× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২০ এপ্রিল ২০২৪, শনিবার , ৭ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১১ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

পোশাক খাতে মজুরি নিয়ে শ্রমিক-মালিক মুখোমুখি

এক্সক্লুসিভ

অর্থনীতি রিপোর্টার
২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার

তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকরা ন্যূনতম মজুরি দাবি করছেন ১২ হাজার ২০ টাকা। আর মালিকপক্ষ একজন গার্মেন্ট শ্রমিককে সর্বনিম্ন বেতন দিতে চান ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। ফলে মালিক ও শ্রমিকপক্ষ একমত না হওয়ায় চূড়ান্ত করা সম্ভব হয়নি নতুন মজুরি কাঠামো। এ নিয়ে শ্রমিকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ। একই সঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালিকদের প্রস্তাবনাটা প্রহসনের মতো। অন্যদিকে বিজিএমইএ বলছেন, এ নিয়ে কোনো জটিলতা নেই। সমাধান হয়ে যাবে।
হাতে অনেক সময় আছে। বিজিএমইএ ও মজুরি বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গত ১৪ই জানুয়ারি তৈরিপোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নতুন করে নির্ধারণের জন্য সৈয়দ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি মজুরি বোর্ড গঠন করা হয়। সে বোর্ডের তৃতীয় বৈঠকে মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরা ন্যূনতম মজুরি হিসেবে নিজেদের প্রস্তাবনা তুলে ধরেন। বৈঠকে শ্রমিকদের পক্ষ থেকে শ্রমিক নেতা শামছুন্নাহার ভূঁইয়া নিজেদের আগের দাবি থেকে সরে এসে ন্যূনতম মজুরি হিসেবে ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব করেন। এর আগে তাদের দাবি ছিল ১৬ থেকে ১৮ হাজার টাকা। যদিও এর সঙ্গে দ্বিমত করছে কিছু কিছু শ্রমিক সংগঠন। বেগম শামসুন্নাহার বলেন, আগের মজুরি বোর্ডের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে তিনি এ প্রস্তাব করেছেন। শ্রমিক ফেডারেশনগুলোর ভিন্ন ভিন্ন মজুরির দাবি ছিল। কারো ছিল ১৬ হাজার টাকা, আবার কারো ১৮ হাজার টাকা। আমি সার্বিক বিষয় চিন্তা করে ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ২০ টাকা প্রস্তাব করেছি। জাতীয় শ্রমিক লীগের নারীবিষয়ক এই সম্পাদক বলেন, আমরা হিসাব করেছি ২০১০ সালে শ্রমিকদের দাবি কত টাকা ছিল, আর কত টাকা পেয়েছে, আর ২০১৩ সালে দাবি কত টাকা ছিল আর কত টাকা পেয়েছে। এখন আমি ১৬ হাজার টাকা দাবি করলাম, কিন্তু পাওয়ার সময় যদি সেটা এক-তৃতীয়াংশ হয়ে যায়, তাহলে সমস্যা হবে। সেজন্য আমি ১২ হাজার টাকা প্রস্তাব করেছি। অন্যদিকে মজুরি বোর্ডে মালিকদের প্রতিনিধি বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান প্রস্তাব করেন ৬ হাজার ৩৬০ টাকা। সিদ্দিকুর রহমান দাবি করেন, শ্রমিকদের বর্তমান ন্যূনতম মজুরি এবং পোশাক শিল্পের বর্তমান অবস্থা বিবেচনায় নিয়েই এমন প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে, যা বাস্তবায়নযোগ্য। আমরা বিবেচনা করেছি গত ৫ বছরে মূল্যস্ফীতি কতটুকু হয়েছে। এখন শ্রমিকরা বেশি দাবি করেছে, দাবি করলেই তো হবে না, তাকে যুক্তি দিয়ে বোঝাতে হবে কেন তারা বেশি চাচ্ছে। তবে তাদের প্রস্তাব তারা দিয়েছে, আমাদেরটা আমরা দিয়েছি। এখন মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান আছেন, নিরপেক্ষ সদস্য ও স্থায়ী সদস্য আছেন, সবাই মিলে যেটা পারি, সেটাই নির্ধারণ করবো। তবে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কোনো জটিলতা হয়নি। সমাধান হয়ে যাবে। সুপারিশ প্রণয়নে এখনও পাঁচ মাস হাতে আছে। চলতি বছরের ৩১শে ডিসেম্বরের মধ্যে এই নতুন মজুরি কাঠামো চূড়ান্ত করতে হবে, যা আগামী ২০১৯ সালের ১লা জানুয়ারি থেকে কার্যকর হবে।

এর আগে সর্বশেষ ২০১৩ সালে পোশাক খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্যে মূল মজুরি ৩ হাজার টাকা, বাড়ি ভাড়া ১২০০ টাকা এবং চিকিৎসা, যাতায়াত ও খাদ্য ভাতা ১১০০ টাকা।
এদিকে শামসুন্নাহার ভূঁইয়ার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে আন্দোলনে থাকা শ্রমিক সংগঠনগুলো। ১৬ হাজার টাকা করার দাবিতে আন্দোলনের ডাক দিয়েছে শ্রমিক সংগঠনগুলো।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক জলি তালুকদার বলেন, শ্রমিক প্রতিনিধি যে প্রস্তাবনা তুলে ধরেছেন, তার সঙ্গে পোশাক শ্রমিকদের বড় অংশ একমত হবে না। ফলে ১৬ হাজার টাকা মজুরির দাবিতে তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। তিনি বলেন, আমরা মনে করি শ্রমিকদের মজুরি এখন ১৬ হাজার টাকাও যথেষ্ট না, কারণ বাজারে সব জিনিসের দাম যেভাবে বেড়েছে, আর আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী একজন শ্রমিকের ন্যূনতম মজুরি যা হওয়া উচিত তার কোনোটাই শ্রমিকেরা পাচ্ছেন না। ফলে আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা সংস্থা অক্সফাম এক প্রতিবেদনে বলেছিলেন, বিশ্বের সাতটি প্রধান তৈরি পোশাক উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে বাংলাদেশের শ্রমিকদের মজুরিই সবচেয়ে কম। অক্সফ্যামের রিপোর্টটিতে বলা হয়, বাংলাদেশে একজন সাধারণ মানুষের খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম মজুরি প্রয়োজন ২৫২ ডলারের সমান অর্থ। কিন্তু এই মুহূর্তে বাংলাদেশের একজন শ্রমিক মজুরি পান প্রায় ৬৭ ডলারের সমান অর্থ।
মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত জেলা জজ সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বোর্ডসভায় বলেছিন, দুই পক্ষের প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে অতি দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এ নিয়ে কিছু গবেষণার প্রয়োজন। তিনি জানান, সর্বনিম্ন মজুরি ঘোষণার আগে নিয়ম অনুযায়ী কিছু কারখানা সরেজমিন ঘুরে দেখবেন মজুরি বোর্ডের সদস্যরা। আগামী তিন মাসের মধ্যে মজুরির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি। যদিও বোর্ডকে নতুন মজুরি কাঠামো ঘোষণার জন্য সরকারের বেঁধে দেয়া ছয় মাস সময় আগামী ১৮ই আগস্ট শেষ হচ্ছে। বাকি কাজ শেষ করার জন্য মজুরি বোর্ড শ্রম মন্ত্রণালয়ের কাছে আরও তিন মাস সময় বাড়ানোর আবেদন করবে বলেও জানান আমিনুল ইসলাম।
জানা গেছে, মালিক ও শ্রমিক পক্ষের প্রস্তাব পর্যালোচনা করে সরকারের কাছে প্রতিবেদন জমা দেবে মজুরি বোর্ড। বোর্ডের সুপারিশ পাওয়ার পর সরকার সেটি চূড়ান্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে এবং এরপরই তা কার্যকর করা হবে। যদিও সরকার এরই মধ্যে অন্যান্য শিল্পশ্রমিকদের বেতন শতভাগ বাড়িয়েছে।
মজুরি বোর্ডের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর শতকরা ৫ ভাগ ইনক্রিমেন্টের বিধান ছিল। তিনি বলেন, শ্রমিকরা যে প্রস্তাব করেছেন তা যৌক্তিক। কারণ, মজুরি হিসাব করা হয় ৫ জনের একটি পরিবারের কথা মাথায় রেখে।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর