২৬শে জনুয়ারি রাত ১২টায় ঘুমাতে গেলাম। ভোর রাত ৪টা বাজে ঘুম ভাঙতেই টয়লেটে যেতে উঠেছি। সাধারণত এ সময় প্রস্রাব পায়। ৩-৪ দিন ধরে একটা হাল্কা পিরিয়ডের ব্যথার মতো কোমর ব্যথা করেছে। কিন্তু, প্রস্রাব করে শুয়ে পড়লে ব্যথা শেষ হয়ে যায়। আমার বর তখনো ঘুমায়নি, কারণ সে কম্পিউটারে রাত জেগে কাজ করে। আমি নিশ্চিন্তে টয়লেটে গেলাম। গিয়ে দেখি সালওয়ারে রক্ত।
আমি একটু ভয় পেলাম। কিন্তু রুমে এসে স্বাভাবিকভাবে ওকে বললাম ঘটনা। ও বললো হাসপাতালে কল দাও, দিলাম। হাসপাতাল থেকে আমাকে বললো, তোমার মা হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, অনেক সময় লাগবে। তুমি বিশ্রাম নিয়ে, ঘুমিয়েই শক্তি সঞ্চয় কর। আমিও তাই ভালো মনে করলাম, কিন্তু ঘুমতো আসে না। আমরা দুজন মিলে নাস্তা করলাম। ৫টা বেজে গেল। আমার বর একটু নার্ভাস হয়ে আবোল তাবোল বলা শুরু করেছে। অপ্রাসঙ্গিক কথা, স্কুল জীবনের গল্প শুরু করেছে। আমি বললাম, চিন্তা করো না, তোমার ঘুম দরকার, নইলে আমাকে কে ড্রাইভ করে নিয়ে যাবে? ওকে জোর করে ঘুমাতে পাঠালাম। আর আমি গোছগাছ শুরু করলাম, আর হাঁটাহাঁটি করছি। ফেসবুকের একটা গ্রুপে পোস্ট দিয়েছি ইতোমধ্যে। সবাই অনেক উপদেশ দিয়ে সহযোগিতা করছে। বেশির ভাগ মানুষ দ্রুত হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। তাদের কিভাবে বোঝাই এখানে আগে হাসপাতাল গিয়ে লাভ নেই, আমাকে ফেরত পাঠিয়ে দেবে। যাই হোক, সব গুছানোই ছিল, তবুও আমি খালি ঘুরে ঘুরে সব গুছাচ্ছি। কিছু ভালো লাগছে না। আম্মু, খালামনি আর নানুর সঙ্গে ফোনে কথা বলে একটু সাহস পাচ্ছি। এর মধ্যে আমি এক গ্লাস আনারসের জুস খেয়েছি। কিছু কাপড় ওয়াশিং মেশিনে দিলাম, ভাত রান্না করেছি, যদিও রান্না ছিল। সকাল ১০টা বেজে গেল, ব্যথা
অল্প অল্প বাড়ছে। বিছানায় গেলাম। ৪৫ মিনিট ঘুমালাম।
উঠে আবার হাঁটাহাঁটি করছি। একবার টয়লেট করেছি। শাওয়ার নিলাম। বর ৪ ঘণ্টা ঘুমিয়ে উঠেছে। আমার বরের মাথায় টিউমার হয়েছিল। যার কারণে দুই বছর আগে ৪টা অপারেশন হয়েছিল। সামনে আরও ২টা অপারেশন হবে। সে অন্য সব মানুষের মতো হাসপাতাল গিয়ে ফিট না, কিন্তু মানসিক শক্তি ২০০ ভাগ। বেলা ১১.৩০ বাজে ব্যথাটা বেশি মনে হলো। আবার কল দিলাম হাসপাতালে। ওঁরা ব্যথার ডিউরেশন জানতে চাইল, ১০ মিনিটে একবার হচ্ছিল আমার, বললো ১০ মিনিটে ৩ বার ব্যথা উঠলে ফোন দিয়ে রওনা দিতে। বাচ্চার নড়াচড়া জানতে চাইল, ভালোই ছিল, তাও বলছি কম। আবার টয়লেটে গেলাম, দেখলাম রক্তের সঙ্গে ঝপ করে অনেকখানি পানির মতো বের হলো। বের হয়ে আবার কল দিলাম। বললো তুমি আসতে পার, আমরা পরীক্ষা করে দেখি, মনে হয় দুই লাগবে। বর গাড়ির সামনে বরফ পরিস্কার করতে গেল, ৩০ মিনিট লাগল। আমরা লাঞ্চ সেরে বেলা ১টায় রওনা দিলাম, হাসপাতালে পৌঁছাতে ১.৩০ বেজে গেল। যেতে যেতে ব্যথা বেড়েছে। আমি ওয়েটিংরুম-এ অপেক্ষা করছি বর গেল গাড়ি পার্ক করতে, এদিকে আমি ব্যথায় শেষ! আমি রিসিপশনে গিয়ে বললাম আর পারছি না, কিছু করো!
এর মধ্যে বর চলে এসেছে। একজন মিডওয়াইফ এসে আমাদের দুজনকে একটা রুমে নিয়ে গেল পরীক্ষা করতে। আমি শুয়ে আছি, উনি হাত দিয়ে দেখলেন ইউটেরাসের মুখ ৩ সে.মি. ওপেন হয়েছে। ব্যথায় আমার জীবন যায় যায় অবস্থা। আমাকে ভর্তি হতে হবে বলে উনি কিছুক্ষণের জন্য চলে গেলেন। এদিকে আমার বরের কান্না কান্না অবস্থা আমাকে দেখে, এর মধ্যে হলো আমার বমি। একটু পর নার্স এসে বললো পুরো স্টকহোম সিটিতে কোথাও সিট ফাঁকা নেই, ১টি মাত্র সিট আছে যেটা ৩০ মিনিটের ড্রাইভ ওয়ে দূরত্ব এই হাসপাতাল থেকে। আর আমার বাসা থেকে ১ ঘণ্টার দূরত্ব! আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। জিজ্ঞেস করলাম আমাদের বাসার কাছে আরেকটা সিটি আপসালা হাসপাতালে আমাদের পাঠাতে পারবে কিনা? সে ফোন দিয়ে দেখল সেখানেও কোনো সিট ফাঁকা নেই।
মিডওয়াইফ আমাদের ওই একমাত্র সিটটি বুক করে দিলেন। আমরা কারোলিংস্কা হাসপাতাল থেকে সুদারতালজি হাসপাতাল রওনা দিলাম। ওখানে কোনোদিন যাইনি তাই তিরিশ মিনিটের জায়গায় পঁয়তাল্লিশ মিনিট লেগে গেল। দুপুরে সাধারণত রাস্তায় যানজট থাকার কথা না, ওইদিন জ্যাম যেন শেষই হয় না। রাস্তায় ব্যথা বাড়ছে, আমি খালি জোরে জোরে শ্বাস করছি, আর দোয়া পড়ছি। আর বরকে বলছি ভয় পেয়ো না, সাবধানে গাড়ি চালাও। ৩টায় হাসপাতালে পৌঁছালে সরাসরি আমাদের লেবার রুমে নিয়ে পরীক্ষা করে দেখল ৪ সে.মি. ওপেন হয়েছে। আমাকে লাফিং গ্যাস নিতে বললো প্রতি কন্ট্রাকশনের সময়। জোরে শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে ফেলতে বললো, কিছুটা আরাম পেলাম। ২ জন সরফরিভব আমাকে সারাক্ষণ পর্যবেক্ষণ করতে শুরু করে, বেবির হার্ট রেইট, ব্যথার পরিমাণ, কন্ট্রাকশন ডিউরেশন মনিটর করে। এছাড়া ওঁরা এতটাই যতœ করে যেটা বলার বাইরে। একটু পর পর আমাকে জুস এনে দিচ্ছিল, গ্লাসে খাওয়ার শক্তি নেই স্ট্রো একটু একটু সিপ নিচ্ছিলাম। এর মাঝে বমি হলো কয়েকবার, আমি আরও কাহিল হয়ে গিয়েছি, বুক জ্বলে যাচ্ছে। জুনিয়র মিডওয়াইফটা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ম্যাসাজ করছে, কন্ট্রাকশনের সময় ২ হাঁটু চেপে ধরছে। ও আমাকে বলছে, তুমি কন্ট্রাকশনের সময় জোরে চিৎকার করবে, এভাবে ব্যথা কম লাগবে। আমি তাই করছি, এর আগে আমি টুঁ শব্দও করিনি। ও আমাকে ধরলেই মনে হচ্ছে সব ব্যথা চলে যাবে আমার। আমার বরকে এর মধ্যেই ও ট্রেইনআপ করে ফেলেছে কিভাবে ম্যাসাজ করলে আমি আরাম পাব। বরও বার বার ম্যাসাজ করে আমাকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। আমার কষ্ট তো কিছুতেই কমে না। বার বার লাফিং গ্যাস নিচ্ছি, এর জন্য একটা ঘোরের মধ্যে আছি, সময় যেন কিছুতেই যায় না।
সাড়ে ৫টায় আমাকে বললো, বাথটাব এ উষ্ণ গরম পানিতে বসে গোসল করতে, আমি বাসা থেকে গোসল করে গিয়েছি বললাম। কিন্তু ওরা বললো আবার গোসল করলে ভাল হবে, আমি তাই করলাম, অনেক আরাম পেলাম। এই দুই মিডওয়াইফের ডিউটি সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত। জুনিয়র সরফরিভব যাওয়ার সময় আমাকে বলল, ভয় পেয়ো না। ইউ আর ডুয়িং ভেরি ওয়েল। আই উইল কাম ব্যাক ৭ এ.এম এট মর্নিং। দেন উই উইল মিট ইউ অ্যান্ড ইউর বেবি। ওরা চলে গেলে, মনে হচ্ছিল আমার আপন বোন আমাকে রেখে চলে যাচ্ছে। খুব অসহায় লাগছিল। আরও তিন জন নতুন সরফরিভব এলেন সন্ধ্যা ৭টায়। তাদের মধ্যে একজন আবার সম্পূর্ণ নতুন। সে আমাকে দিয়ে এক্সপেরিমেন্ট করে শিখবে। আমি একটু ঘাবড়ে গেলাম। কিন্তু সবাই এত ভালো আর আমাকে আদর করছিল যে মনে হচ্ছে আমার মা, খালা ওরাই। আমার হাত ধরে রাখা, হট ব্যাগ দিয়ে ছ্যাঁকা দেয়া, পিঠে, কোমরে, হাঁটুতে, প্রেসার দিয়ে দিয়ে ম্যাসাজ করা। এগুলো আমার বরসহ বাকি ৩ মহিলা পালাক্রমে করতেই ছিল।
রাত ১০.৩০ এ সিনিয়র মিডওয়াইফে আবার হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখল ৫ সেমি ওপেন হয়েছে। উনি যা যা করে ট্রেইনি মিডওয়াইফ তাই করে। মানে আমার ডাবল কষ্ট হচ্ছে। আমি কিছু বলতে পারি না, সে নতুন প্লেসগুলা ঠিকমতো বোঝে না, আমি বলে দিই এখানে না এখানে হাত দাও, আমি অনেক ব্যথা পাচ্ছি। ম্যাসাজও পারে না ভালোভাবে। আমি বলি তুমি সরো, আমার বর এসে আবার ম্যাসাজ করে দেয়। ইতোমধ্যে আমার বরের সারা শরীর ব্যথা হয়ে গেছে এগুলো করতে করতে। বাকি দুই মহিলাও ক্লান্ত সেবা করতে করতে। আমি ইপিডিউরাল নিতে চাই ওরা আগেই জানত, তাই এখন আমাকে জিজ্ঞেস করল নিব কিনা? আমি বললাম ‘হ্যাঁ’। আনাস্থেসিয়া ডাক্তার এসে এপিডিউরাল দিল, আমি ওদের ইন্সট্রাকশন ফলো করেছি তাই খুব একটা ব্যথা পাইনি। কিন্তু অনুভূতিটা অদ্ভুত ছিল। ২০-২৫ মিনিট পরে রাত ১১টায় আমি একটু রিলিফ পেলাম। পুরো পেট থেকে নিচের অংশ অবশ লাগছিল, কোনো ব্যথা ফিল করছি না আর।
তখন ওরা আমাদের ডিনার দিল থাই চিকেন দিয়ে রাইস, বলল সারা দিন নিশ্চয়ই কিছুই খাওনি। আমি আর আমার বর হাপুস হুপুস করে সব শেষ করে ফেললাম। খেয়ে দেয়ে আমি ফুরফুরে মেজাজে আছি। কারণ, লাফিং গ্যাস আর ইপিডিউরালের এফেক্টের জন্য। নার্স এসে বলল তুমি হাঁটাহাঁটি কর, একটা বড় বল দিল, বলে বসে নাচের মতো কোমর ঘুরাতে বলল। এতে নাকি গ্রেভিটেশনাল ফোর্সের কারণে বাচ্চা নিচে নামবে। আমি তাই করলাম, আমি আর আমার বর মিলে আস্তে আস্তে হেঁটে ক্যান্টিনে গিয়ে কফি খেলাম। করিডরে হাঁটছি, যারা যাচ্ছে গুড লাক দিচ্ছে, আমার খুব ভালো লাগছে। মাঝে রুমে এসে বলে বসে কোমর দুলাচ্ছি। বর বলল, গান শুনবা? আমি হেডফোনে জোরে ভলিউম দিয়ে লিঙ্কিনপার্কের ‘নাম্ব, ইন দা অ্যান্ড’ আর ‘ইমিনেম-লজ ইউরসেলফ’ শুনছিলাম। বর আমাকে সাহস দিতে মজার মজার কথা বলেই যাচ্ছে, প্রতি মুহূর্তের ছবি তুলছে, বিশেষ করে যখন আমি ভালো ফিল করছি সেই মুহূর্তগুলোর ছবি। একবার বলল ড্যান্স করবে? আমি লাফিং গ্যাসের এফেক্টে ৫ মিনিট ড্যান্সও করলাম। খুব কষ্টের মধ্যেও হাসি পাচ্ছিল। সে ভিডিও করে রেখেছে সব।
রাত ১টার পর শুরু হলো আসল কষ্ট, ব্যথা, কন্ট্রাকশন কারণ ততক্ষণে ইপিডিউরালের এফেক্ট কমতে শুরু করেছে। জীবনে এত কষ্ট কোনোদিন পাইনি। মনে হচ্ছে আমি হয়তো বাঁচব না, আমি শুধু আল্লাহ, আল্লাহ বলে চিৎকার করছি। এই সময়টা আমার কাছে দুঃস্বপ্নের মতো লাগে। এতকিছুর মধ্যে আমি বার বার জানতে চাচ্ছি বাবুর হার্টবিট কেমন? ওরা বলল এগুলো তোমাকে ভাবতে হবে না, সব ভালো আছে। এমন কন্ট্রাকশন হচ্ছিল, মনে হচ্ছে আমার টয়লেট পেয়েছে। ওরা বলে, পেলে করে দাও এখানে, আসলে টয়লেট না, বেবি পুশ করছিল নিচের দিকে। ওরা বলল আমাকে রিলাক্স থাকতে, আমি কোনোভাবেই রিলাক্স হতে পারছি না। অটোমেটিক পুশ করতে শুরু করেছি, কিন্তু ওরা বলল এখনি পুশ করো না, এনার্জি রাখতে হবে, আমরা না বললে পুশ করবা না। যদিও আমি ইউটিউবে এগুলো দেখে প্রস্তুত ছিলাম, কিন্তু আমি কিছুতেই পুশ করা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারছিলাম না। মেইন মিডওয়াইফটা কি যেন আনতে রুমের বাইরে গেল। আমার মনে হলো আমার এঞ্জেল আমাকে রেখে কোথায় গেল? ও এসে কখন পুশ করতে বলবে আর আমার বেবি বের হবে।
ওরা আমাকে আরও বেশি যতœ করা শুরু করল। আমার বর আমার হাত ধরে রেখেছে, আমি ওকে জাপটে ধরে আছি। অনেক চিৎকার করছি, কিন্তু কাঁদছি না। আমি কারো মুখ দেখতে পাচ্ছি না, মনে হচ্ছে আমি পৃথিবীতে নেই। এভাবে যে কত সময় গেল আমি বলতে পারব না। আমি জানতে চাই আর কতক্ষণ লাগবে? ওরা বলে, তুমি খুব ভাল করছে, এভাবেই করতে থাক, সকাল সাতটায় আমরা যাওয়ার আগেই বেবি এসে যাবে। রাত সোয়া চারটার দিকে ওরা বলল বেবির মাথা দেখা যায়। তুমি হাত দিয়ে দেখতে পার। আমি হাত দিয়ে দেখলাম সফট চুল, আমার বরও দেখল। এরপর খালি পুশ আর পুশ করতে লাগলাম প্রতি কন্ট্রাকশনে। আর পুশ করতে গিয়ে বরের হাত আর পিঠে এমন প্রেসার দিয়েছি, ওর হাড় মনে হয় ভেঙে গেছে।
অবশেষে, ফাইনাল পুশ করলাম, আর সব কষ্টের অবসান ঘটিয়ে আমার রাজপুত্র ২৭ তারিখ সকাল ৪টা ৪৯ মিনিটে এই পৃথিবীর আলো দেখলো। একটা ছোট চিৎকার দিয়ে পৃথিবীতে নিজের অস্তিত্ব জানান দিল। বাবুকে বের করতেই আমার সব ব্যথা নিমিষেই উধাও হয়ে হয়ে গেল। না আমি আবেগে কাঁদিনি, আমি হাসতে হাসতে বললাম দাও আমার এঞ্জেলকে আমার কাছে দাও। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে বেবিকে টাওয়াল দিয়ে মুছিয়ে আমার বুকের উপর রাখল। আমি তাকিয়ে দেখছি আর হাসছি। মনে হচ্ছে আমি হেভেনে আছি। তখনো নাভি কাটেনি। বাবু ঘাড় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আমাকে, ওর বাবাকে দেখছে। আমরা তিনজন জড়াজড়ি করে লেপটে আছি। কয়েক মিনিট পরেই বাবু আমার নিপল খুঁজে খেতে শুরু করেছে। নার্সরা হাসতে হাসতে শেষ।
তখনো আমার প্লাসেন্টা ভেতরে, ২০ মিনিট লাগল বের হতে। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে পুরোটা একবারেই বের হয়েছিল। তারপর আমার আর আমার বরকে দিয়ে ওরা নাভি থেকে কর্ডটি কাটাল, বেবিকে আমার বুকের ওপরে রেখেই। প্লাসেন্টা বের হওয়ার পর সরফরিভব আমাকে দেখাল, উনি বলল আমার বি-প্লেজেন্টা ছিল। মানে, পুরোটা বের না হলে অনেক ব্লিডিং হতে পারত। তারপর ওরা আমার নিচে সেলাই করতে শুরু করে। এটা করেছে ১ ঘণ্টা সময় নিয়ে, একজন মহিলা ডাক্তারও এসেছিল ওই সময়। স্প্রে করে নিয়েছিল, তাই ব্যথা পাইনি। সব মিলিয়ে ৫টা সেলাই পড়েছে। আমার বেবি দুই ঘণ্টা এভাবে আমার বুকের ওপর ছিল। তারপর ওরা বেবিকে নামিয়ে আমার বরকে একটা ডাইপার দিয়ে পরিয়ে দিতে বলল, যদিও ওরা হেল্প করেছে। সকাল সাতটা বেজে গেছে, মিডওয়াইফদের যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। আগের সেই দয়ালু মিডওয়াইফটা আবার চলে আসছে। সুন্দর একটা ট্রেতে আমাদের জন্য স্পেশাল খাবার নিয়ে অভিনন্দন জানাতে কয়েকজন চলে আসল, নিজেকে খুব স্পেশাল মনে হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ আমি।
আমরা তখনো লেবার রুমে, বাবু আমার বুকের কাছে শুয়ে আছে। সকাল ১০টায় আমাদের একটা বিশাল রুমে ট্রান্সফার করল, সেখানে আমাদের ৩ জনের থাকার ব্যবস্থা আছে। আমি তখন বাবুকে বুকে নিয়ে একটু তন্দ্রা মতো হলো। আমাদের ফার্স্ট বেবি দেখে ১ দিন বেশি থাকলাম হাসপাতালে। ২৯ তারিখ দুপুরে ১ ঘণ্টা ড্রাইভ করে বাসায় এসে পৌঁছলাম। শুরু হলো নতুন বাবা-মার নতুন জীবন।
বাংলাদেশের মায়েদের নরমাল ডেলিভারিতে একটা ভীতি কাজ করে। যে কারণে তারা বাচ্চা নেয়ার জন্য মানসিকভাবেই প্রস্তুত থাকেন সিজারিয়ান অপারেশন করাবেন। চিকিৎসকদের আন্তরিকতা আর মনে সাহস থাকলে সকল জটিলতা কাটিয়ে স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতে বাচ্চা জন্ম দেয়া যায়। পৃথিবীর সব মায়ের প্রতি জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: সুইডেন প্রবাসী