভিনয় দেখে তাকে বিরক্ত হতে হয়। প্রতি চার বছর পরপর ক্রিড়া জগতের সবথেকে বড় আসরে কিছু ফুটবলারকে আনাড়ি মানের অভিনেতা হতে দেখা যায়। কেউ পছন্দ করুক আর না করুক তারা ব্যথা পাওয়ার অভিনয় করে যেতেই থাকেন।
আরেক অভিনয়ের শিক্ষক পিটার কিলি বলেন, ‘এ ধরণের ফুটবলারদের অভিনয় আমার মুগ্ধ করেছে।
তারা এমনভাবে অভিনয় করতে থাকেন যেনো তারা আর কোনোদিন হাটতে পারবে না’। তিনি এনসিআইএস: লস এঞ্জেলস’ টিভি সিরিজের অভিনয় কোচ। তবে, মঙ্গলবার রাতে মেক্সিকোর সাথে ব্রাজিলের খেলা চলাকালীন নেইমারের অতিরিক্ত গড়াগড়ির কারণে ঘটনাটি অতিনাটকীয়তার পর্যায়ে চলে যায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার এই আচরণের কারণে ব্যাপক ট্রলের শিকার হন তিনি। এক ভিডিওতে দেখা যায়, বাচ্চারা মাঠের মাঝে গড়াগড়ি খেয়ে নেইমারকে উপহাস করছে। জার্মানি জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক লোথার ম্যাথিউস বলেন, নেইমার বর্তমানে সেরা ৫ ফুটবলারের একজন। তাহলে কেনো তাকে এরকম অভিনয় করতে হবে? কি জন্য?
ফুটবলে এরকম অভিনয়ের অনেকগুলো কারণ থাকতে পারে। অনেকেই বিপক্ষ দলের ফুটবলারদের ফাউল করে শাস্তি এড়াতে নিজেও ব্যথা পাবার অভিনয় করেন। এমনকি গুরুত্বপূর্ন মুহূর্তে খামোখাই আহত হবার ভান করে সময় নষ্টের চেষ্টা করা হয়। আবার ছোট ফাউলের শিকার হয়ে মারাÍক আহত হবার অভিনয় ও করতে দেখা যায় ফুটবলারদের যাতে ফাউলকারিকে রেফারি হলুদ বা লাল কার্ড দেখায়।
এ বিষয়ে লন্ডনের অভিনয় শিক্ষক ফিলিপা র্স্ট্যান্ডবার্গ-লং বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফুটবলের মত আসরে ফুটবলারদের এরকম অভিনয় অত্যন্ত হতাশাজনক। ফুটবলভক্ত হিসেবে আমি মনে করি মাঠে এ ধরণের অভিনয় ফুটবলের সৌন্দর্যই নষ্ট করে দেয়’। পাশাপাশি একজন অভিনয় শিক্ষক হিসেবে তিনি মনে করেন এগুলো অভিনয় শিল্পের জন্যেও বেশ অপমানজনক। একজন ফুটবলারের বোঝা উচিত হাতে আঘাত লাগার পরে যদি তিনি মুখম-ল চেপে ধরে বসে পরেন তাহলে সেটা খুব একটা উপভোগ্য হয়ে উঠবে না। তিনি আরো বলেন, আপনি যদি খামোখাই এ ধরণের অভিনয় করতে থাকেন তাহলে আমাদের আর খারাপ লাগবে না, আপনার উপর আমাদের বিশ্বাস ও থাকবে না। আমরা আপনার এ ধরণের কাজের জন্য প্রশ্ন করতে শুরু করব। যেসব ফুটবলাররা ভুলে যান দর্শক একটা দৃশ্যে শুধু প্রধান চরিত্রকেই দেখে না তাদের উদ্দেশ্যে কিলি বলেন, দর্শক আপনার সতীর্থদের ও দেখেন যারা কিনা আপনার এই অভিনয় শেষ হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তবে এটাও সত্যি যে, এ বিশ্বকাপের খুব কম সংখ্যক দলই এটা দাবি করতে পারবে যে তারা কোনো ম্যাচেই অভিনয় করেনি।