× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

আত্মঘাতী গোল যেন প্রতীকী

ক্রিকেট বিশ্বকাপ-২০১৯

ডম ফিলিপস, রিও ডি জেনিরো থেকে
৮ জুলাই ২০১৮, রবিবার

বেলজিয়ামের সঙ্গে ব্রাজিলের কোয়ার্টার ফাইনাল শুরুর ঠিক দু’ঘণ্টা আগের কথা। রিও ডি ডেনিরোর রাজপথে আতশবাজির উৎসব। খেলায় তারা জিতবে- এই আশায় ডাউনটাউন রিও’তে শত শত মানুষের ভিড় একটি জায়ান্ট স্ক্রিনকে ঘিরে। আনন্দের এক আতিশয্যে সবাই খেলা উপভোগ করছেন। কিন্তু খেলা শুরু হতে না হতেই কী ঘটে গেল! আত্মঘাতী গোল দিয়ে বসলেন ফার্নান্দিনহো। সঙ্গে সঙ্গে পিনপতন নীরবতা চারদিকে। সবাই মাথায় হাত দিলেন। আবারও কি কোনো ভয়াবহতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল?
সব সময়ই বিশ্বকাপ জিততে চায় ব্রাজিল।
কিন্তু এখনকার ব্রাজিল রাজনৈতিকভাবে মেরূকরণ করা। চারদিকে মন্দা। সাম্প্রতিক কয়েক দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা জেলে। অক্টোবরে সেখানে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তাতে জনমত জরিপে এগিয়ে আছেন কট্টর ডানপন্থি এক নেতা। তিনি বিজয়ের বিষয়ে নিশ্চিত। শুক্রবার বেলজিয়ামের কাছে ২-১ গোলে হেরে যাওয়ার পর আগের মতো হাহাকার দেখা যায়নি। কড়মড় করে দাঁতে দাঁত ঘষতে দেখা যায়নি, যেমনটা 
দেখা গিয়েছিল ২০১৪ সালে। সে সময় সেমি ফাইনালে জার্মানির বিরুদ্ধে ৭-১ গোলে ভয়াবহভাবে পরাজিত হয়েছিল ব্রাজিল। মানুষের মধ্যে সেই ক্ষতটা এখনও রয়ে গেছে। রিও ডি ডেনিরো স্টেট ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক প্রফেসর মাউরিসিও সান্তোরো তার ফেসবুকে এ নিয়ে একটি পোস্ট দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ব্রাজিলে বর্তমানে জাতীয় পর্যায়ে যে সংকট বিরাজমান আত্মঘাতীয় গোলে বিশ্বকাপ থেকে ব্রাজিলের বাদ হয়ে যাওয়া যেন তারই প্রতিনিধিত্ব করে। রিও’র বেঞ্জামিন কনস্ট্যান্ট স্ট্রিটে খেলা দেখছিলেন সরকারি চাকুরে মার্কোস করডোলিনো (৫০)। তিনি বলেছেন, অনুভূতিটা একেবারে বাজে। যেমনটা খেলে ব্রাজিল তা খেলতে পারেনি। আমাদের তারকারা জ্বলে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন। উল্লেখ্য, ৫ বার বিশ্বকাপ বিজয়ী হয়েছে ব্রাজিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই টুর্নামেন্টের সঙ্গে ব্রাজিলের সম্পর্ক শীতল হয়েছে। দুর্নীতি ও স্টেডিয়াম নির্মাণের খরচ নিয়ে রাজপথে তীব্র আন্দোলন, প্রতিবাদ বিক্ষোভের ঠিক এক বছর পরে ২০১৪ সালেই বিশ্বকাপের আসর বসে ব্রাজিলে। ওই সময়ে অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি থমকে দাঁড়িয়েছিল। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং সামাজিক অগ্রগতিতে দেশ থমকে দাঁড়ানোর ফলে দেশের সফলতায় দেখা দেয় ফাটল। তারপর থেকে সব কিছুই দৃশ্যত ভুল মনে হচ্ছে। তার মধ্যে রয়েছে কোটি কোটি ডলারের দুর্নীতি সংক্রান্ত স্ক্যান্ডাল। জিকা ভাইরাসের মহামারি। ভয়াবহ অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। রিও ডি জেনিরোতে নিরাপত্তাবিষয়ক সেবা খাতগুলো নিয়ে নিয়েছে সেনাবাহিনী। বামপন্থি প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফকে অভিশংসিত করা হয়েছে। তার পরিবর্তে তার স্থানে বসানো হয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি জনপ্রিয়তাহীন ডানপন্থি ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমেরকে। চার বছর আগে যতটা আগ্রহ ছিল ব্রাজিলের ফুটবলকে নিয়ে এবার আগ্রহটা ছিল তার চেয়ে কম। এমন কি বহু ব্রাজিলিয়ান সমর্থন করেছেন তাদের চির প্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে। তবে কোট আদেনর বাচ্চি, যিনি টিটে নামে পরিচিত, তিনি কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন। এর কিছু কারণও আছে। দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে যে দুর্নীতি এবং ভয়াবহ রাজনীতিকরণ তার ভেতর থেকে তিনি দলকে বিশেষায়িত করে বের করে আনার ক্ষেত্রে দক্ষতা দেখিয়েছেন। আইটি প্রকৌশলী তাদিউ প্রিয়েতো (৩২) বলেছেন, সব সময়ই আমরা বিশ্বকাপ জেতার আশা করি। তবে বেঞ্জামিন কনস্ট্যান্ট স্ট্রিটে চার বছর আগে জায়ান্ট স্ক্রিনে খেলা দেখার জন্য যে পরিমাণ মানুষ জড়ো হয়েছিলেন এবার তার অর্ধেকের মতো এসেছিলেন। এক্ষেত্রে ব্রাজিলে গভীরভাবে রাজনীতি বিভক্ত থাকাও একটি কারণ। প্রকৌশলী ক্যামিলা লিওনসিও (৩৩) পরেছিলেন ব্রাজিলের একটি নীল রঙের শার্ট। এর কারণ কী? কারণ হলো, ব্রাজিলের যে ঐতিহ্যবাহী হলুদ শার্টকে ডানপন্থি বিক্ষোভকারীরা ব্যবহার করেছে দিলমা রুসেফের বিদায় ঘণ্টা বাজানোর জন্য। মে মাসে সেখানে ট্রাক ধর্মঘট হয়। তাতে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তারা, যারা দেশের পতাকা দুলিয়েছিল। কিচেনে সহকারী হিসেবে কাজ করেন রেজিনা হরগে (৩২)। অনেক বামপন্থির মতো তিনিও আরেকটু এগিয়ে গেলেন। তিনি পরেছেন ব্রাজিলের লাল শার্ট। তার ওপর একটি ল্যাপেল ফ্লাগ। তিনি বলেন, মানুষ এতটা এক্সসাইটেড নয়। ৭-১ গোলে হেরে যাওয়া ছিল একটি বড় ভুল। আর সামাজিক ইস্যুগুলো তো আরো খারাপ।
অর্ধ বিরতির সময় ব্রাজিল ২-০ গোল খেয়ে কাতরাচ্ছে। তখনও ওই ভিড়ের মানুষগুলো প্রত্যাশায় বুক বেঁধে আছেন। ল্যাব টেকনিশিয়ান জোয়েলমা সালদানহা (৩৮) একটি টি-শার্ট পরেছিলেন। তিনি বলছিলেন, আমি খুব আশা নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম এখানে। তার টি-শার্টে একটি স্লোগান লেখা। তার ইংরেজি এ রকম ‘ইট ইজ জাস্ট এ গেম, ইওর অ্যাস’। তিনি ব্যাখ্যা করলেন এভাবে- এটা হলো একটি খেলা। এটা হলো ব্রাজিল। উন্নত বিশ্বের জন্য খেলছে। এখনও সবকিছু চলছে ভুলপথে। খেলা শুরুর পূর্ব মুহূর্তে যখন জাতীয় সংগীত বাজছিল তখন এই জায়ান্ট স্কিন তা দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাধ্য হয়ে এখানে সমবেত মানুষগুলোর একটি বড় অংশ গিয়ে ভিড় জমান একটি ছোট্ট টেলিভিশনের সামনে। দ্বিতীয়ার্থের খেলা শুরুর সময়েও একই অবস্থা, যেমনটা ব্রাজিল খেলাটা শুরু করেছিল। রেফারির চূড়ান্ত বাঁশি বাজার পরে রাস্তায় রাস্তায় লোকজন ভাঙচুর করতে লাগলো। ১৯৮২ সালে যেমনটা হয়েছিল, ব্যর্থ হয়েছিল ব্রাজিল, তেমনটা অনুভূত হতে থাকে অনেকের মধ্যে। ওই সময়ে সবচেয়ে সৃষ্টিশীল টিমকে বিশ্বকাপ থেকে মুছে দিয়েছিল ইতালি। সেলফোনে ম্যাসেজ করতে করতে ৩২ বছর বয়সী জুলিয়া মায়ার বললেন, এখন ব্রাজিলকে অন্য সব বিষয়ে উদ্বিগ্ন হতে হবে। তাহলো স্বাস্থ্য ও শিক্ষা। দেশ এ নিয়ে লড়াই করছে।
পাশের একটি রাস্তার পাশে একটি বাড়িতে তখনও পার্টি চলছিল। তার পাশ দিয়ে হেঁটে যেতে যেতে চারজন নারী কথা বলছিলেন। তাদের একজন ৪২ বছর বয়সী কিচেন সহকারী এস্তেলা রেসেনডে। তিনি বললেন, ব্রাজিল যদি এই বিশ্বকাপ জিততো তাহলে তা হতো এক বিব্রতকর অবস্থা। শেষবার যখন আমরা কাপ জিতেছি তা আমাদের দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে এবং এর পরে, ব্রাজিলের মতোই, ওই নারীরা হেঁটে চলে গেলেন।
(লন্ডনের অনলাইন দ্য গার্ডিয়ানে প্রকাশিত লেখার অনুবাদ)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর