× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ৬ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১০ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

শিল্পনগরীর বেহালদশা, রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে চামড়া শিল্প

শেষের পাতা

এমএম মাসুদ
২৩ জুলাই ২০১৮, সোমবার

চামড়া শিল্পনগরী স্থানান্তরের এক বছর পার হলেও এখনো অনেক কারখানা চালুই হয়নি। এছাড়া রয়ে গেছে নানা অব্যবস্থাপনা। ফলে রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে চামড়া শিল্প। বিদায়ী অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের রপ্তানি আয় বাড়ানো যায়নি বরং আগের বছরের তুলনায় ১২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এই প্রকল্প সঠিকভাবে পরিচালিত হলে চামড়া
খাতে রপ্তানি আয় বাড়ানো যেত কয়েক গুণ। পাশাপাশি সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সাভার চামড়া শিল্প নগরী পরিচালিত হলে এ খাতের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে মনে করেন তারা। ব্যবসায়ীরা বলছেন, গত দুই বছর সাভারে চামড়া কারখানা সরানোর বিষয়ে নানা জটিলতায় ক্রেতা কমেছে। আর আমলান্ত্রিক জটিলতা ও সমন্বয়ের অভাবে চামড়া শিল্প পিছিয়ে পড়ছে।


ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে বলেন, ট্যানারিশিল্প সাভারে স্থানান্তর, সেখানে যথাযথ অবকাঠামো গড়ে না ওঠা, কাঁচামাল সংগ্রহে জটিলতা ও নতুন বিনিয়োগ না হওয়াসহ নানা কারণে বাজার হারাচ্ছে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এ অবস্থায় ২০২১ সালের মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য শুধু কল্পনাতেই থেকে যাবে বলে মনে করছেন তারা।

জানা গেছে, ১৫ বছরে আগে হাজারীবাগ থেকে সাভারে ট্যানারি সরানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। গত দুই বছরে সরকারের শক্ত অবস্থানে ট্যানারি সাভারে সরিয়ে নেন উদ্যোক্তারা। কিন্তু পরিবেশগত কারণ দেখিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেন ক্রেতারা। এদিকে ছয় দশক আগে গড়ে ওঠা চামড়াশিল্পে কয়েক বছর আগে সচল কারখানার সংখ্যা ছিল প্রায় আড়াইশ। কিন্তু বর্তমানে পুরোদমে উৎপাদন চলছে মাত্র ৫০টি কারখানায়। বাকিগুলোর এখন শেষ হয়নি। মূলধন ঘাটতি ও বন্ড সুবিধা না থাকায় উৎপাদন বন্ধ আছে অনেক কারখানার। প্রতিদিন বিপুল পরিমাণ বর্জ্য ফেলা হচ্ছে যেখানে সেখানে। রাসায়নিকযুক্ত বিষাক্ত পানি সরাসরি মিশছে ধলেশ্বরীতে।

আর শিল্পনগরীর রাস্তা-ঘাটেরও বেহাল দশা বলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) সূত্রে জানা গেছে।
চাহিদা অনুযায়ী চামড়া শিল্পকে আধুনিকায়ন না করলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জ হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, সমস্যা সমাধানে মালিক ও সরকারকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। বিশ্বে চামড়াশিল্পের বাণিজ্য পরিমাণ একশ বিলিয়ন ডলার। এর মাত্র এক ভাগ যোগান দেয় বাংলাদেশ।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, রপ্তানিতে পিছিয়ে পড়ছে চামড়া খাত। গত অর্থবছর চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ১৩৮ কোটি ডলার রপ্তানি লক্ষ্য ধরা হলেও তা অর্জন হয়নি। আগের বছরের চেয়ে রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ ভাগেরও বেশি।
তথ্যে অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য থেকে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ১৩৮ কোটি ডলারের বিপরীতে আয় হয়েছে ১০৮ কোটি ডলার; যা লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ২১.৩৪ শতাংশ কম। আর ২০১৬-১৭ অর্থবছরের তুলনায় ১২.০৩ শতাংশ কম।

চামড়া রপ্তানিতে ২৪ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও ২৩.৭১ শতাংশ কমে রপ্তানি হয়েছে ১৮ কোটি ৩০ লাখ ডলার; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ২৩ কোটি ২০ লাখ টাকা। চামড়াজাত পণ্য থেকে ৫৪ কোটি ডলারের রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার; যা ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ছিল ৪৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর জুতা ও অন্যান্য পণ্যে গত অর্থবছরে ৬০ কোটি ডলারের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আয় হয়েছে ৫৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাত থেকে আয় হয় ৫৩ কোটি ডলার।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, পোশাক শিল্পের হাত ধরে দেশের সামগ্রীক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির চিত্র স্বস্তি দিলেও অন্যান্য খাতগুলোতে প্রবৃদ্ধি কমেছে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রপ্তানি খাত হলেও তা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে ব্যর্থ হচ্ছে। এ ছাড়া অন্য অনেক খাতের রপ্তানি বরং আগের বছরের তুলনায় কমেছে। এর মধ্যে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে প্রবৃদ্ধি কমেছে ১২ শতাংশ। প্লাস্টিক পণ্যে কমেছে পৌনে ১৬ শতাংশ। এছাড়া  প্রকৌশল পণ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৫০ ভাগ। এজন্য শুধু পোশাকনির্ভর না হয়ে রপ্তানির এমন সম্ভাবনাময় খাতে মনোযোগ বাড়ানোর পরামর্শ সংশ্লিষ্টদের। সবশেষ অর্থবছরে হিমায়িত খাদ্য রপ্তানিতেও প্রবৃদ্ধি কমেছে প্রায় সাড়ে ৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহীন আহমেদ বলেন, সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর হওয়ার ফলে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে যায়। এ ছাড়া নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি ও যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো না থাকায় কাঁচা চামড়া সংগ্রহসহ নানা বিষয়ে বিপাকে পড়তে হয়। সংস্কারের জন্য ট্যানারি মালিকরা ব্যাংকঋণও পাচ্ছেন না বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, রপ্তানি আয়ের হিসেবে তৈরি পোশাকশিল্পের পরই চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য খাতের অবস্থান। এ শিল্পের কাঁচামাল তথা চামড়া দেশেই উৎপাদিত হওয়ায় খাতটি আমদানিনির্ভর নয়। চামড়ার গুণগত মান উন্নত হওয়ায় এর চাহিদাও ব্যাপক। পাদুকা উৎপাদনে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ একধাপ এগিয়ে সপ্তম হয়েছে। সুযোগ রয়েছে আরও এগিয়ে যাওয়ার। লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হলেও পাদুকা রপ্তানিতে আয় বাড়ছে।

লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (এলএফএমইএবি) সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহিন বলেন, সম্ভাবনার বিচারে পাদুকাশিল্পে বাংলাদেশের অবস্থান আরও শক্তিশালী করার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু হচ্ছে না। এর মানে হলো পরিকল্পনার যথেষ্ট অভাব রয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা না হলে এ খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর