× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

রোগীর খাবারের মান নিয়ে যত অভিযোগ

এক্সক্লুসিভ

ফরিদ উদ্দিন আহমেদ
২২ জুলাই ২০১৮, রবিবার

সরকারি হাসপাতালে রোগীর খাবারের মান নিয়ে অহরহ অভিযোগ করেন রোগী ও তাদের স্বজনরা। তাদের বক্তব্য হলো- বাজারে সবকিছুর দাম বাড়ে। কিন্তু রোগীর খাবারে মান বাড়ে না। পাঁচ বছরেও বাড়েনি সরকারি হাসপাতালে রোগীদের খাবার বাবদ বরাদ্দ। বর্তমানে এই বাবদ জনপ্রতি বরাদ্দ দৈনিক ১২৫ টাকা। এই টাকায় রোগীদের চারবেলা খাবার সরবরাহ করতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। গত কয়েক বছরের মূল্যস্ফীতির কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ও এই বরাদ্দের পরিমাণ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে আসছে। জানা যায়, ২০০৯ সালে রোগী প্রতি বরাদ্দ ৪৫ টাকা থেকে ৭৫ টাকা করা হয়।
২০১৩ সালে এই বরাদ্দ বাড়িয়ে করা হয় ১২৫ টাকা। সরকারি হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, রোগীদের প্রতিদিনই দেয়া হচ্ছে-ভাত, মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলা, পাউরুটি, জেলি, চা, বিস্কুট ইত্যাদি। তবে খাবারের মান নিয়ে রোগীদের মধ্যে রয়েছে অসন্তোষ। এদিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দাবি, সীমিত টাকায়ও রোগীদের খাবারের মান বেড়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ২০১৬ সালের হিসাব অনুযায়ী, সরকারি হাসপাতালের সংখ্যা ৬১০টি। সারা দেশে উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ৪৮২টি  হাসপাতালে রয়েছে। এর বাইরে মেডিকেল কলেজসহ জেলা পর্যায় ও বিশেষায়িত ১২৮টি হাসপাতাল রয়েছে। সরকারি এসব হাসপাতালে ৪৮ হাজার ৯৩৪টি রোগী ভর্তির জন্য শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে।

এদিকে রোগী এবং তাদের অভিভাবকরা অভিযোগ করেন, রোগীর খাবারের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ নানা উপায়ে বিভিন্ন স্তরে কারচুপি হয়ে থাকে। হাসপাতালের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে শুরু করে কয়েক পর্যায়ে নানাভাবে এ লুটপাটের কাজ চলে। রোগীর তালিকা বাড়িয়ে দেখানো হয়। নিম্নমানের খাবার উপকরণ ক্রয় করা হয়। ডালের সঙ্গে বেশি পরিমাণ পানি মেশানো থাকে। নির্ধারিত পরিমাণের এক টুকরো মাংসকে করা হয় কয়েক টুকরো। তবে সরকারি হাসপাতালের কর্মকর্তারা বলছেন, সরকারি বাজেটের তুলনায় নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বেড়েছে। পুরনো বাজেট দিয়ে ভালো মানের খাবার দিতে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যেও রোগীদের জন্য ভালো খাবার দেয়া হয়ে থাকে বলে দাবি করেন রাজধানীর বেশ কয়েকটি হাসপাতালের কর্মকর্তারা। সরকারি হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বলছেন, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বেড়েই চলেছে। সেই তুলনায় অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। রাজধানীর পুরনো ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ রোগীকে চার বেলা খাবার দিতে হয়। প্রত্যেক রোগীকে সকালে ৪ পিস রুটি, ১টি ডিম, ১টি কলা ও ৫ গ্রাম জেলি দেয়া হয়। দুপুরে পরিবেশন করা হয় ভাত, মাংস, সবজি ও ডাল। বিকালের নাশতার তালিকায় থাকে চা-বিস্কুট অথবা রুটি ও কলা। আর রাতের খাবার তালিকায় থাকে মাছ, ১টি ডিম, সবজি ও ডাল। প্রত্যেক রোগীকে এসব খাবার দিতে হচ্ছে ১২৫ টাকায়। রোগীপ্রতি দৈনিক বরাদ্দ ১২৫ টাকা থেকে ২০০ টাকা করার দাবি জানিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তারা। বলেন, নিত্যপণ্যের দাম বেড়েই চলেছে। দৈনিক ১২৫ টাকায় একজন রোগীকে তিন বেলা মানসম্মত খাবার দেয়া কঠিন হয়ে পড়ে। তার পরও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মানসম্মত খাবার না দিলেও রোগী ও অভিভাবকদের সমালোচনায় পড়তে হয়। একই অবস্থা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও। বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশনের (বিএমএ) সাবেক সভাপতি এবং ডক্টরস ফর হেলথ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক ডা. রশিদ-ই-মাহবুব এ প্রসঙ্গে মানবজমিনকে বলেন, হাসপাতালগুলোতে রোগীর খাবারের বরাদ্দ ও সিস্টেম (পদ্ধতি) পুরনো ধাঁচে চলছে। সরকারের বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বরাদ্দ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। শুধু রোগীপ্রতি অর্থ বরাদ্দ বাড়াইলে চলবে না, খাদ্যের ক্যালরি হিসাব করে বাজেট তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন এই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। তিনি বলেন, রোগীর খাবারের মান যেকোনো উপায়ে বজায় রাখা উচিত। তা রোগীর চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করা। মানসম্মত খাবার দেয়ার বিষয়টি দেখবে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রণালয়। রোগীর কী পরিমাণ ক্যালরি দরকার তা নির্ধারণ করবে হাসপাতার কর্তৃপক্ষ। নিয়মিত মনিটরিং করতে হবে। বিদ্যমান বাজেটে মানসম্মত খাবার দিতে না পারলে, মন্ত্রণালয় বরাবর বরাদ্দ বৃদ্ধির আবেদন জানাতে পারে সংশ্লিষ্ট হাসপাতাল। তিনি আরো বলেন, হাসপাতালগুলোতে খাবার সরবরাহে টেন্ডার প্রক্রিয়া থেকে শুরু করে বিরাট একটা চেইন কাজ করে। এখানেই সমস্যা তৈরি হয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর