× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্বপ্নকে কবর দিয়ে মাথা উঁচু করলো ক্রোয়েশিয়া

বিশ্বজমিন

রোরি স্মিথ
(৫ বছর আগে) জুলাই ১২, ২০১৮, বৃহস্পতিবার, ১:৪১ পূর্বাহ্ন

খেলা শেষ হওয়ার অনেক আগেই তাদের পা কাজ করছিল না। তাদের মাংসপেশীতে তখন ব্যথা। ফুসফুস ঘন ঘন উঠা-নামা করছে। শরীর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছিল। যেন আর্তনাদ করছে শরীর। ক্রোয়েশিয়ার খেলোয়াররা তাদের সক্ষমতার সীমাকে হিট করেছেন। তারপরও তা অতিক্রম করেছেন আরও একবার। বৃক্করস থেকে নিঃসৃত হরমোনের মধ্যে যেন তারা ডুবে যাচ্ছিলেন।
তারা ব্যথায় কুঁকড়ে উঠছিলেন। তারপরও তাদের গতি যেন বাড়ছিল। রগগুলো আরো শক্ত হয়ে উঠছিল। নিঃশ্বাস নিচ্ছিলেন হাঁপিয়ে। এক পর্যায়ে তাদেরকে দেখে মনে হয় তারা সম্ভবত আর বেশি কিছু দিতে পারবেন না। তবু তারা সামনে এগিয়ে যেতে থাকেন। প্রতিপক্ষকে পিছিয়ে রাখেন। দৌড়াতে থাকেন। দৌড়াতে দৌড়াতে ইংল্যান্ডকে পিছনে ফেলে ইতিহাস গড়েন। বিশ্বকাপ ফুটবলে প্রথমবার ফাইনালে ওঠেন তারা।
যখন দু’দফা অতিরিক্ত সময় দেয়ার পর চূড়ান্ত বাঁশি বাজলো, ২-১ গোলে তাদের বিজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে, তখন খেলোয়ারদের কয়েকজন মাঠের সবুজ ঘাসের ওপর শুয়ে পড়েন। তাদের শরীর দিয়ে যে দক্ষতার প্রয়োগ ঘটিয়েছেন সে জন্য এভাবে তারা শুয়ে পড়েন নি। তারা শুয়ে পড়েছেন তাদের এত বড় অর্জনের কারণে।
বিশ্বকাপ থেকে সব সুপার পাওয়ার ব্রাজিল, জার্মানি, আর্জেন্টিনা ও স্পেন বিদায় নিয়েছে। কিন্তু রয়ে গেছে ৪০ লাখ মানুষের দেশ ক্রোয়েশিয়া। তাদের সামনে এখন শুধু ফ্রান্স। সেখানে তারা যদি ফ্রান্সকে পরাজিত করে বিজয়ী হয় তাহলে বিশ্বকাপের ইতিহাসে তা সবচেয়ে বড় এক ইতিহাস হয়ে থাকবে। তারা ফাইনালে উঠে এসেছে কঠিন এক পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। এ যাত্রায় তারা নাটকীয় কিছু ধাপ পাড় করেছে। ডেনমার্কের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময় খেলেছে এবং পেনাল্টিতে জিতেছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে অতিরিক্ত সময় খেলেছে এবং শেষে পেনাল্টিতে জিতেছে। আর এখন শ্বাসরুদ্ধকর এক অবস্থার অবসান হলো। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১২০ মিনিট খেলেছেন তারা। বিশ্বকাপে এমন ঘটনা একটি মহাকাব্যের মতো মনে হতে পারে। আগের দুটি রাউন্ডে যেভাবে পরাজয়ের হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করেছে, ঠিক সেইরকমভাবে ক্রোয়েশিয়া নিজেদের পুনরুদ্ধার করেছে। ইংলিশ খেলোয়াড় কিয়েরেন ট্রিপিয়ার ক্রোয়েশিয়ার জালে বল পাঠিয়ে উৎসবে মেতে ওঠেন। কিন্তু ক্রোয়েট খেলোয়াড় ইভান পেরিসিক অসাধারণভাবে খেলার দ্বিতীয়ার্ধে তা শোধ করে নিজের দেশকে সামনে নিয়ে আসেন। এর ফলে মধ্য মাঠের খেলোয়াড় লুকা মদরিচ ও ইভান রাকিটিসকে অনেক বেশি দায়িত্ব নিতে এক রকম চাপ সৃষ্টি করে। তাদের জয়ের অনেকটা সুযোগ এসেছিল। দৃশ্যত তারা বেশ কতগুলো সুযোগ হাতছাড়া করেছে। পেরিসিক পোস্টে হিট করেন। কিন্তু তা মিস হয়। এটি গোল হলে অন্যরকম হতো খেলা। তাকে থামিয়ে দেন ইংলিশ গোলকিপার জর্ডান পিকফোর্ড। তাকে বলা হয় ইংল্যান্ডের ব্যতিক্রমী গোলকিপার।
ঘড়ির কাঁটা টিক টিক করতে থাকে। সময় যায়। আবারও পেনাল্টি, আরো পেনাল্টিতে ভাগ্য নির্ধারণ হবে! ঠিক তখন প্রায় ১১০ নম্বর মিনিটে ঘটনাটি ঘটিয়ে দেন মারিও মানজুকিচ। দ্বিতীয় গোল প্রবেশ করে ইংল্যান্ডের জালে। চুপ হয়ে যায় ইংল্যান্ড। আর বয়সী এই যোদ্ধা যেন জ্বলে ওঠেন। সব দৃশ্যপট যেন তার ওপর রচনা হয়। তিনি দেশকে জিতিয়ে নেন। বয়সের কারণে তাকে দেখে মনে হচ্ছিল নিজেকে খুব কষ্টে টেনি নিচ্ছেন খেলায়। নিজেকে টেনে নিয়ে যান মাঠের কর্নারে। সেখানে লাল-সাদায় রঙিন উত্তাল ক্রোয়েট ভক্তদের সামনে নিজেকে মেলে ধরেন। তার টিমমেটরা রুদ্ধশ্বাসে দৌড়ে যান তার সঙ্গে যোগ দিতে। তারা যেন তাদের শরীর দিয়ে ঢেখে দিলেন মানজুকিচকে। যেন দেহের নিচে তার কবর রচিত হলো। তাদের নিচে পড়েছিলেন এক ফটোসাংবাদিক। তিনি নিজেকে এই বিজয় উদযাপন থেকে দূরে রাখতে পারেন নি।
চূড়ান্ত বাঁশি বাজার পরে এই দৃশ্যের সঙ্গে তুলনা করার মতো আর কিছু পাওয়া যায় নি। ক্রোয়েশিয়া দলের খেলোয়াড়রা আরো একবার দৌড়ে তাদের ভক্তদের কাছে ছুটে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করলেন। ক্লান্তি থাকলেও যেন তা তারা তখন দূর করেছেন। তারা নাচলেন। গাইলেন। সাবধানতা অবলম্বন করলেন। যেন সময়টার স্বাদ নিলেন তারা। কারো কারো সন্তানকে এগিয়ে দেয়া হচ্ছে। তাদের পতাকা এগিয়ে দেয়া হচ্ছে। লুঝনিকি স্টেডিয়ামে দাঁড়িয়ে যেন অফুরান ভালবাসা তাদেরকে বিলিয়ে দিচ্ছেন ভক্তরা।
মাঠের মাঝামাঝি বরাবর বাইরে দাঁড়ানো তখন ইংল্যান্ডের ম্যানেজার গ্যারেথ সাউথগেট। তিনি সব দেখলেন। তার খেলোয়াড়রা তার কাঁধে। মাঠের অন্যপ্রান্তে ভক্তরা তাদেরকে করতালি দিয়ে শক্তি যোগাচ্ছেন। ভাবটা গর্বের হলেও বেদনার। সবার মুখ তখন পাথরের মতো হয়ে গেছে। চোখের দৃষ্টি অনেক দূরে।
এই বিশ্বকাপের প্রতিযোগিতা যতই এগিয়ে যেতে থাকে ইংল্যান্ড ততটাই অনুভব করতে পারে যে, সম্ভবত আরও একবার তাদের সামনে বড় সম্ভাবনা এসেছে। নিজের স্কোয়াড নিয়ে প্রত্যাশার চেয়ে অনেক বেশি আশার সঞ্চার সৃষ্টি করেছিলেন গ্যারেথ সাউথগেট। অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন দ্বিতীয় রাউন্ডে শেষ ১৬ থেকে অথবা সম্ভবত কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে বাদ পড়বে ইংল্যান্ড। সেখান থেকে সেরা অর্জন দেখিয়েছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড গ্রুপ পর্যায় থেকে উঠে এসেছে। তারপর পেনাল্টি শুটআউটে জয়ী হয়েছে। দ্রুত সফলতার জন্য ফেভারিট হয়ে ওঠে। এমন সফলতায় দেশে তৈরি হয় এক উন্মাদনা। এতে ইংল্যান্ডে বেশ কয়েক প্তাহ ধরে এক উত্তেজনা বিরাজ করতে থাকে। তারা ভালবাসার পাত্রে পরিণত হন। এমন একটি দৃশ্যপট উন্মোচিত হয় যেন সেখানে অনাদিকাল পর্যন্ত সূর্য্যরে আলো থাকবে। যেখানে সরকার একটি সঙ্কটময় অবস্থায়, এক অনিশ্চয়তা রয়েছে, সেখানে মানুষের মধ্যে এমন আশা জেগে ওঠে ফুটবলকে কেন্দ্র করে।

(অনলাইন নিউ ইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত লেখা অবলম্বনে)
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর