রাশিয়া বিশ্বকাপের সুপার এইটের দ্বিতীয় দিনে অলইউরোপিয়ান ফুটবলের রাতটি দারুণ উপভোগ্য হবে বলে মনে করেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। তিনি বলেন, কোয়ার্টারের প্রথম রাতটি ছিল ল্যাতিন ও ইউরোপিয়ান ফুটবলের দ্বৈরথের। কিন্তু দ্বিতীয় দিনটি অলইউরোপিয়ান। ইংল্যান্ডের হ্যারি কেইন ঝড়ের মুখোমুখি হবে নরডিক সুইডেন। অন্য ম্যাচে স্বাগতিক রাশিয়ার উজ্জীবিত ফুটবলের সঙ্গে লড়বে কৌশলী ক্রোয়েশিয়া। নিজের সময়ে এশিয়ার অন্যতম সেরা এ গোলরক্ষক মনে করেন নিজেদের ম্যাচে এগিয়ে থাকবে ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া। তারপরও প্রশ্ন থেকে যাবে, আজ রাতে রাশিয়ার আবেগ জিতবে, নাকি ক্রোয়েশিয়ার কুশল।
রাশিয়ার বর্তমান ফুটবল টিমটি গোর্কি-তলস্তয়ের দেশকে বড়কিছু অর্জনের স্বপ্ন দেখাচ্ছে বলে মনে করেন আমিনুল। তিনি বলেন, স্বাগতিক দেশ হিসেবে এবার দারুণভাবে খেলে যাচ্ছে রাশিয়া।
হোমগ্রাউন্ডের সুবিধা, দর্শকদের সমর্থনের অনুপ্রেরণায় দুরন্ত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বৈশ্বিক পরাশক্তি রাশিয়া। প্রথমপর্ব থেকেই অপ্রতিরোধ্য রাশিয়া স্পেনের মতো প্রতিষ্ঠিত ফুটবলশক্তি ও সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়নকে পাঠিয়ে দিয়েছে বাড়ি। কিন্তু কোয়ার্টারে তাদের মোকাবিলা করতে হবে এই মুহূর্তের বিশ্বসেরা মিডফিল্ড। মদরিচ, রেবিক, মানজুকিচের মতো তারকাদের। এবারের বিশ্বকাপের প্রথমপর্বে গতি, কৌশল ও নান্দনিকতা মিলিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের প্রত্যাশা বাড়িয়ে দিয়েছে ক্রোয়েশিয়া। তিনি বলেন, রাশিয়ার গতির সঙ্গে পাল্লা দেয়ার ক্ষমতা রাখে ক্রোয়েশিয়া। কিন্তু কৌশলের দিকে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গে পাল্লা দেয়া রাশিয়ার জন্য ভীষণ কঠিন। এখানেই এগিয়ে থাকবে ক্রোয়েশিয়া। তারপরও কেউ কাউকে সহজে ছাড় দেবে না। দুইপক্ষই প্রতিপক্ষের দু’য়েকটি ভুলকে কাজে লাগানোর অপেক্ষায় থাকবে। এ ম্যাচে ক্রোয়েশিয়া হারলে ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে আঘাত লাগবে আর রাশিয়ার হারলে ভেঙে যাবে স্বাগতিকদের স্বপ্ন। নরডিক সুইডেনকে ত্রি-লায়ন ইংল্যান্ড হারি কেইন ঝড়ে উড়িয়ে দেবে বলে মনে করেন আমিনুল। তিনি বলেন, ইংল্যান্ড সাবেক বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলেও সাম্প্রতিক দশকগুলোতে তাদের নিয়ে বড় কোনো স্বপ্ন দেখেনি বৃটিশরা। ফেভারিটের তকমাও মেলেনি তাদের। কিন্তু এবার তারা অন্যরকম একটি টিম নিয়ে গেছে রাশিয়ায়। দুর্ধর্ষ স্কোরার হ্যারি কেইন ঝড় তুলছেন প্রতিটি ম্যাচেই। গোল পাচ্ছেন নিয়মিত। এ বিশ্বকাপে তিনটি পেনাল্টি শট পেয়ে তিনটিতেই গোল আদায় করেছেন তিনি। যখন খেলেন মাঠের মধ্যে তটস্থ করে রাখছেন প্রতিপক্ষের ডিফেন্স লাইন। তাদের রয়েছে রহিম স্টারলিংয়ের মতো ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার মতো খেলোয়াড়। জার্মানি, স্পেনের বিদায়ের পর এই দেশটিকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন অনেক ইউরোপিয়ান। অন্যদিকে সুইডেন এ বিশ্বকাপের আগে খুব একটা আলোচনাতেই ছিলো না। কিন্তু তারা রীতিমতো গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠেছে নকআউট পর্র্বে। দ্বিতীয়পর্বে তারা সুইজারল্যান্ডের গতিময় ফুটবলকে আটকে দিয়েছে পজিশনাল ফুটবলে। সুইডেনের আক্রমণভাগের পাশাপাশি গোলরক্ষকও সেদিন দারুণ পারফর্ম করেছেন। তারা ম্যাচ টু ম্যাচ উন্নতি করেছে। তারপরও এ ম্যাচে আমি ইংল্যান্ডকে এগিয়ে রাখব। আমিনুল বলেন, আজকের ম্যাচে হ্যারি কেইনকে আটকে দিতে সর্বাত্মক মনোযোগী হবে সুইডেনের ডিফেন্স লাইন। নিজের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে আজও সুইডেনের ওপর ঝড় বইয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে হ্যারি কেইন। হ্যারি কেইন বনাম সুইডিশ ডিফেন্সের এ খেলায় যে জিতবে সেই মাঠ ছাড়বে হাসিমুখে। সবমিলিয়ে আজকের অলইউরোপিয়ান ফুটবলের রাতটি হবে উপভোগ্য ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামুখর।
অনুলিখন: কাফি কামাল