ন্যাটো শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিয়েই বিতর্কের সৃষ্টি করে দিলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। বার্লিন ও মস্কোর মধ্যে গ্যাস নিয়ে যে চুক্তি হয়েছে তাকে তিনি অসঙ্গত বলে আখ্যায়িত করেছেন। আক্রমণ শাণিয়েছেন জার্মানি ও রাশিয়ার প্রতি। তিনি দু’দিনের ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলস পৌঁছেই বলেন, জার্মানি হলো রাশিয়ার কাছে জিম্মি (ক্যাপটিভ)। ক্ষুব্ধস্বরে তিনি এমন সমালোচনা করেন। এ খবর দিয়েছে অনলাইন স্কাই নিউজ। এতে বলা হয়, অন্য বিশ্বনেতারা ব্রাসেলসে পৌঁছার আগেই বুধবার ন্যাটো সেক্রেটারি জেনারেল জেনস স্টোলটেনবার্গের সঙ্গে সকালে নাস্তার টেবিলে দার কণ্ঠ ধারালো করেন। এ সময় তিনি অন্য দেশগুলোতে তাদের প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বৃদ্ধির তাগিদ দেন।
ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন সব মন্তব্যে এবার ন্যাটো সম্মেলনেও বিরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার সমুহ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর আগে গত মাসে কানাডায় জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনে গিয়ে তিনি একই রকম পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোকে নিয়ে কড়া মন্তব্য করেন। এমন কি ওই সম্মেলন থেকে যে যৌথ বিবৃতি দেয়া হয়েছিল তাতে তিনি সম্মতি দেন নি। তিনি তার আগেই দলবল নিয়ে পাড়ি দেন সিঙ্গাপুরে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনের সঙ্গে বৈঠক করতে। তিনি এবার ন্যাটো সম্মেলনে যোগ দিতে ব্রাসেলস পৌঁছে প্রথমেই টার্গেটে পরিণত করলেন জার্মানিকে। এ সময় তিনি বলেন, রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানি যে গ্যাস চুক্তি করেছে তাতে বার্লিন পুরোপুরি মস্কোর নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। তার ভাষায় ‘আমি যতদূর জানি, জার্মানি রাশিয়ার কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে। কারণ, তারা রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ জ্বালানি পাচ্ছে। আমরা জার্মানিকে রক্ষা করতে প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু তারা গ্যাস কিনছে রাশিয়ার কাছ থেকে। বিষয়টি ব্যাখ্যা করুন। এটার কোনো ব্যাখ্যা করা যায় না। কারণ, তারা রাশিয়াকে গ্যাস কেনা বাবদ শত শত কোটি ডলার বিল দিচ্ছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে আমাদের উচিত জার্মানির পক্ষ নেয়া’। ওই নাস্তার টেবিলে ডনাল্ড ট্রাম্পের এমন মন্তব্যে হতবিহ্বল হয়ে পড়েন ন্যাটো মহাসচিব। এ সময় তিনি ডনাল্ড ট্রাম্পকে ন্যাটোর অভিন্ন উদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করিয়ে দেন। জেনস স্টোলটেনবার্গ তাকে বলেন, ন্যাটো হলো ২৯টি জাতির জোট। এর মধ্যে মাঝে মধ্যে কিছুঠা পার্থক্য আছে। দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য থাকবে। কিছু অমতও থাকবে। এক্ষেত্রে রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত গ্যাস পাইপ লাইন হলো মিত্রদের মধ্যে ওইরকম একটি বিষয়। কিন্তু ন্যাটোর শক্তি বলে, এমন পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও আমরা সব সময়ই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে সক্ষম। পারস্পরিক সুরক্ষা, একে অন্যের পাশে দাঁড়ানো এসবই হলো ন্যাটোর মূল কাজ। কারণ, আমরা বিশ্বাস করি বিচ্ছিন্ন অবস্থার চেয়ে একত্রিত হলে আমাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়। এ সময় তিনি ট্রাম্পকে বুঝিয়ে দেন শীতল যুদ্ধের সময় রাশিয়ার সঙ্গে কি আচরণ করেছে ন্যাটোর মিত্ররা। ট্রাম্পের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ভন ডার লিয়েন। তিনি বলেন, কোনো সংশয় ছাড়াই রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের প্রচুর ইস্যু আছে। অন্যদিকে বিভিন্ন দেশ, মিত্র ও বিরোধীদের সঙ্গে কোনো প্রশ্ন ছাড়াই যোগাযোগ রাখা উচিত।