ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের (আইটিইউ) এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল নির্বাচনে ফের প্রার্থী হয়েছে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের অধীন ওই সংগঠনের নির্বাহী পরিষদের সদস্য পদে টানা তৃতীয়বারের মতো লড়াইয়ে নেমেছে বাংলাদেশ। মুসলিম বিশ্বের জোট ওআইসির নির্বাচনে সহকারী মহাসচিব পদে হেরে যাওয়ার পর কোনো বৈশ্বিক সংস্থায় এটাই প্রথম বাংলাদেশের প্রার্থিতা। ফলে এ নির্বাচনকে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। আগামী অক্টোবরে দুবাইতে সংস্থার পেনিপটেনশিয়ারী কনফারেন্সে ওই ভোট হবে। সেখানে নতুন মহাসচিব নির্বাচন এবং পরের চার বছরের কর্মসূচিও পাস হবে।
সরকারি প্রতিনিধিরা বলছেন- এ নির্বাচনে কেবলই জয় চায় বাংলাদেশ। এর আগে ২০১০ সালে মেক্সিকোতে প্রথম এবং ২০১৪ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার বুসানে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রতিবেশী অনেক দেশকে পেছনে ফেলে জয়ী হয়েছিল বাংলাদেশ। ডাক ও টেলিযোযোগ মন্ত্রণালয়ের তরফে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) ওই সংস্থায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছে- ওই নির্বাচনে জয়ের ধারাবাহিকতা তো থাকবেই, আগের চেয়ে রেটিং বা বৈশ্বিক অবস্থান আরো ভালো হওয়ার আশা করে ঢাকা। আর এজন্য গতকালই ঢাকাস্থ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের প্রার্থিতার পক্ষে সমর্থন চেয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।
ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বারের সঙ্গে যৌথভাবে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ওই ব্রিফিংয়ের আয়োজন হলেও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী শেষ পর্যন্ত অংশ নিতে পারেননি। সূত্র মতে, তিনি অন্য একটি প্রোগ্রামে ব্যস্ত থাকায় তার মন্ত্রণালয়ের অন্য প্রতিনিধিরা অংশ নেন। নৈশভোজের মধ্য দিয়ে শেষ হওয়া ওই ব্রিফিংয়ে বিভিন্ন দেশের জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকরা অংশ নেন। চার বছর পর পর অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়নের নির্বাহী পরিষদের আসন্ন নির্বাচনে এশিয়া ও ওশেনিয়া অঞ্চলের (এশিয়া অ্যান্ড অস্ট্রেলেশিয়া) গ্রুপ ই থেকে ১৩টি পদের জন্য লড়ছে ১৪টি সদস্য রাষ্ট্র।
সে হিসাবে একটি রাষ্ট্র কম ভোট পেলেই বাংলাদেশের জয় নিশ্চিত। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা মানবজমিনকে জানিয়েছেন- এবারের নির্বাচনে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছে ভারত, চীন, পাকিস্তান, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব, ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড ও ফিলিপাইন। ওই নির্বাচনে কেবল গ্রুপের ভোট নয়, বরং সদস্য ১৯৩ রাষ্ট্র ভোটাধিকার প্রয়োগ করে।
অতীতের রেকর্ড মতে, সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ ১১৫ ভোট পেয়ে বৈশ্বিকভাবে সপ্তম স্থান অর্জন করেছিল। সেই নির্বাচনে ১৬৭ রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছিলেন। বাকিরা হয়ত অনুপস্থিত, না হয় ইচ্ছাকৃত ভোট প্রদান থেকে বিরত ছিল (অ্যাবস্টেনই)। ওই নির্বাচনে ই-গ্রুপের ১৩ পদের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ছিল ১৮টি রাষ্ট্র। সেখানে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, চীন, পাকিস্তান জাপান, থাইল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ইন্দোনেশিয়া, কুয়েত, সৌদি আরব, আরব আমিরাত এবং ফিলিপাইন জয় পেলেও শ্রীলংকা, মালয়েশিয়া, ইরান, লেবানন ও বাহরাইন পরাজিত হয়েছিল।
আর ২০১০ সালে প্রথম যখন ওই পদে লড়ে তখন ১৭ রাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল। সেখানে গ্রুপে জয় তো ছিলই, ১২৩ ভোট পেয়ে বৈশ্বিকভাবে বাংলাদেশ ষষ্ঠ অবস্থান অর্জন করেছিল। ১৯৭৩ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আইটিইউর সাধারণ সদস্য পদ লাভ করে। ১৯৩ রাষ্ট্র ছাড়াও প্রায় ৮শ’ সরকারি-বেসরকারি কোম্পানি ওই সংস্থার সদস্য হিসাবে রয়েছে। বিশাল বাজেটের আইটিইউ নির্বাচনে দু’দফা জয় পেলেও ঢাকা তেমন কিছু অর্জন করতে পারেনি বলে সমোলোচনা রয়েছে। অবশ্য পাল্টা বক্তব্যও আছে। সমলোচনা উড়িয়ে দিয়ে সরকারি প্রতিনিধিরা বলছেন- নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং জয়ের ধারাবাহিকতা কী কম অর্জন?