× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রাত হয় না সেন্ট পিটার্সবার্গে!

ইংল্যান্ড থেকে

সামন হোসেন, সেন্ট পিটার্সবার্গ (রাশিয়া) থেকে
১৪ জুলাই ২০১৮, শনিবার

বিশ্বকাপ ফুটবলের বদৌলতে রাশিয়া যাওয়ার সুযোগ হলো আমার। দেখলাম সমাজতান্ত্রিক পরিকাঠামো এখনও পুরোপুরি ত্যাগ করেনি রাশিয়া। পুঁজি বাজারে প্রবেশ হয়েছে ঠিকই, ব্যক্তি মালিকানার ব্যবসাবাণিজ্য, শিল্প গড়ে উঠেছে। কিন্তু মানুষের মূল দুটি প্রয়োজন শিক্ষা ও স্বাস্থ্য রাশিয়ানরা পায় বিনামূল্যে। এখনও শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পুরোপুরি রাশিয়ান গভর্নমেন্টের নিয়ন্ত্রণে। সেখানে কোনো বেসরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠান নেই, নেই কোনো বেসরকারি নার্সিংহোম, হসপিটাল আর ডাক্তারের প্রাইভেট প্র্যাকটিস। প্রায় একমাসের মধ্যে আমি রাশিয়ার ছয়টি বড় শহর ঘুরেছি মস্কো,  সেন্ট পিটার্সবার্গ, নিজনি নভোগরদ, রুস্তভ এরিনা, কাজান ও সামারা। দেখলাম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন, প্রাণবন্ত রাশিয়া।
কোথাও ফুটপাথে হকার নেই। অপরিচ্ছন্ন, আগোছালো দোকানপাট নেই। রাস্তার পাশে পলিথিন, প্লাস্টিকের ছাউনির বালাই নেই। রাশিয়ার মোট জনসংখ্যা ১৪৮.৬ মিলিয়ন। নারীর অনুপাত পুরুষের তুলনায় বেশি। এখানে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা আর সিঙ্গল মাদারের সংখ্যাও প্রচুর। এইসব ঘটনায় শিশুর ভবিষ্যৎ যাতে নষ্ট না হয় ও মায়েদের অসুবিধায় পড়তে না হয়, সেজন্য রাশিয়ার গভর্নমেন্ট এরকম প্রত্যেক বাচ্চার জন্য অনুদানের ব্যবস্থা রেখেছে, সেই অনুদান কেবলমাত্র বাচ্চার ভবিষ্যৎ প্রয়োজনেই ব্যবহার করতে হবে। রাশিয়ার মূল চালিকা শক্তি কিন্তু মেয়েরাই। নারীর প্রতি সম্মান জানিয়ে ৮ই মার্চ আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয় ছুটি পালন করা হয় রাশিয়ায়। নারীদের প্রকৃত স্বাধীনতা দেখে এলাম সেখানে। তারা নিজেকে সুন্দর রাখতে সচেতন, পোশাকে সাহসী, কর্মক্ষেত্রে তারাই অগ্রণী। রাশিয়ায় বুলেট ট্রেন, ট্রেন, বাস, ট্রাম, ট্রলিবাস (বাসের মতো দেখতে, কিন্তু ট্রামের মতো ইলেকট্রিকে চলে) সবেতেই কন্ডাক্টর মেয়েরাই। ট্রলিবাসও ট্রামের আবার বেশির ভাগ ড্রাইভারও মেয়েরাই। ট্রেনে ক্রুর সংখ্যাতেও মেয়ে বেশি। এদের প্রত্যেকের বয়স আবার পঞ্চাশোর্ধ্ব।
মস্কোতে দেখলাম ক্রেমলিন, লেনিনগ্রাদ, লেনিনের সমাধি, হিস্টরিক্যাল মিউজিয়াম, সেন্ট বেসিল’স ক্যাথিড্রাল চার্চ ঘুরলাম আশান মল-এ। এখানকার মলগুলো এত বড় যে হেঁটে শেষ করা যায় না। পরিচ্ছন্নতা ব্যাপারটা কতটা যে মানসিক গঠনের উপর নির্ভর করে তা বলে বা লিখে বোঝানো যাবে না।
বিশ্বকাপ শুরু হয়েছে মস্কোর লুঝনিকি স্টেডিয়ামে। বিশ্বকাপ ফুটবলের পর্দা উঠেছে ১৪ই জুন। এর সমাপ্তি ঘটবে ১৫ই জুলাই। রাশিয়ায় এই সময়টাতে প্রায় ২০-২১ ঘণ্টা দিনের আলোয় ঝলমল। রাত্রি কেবল তিন চার ঘণ্টার। প্রায় রাত্রি বারোটা পর্যন্ত দিনের আলো থাকে, আবার ভোর তিনটে-চারটেতে আলো ফুটে ওঠে। এটাই ‘হোয়াইট নাইটস’-এর সময়। মস্কোর চেয়ে সেন্ট পিটার্সবার্গে হোয়াইট নাইটস উপভোগ করা যায় সবেচেয়ে বেশি। এই শহরটার সর্বত্রই যেন উৎসবের মেজাজ। দর্শনীয় স্থানগুলোতে দেশ-বিদেশের টুরিস্ট-এর ভিড় থাকে সব সময়। বিশ্বকাপ উপলক্ষে তো কথাই নেই।  দুই বারের সেন্ট পিটার্সবার্গ ভ্রমণে দেখলাম পিটার্সবার্গে যেন রাত্রি নেই। চব্বিশ ঘণ্টা লোকজনের চলাফেরা, দোকানপাট খোলা। আলোয় ভাসছে সারা শহর। পর্যটকদের জন্য সব থেকে রোমাঞ্চর সেন্ট পিটার্সবার্গে     পৃষ্ঠা ১৭ কলাম ১
নেভা নদীতে নাইট ক্রুজারে ভ্রমণ। রাত্রি একটা থেকে তিনটে পর্যন্ত নেভা নদীর বুকে স্টিমারে চড়ে রাত্রি ভ্রমণ। নদীর দু’ধারে ‘হার্মিটাস’ ও অন্যান্য প্রাসাদোপম অট্টালিকা সব আলোয় ঝলমল করে আর তার প্রতিচ্ছবি নদীর বুকে মিশে গিয়ে আরো আলোকিত করেছে চারপাশ। সেন্ট পিটার্সবার্গে নেভা নদীর উপর আছে অনেকগুলি ব্রিজ, যার উপর দিয়ে বড় বড় যানবাহন চলে। সেগুলো রাত্রিতে আলোক সজ্জিত হয়ে থাকে। ঠিক রাত্রি একটার পরে নির্দিষ্ট সময়ে সেই ব্রিজগুলো একটার পর একটা খুলে উপরে উঠে যায়। সে এক রোমাঞ্চকর দৃশ্য। আমরা ভেবেছিলাম পর্যটক আকর্ষণের জন্য এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরে জানলাম আর দেখলাম, এই সময়টায় মালবাহী ছোট জাহাজগুলো এই পথ দিয়ে পার হয়, তাই রাস্তার প্রতিবন্ধকতা দূর করতে খুলে দেয়া হয় ব্রিজগুলো। চারটের সময় যখন হোটেলে ফিরলাম তখন প্রায় ভোর হয়ে গিয়েছে। দেখলাম রাতভর অনেকেই রাস্তায় ঘোরাফেরা করছে আনন্দ করছে, মেয়েরাও।
রাশিয়ার মানুষজন সবাই আস্তে কথা বলে ও খেয়াল রাখে তার জন্য যেন অন্যের অসুবিধা না হয়। ট্রেনের মধ্যে দেখলাম যাত্রীরা সব নিজের নিজের বেড নিজেরাই গুছিয়ে রাখছে। ওদের দেখে আমরাও সেরকমই করলাম। রাশিয়া ঘুরে বুঝলাম, এখানকার মানুষজনের ব্যবহার বেশ বন্ধুত্বপূর্ণ। মস্কো বা সেন্ট পিটার্সবার্গ যেখানেই প্রয়োজন হয়েছে কোনো কিছু জানবার, জিজ্ঞাসা করতে পথ চলতি মানুষ হাসিমুখে জানিয়ে দিয়েছে তা।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর