× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

ভণ্ড কবিরাজের অপচিকিৎসার শিকার ৬ কিশোরী

এক্সক্লুসিভ

আলমগীর মানিক, রাঙ্গামাটি থেকে
১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার

কাউখালীর মৈত্রী শিশু সদনে বিকারগ্রস্ত আচরণ করা সেই ছয় কিশোরী শিক্ষার্থীর অবস্থার কোনো উন্নতি হয়নি ২০ দিনেও। পলকে পলকে বৈদ্যের (কবিরাজের) গুঁতা খাওয়া এই শিক্ষার্থীরা ক্রমেই নিস্তেজ হয়ে পড়ছে। বিজ্ঞানের এই চরম উৎকর্ষতার যুগেও অস্বাভাবিক আচরণ করা ছয় নারী শিক্ষার্থী ভূতে ধরার অভিযোগে প্রায় তিন সপ্তাহ বৈদ্যের অত্যাচার সয়ে যেন বেঁচে আছে আপন মহিমায়। সভ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তারা যেন শেষ নিশ্বাসটুকু ধরে আছে একজন ত্রাণ কর্তার প্রত্যাশায়। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাদের উদ্ধারে এখনো এগিয়ে আসেনি কোনো প্রশাসন বা সরকারি কর্তৃপক্ষ। প্রায় তিন সপ্তাহ আগে কাউখালী প্রশাসনের পাঠানো মেডিকেল টিম স্পষ্ট করে ওই ছয় কিশোরীর প্রতি অমানবিক এবং পাশবিক আচরণের ইঙ্গিত প্রদানের পরও কেন প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিচ্ছে না তা এক অজানা রহস্য। এদিকে দিনে দিনে তারা হয়ে উঠছে মৃত্যু পথযাত্রী। নিরাপদ আশ্রয়, শিক্ষা ও খাবারের নিশ্চয়তা পেতে সরকারের ছাঁয়ায় আসা ওই ছয় কিশোরীর মধ্যে দুজনকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশে গত ১৯শে জুলাই কাউখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হলেও রহস্যজনকভাবে তাদের আবার রাতেই শিশু সদনে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেই থেকে তাদের শরীর থেকে ভূত তাড়ানোর কসরত করে যাচ্ছেন এক পাহাড়ি বৈদ্য। কাউখালী উপজেলার দুর্গম বড়ডলু পাড়া মু্রখ্যাত্তি মৈত্রী শিশু সদনের এই শিক্ষার্থীদের উদ্ধার উন্নত চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে এলাকার বেশ সচেতন মানুষ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জানান, সোমবারও দেখা যায়, পাহাড়ি বৈদ্য মন্ত্র আওড়িয়ে মেয়েগুলোকে গুঁতা মেরে মেরে ঝাড়ফুঁক করছে। মেয়েগুলো শরীরে রয়েছে বেশ কিছু যখম। মৈত্রী শিশু সদনের এই মেয়ে শিক্ষার্থীরা কোনো কালো থাবায় আজ অদ্ভুত আচরণ করছে সেই রহস্যও থেকে গেছে অধরা। বিষয়টি ঘিরে এলাকা সরগরম এবং আতঙ্কিত সেখানকার নারী পুরুষ। ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর একজন একটু হেসে উঠলেই বাকিরা খিলখিলিয়ে হেসে উঠছে। একজনের কান্নায় অন্যরা বিলাপ করছে। এমনকি একজন মাটিতে শুয়ে হাত-পা ছুড়লে বাকিরাও অবিকল তাই করছে। এ যেন একটি বৈদ্যুতিক বোতামে অনেকগুলো বাতি জ্বলার মতো! কিন্তু কেন এমনটা হচ্ছে তা বলতে পারছেন না কেউই। এভাবেই কেটে গেছে তিন সপ্তাহ; এ ঘটনাটি রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে মারমা পল্লী বড়ডলু মৈত্রী শিশু সদনের। বিকারগ্রস্ত এই মেয়েদের চিকিৎসায় চলছে স্থানীয় কবিরাজের মাধ্যমে তন্ত্র-মন্ত্রের ঝাড়ফুঁক। ছবিতে দেখা যাচ্ছে অসুস্থ মেয়েদের পাশে বসে কবিরাজ দিব্যি বিড়ি ফুঁকছেন। আর মাঝে মাঝে পাইপ দিয়ে ডাবের পানি পান করছেন। সদন কর্তৃপক্ষের দাবি ‘তাদের ভূতে ধরেছে’। এই ঘটনায় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে অন্যদেরও পড়াশোনা।

বাঁশের বেড়া ও টিনের চালে ঘেরা এই মৈত্রী শিশু সদনে পাশাপাশি দুই কক্ষে অবস্থান করে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থীরা। মাঝের কামরায় থাকেন প্রধান শিক্ষক। ১৯ জন মেয়ে শিক্ষার্থীর প্রায় সবাই কৈশরে বা বয়ঃসন্ধিক্ষণে। সব রুম থেকে যাতায়াতে রয়েছে ভালো ব্যবস্থা। নিজের ভাইয়ের প্রতিষ্ঠিত এই শিশু সদনের প্রধান শিক্ষক অংচিনু মারমা। সাংবাদিকরা এর আগে সরজমিন গেলে তিনি বলেছিলেন, মেয়েদের আচরণে বোঝা যাচ্ছে তাদের ভূতে ধরেছে। অসুস্থ মিশিচিং মারমার বাবা মংকালা মারমা (৪৫) জানান, ভান্তেকে (প্রধান শিক্ষক) দেখলেই আঁতকে উঠছে মেয়েরা। তারা চিৎকার করে কেঁদে উঠছে’ অনেক সময় খিঁচুনি দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। সহজ সরল এই গ্রামীণ মানুষটি মেয়ের শোকে কাতর কিন্তু তার দিশাহারা অবস্থা। গত ১৯শে জুলাই কাউখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ,এম জহিরুল হায়াতের নির্দেশে গঠিত কাউখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৫ সদস্যের মেডিকেল টিম মৈত্রী শিশু সদনটি পরিদর্শন করেন। তারা আক্রান্তরা ছাড়াও সদনের অন্য শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় বেশি আক্রান্ত দুই কিশোরীকে তারা সেখানে দেখতে পাননি। তাদেরকে কবিরাজী চিকিৎসার কথা বলে শিশু সদন থেকে সরিয়ে নেয়া হয়। মেডিকেল টিমের সিনিয়র সদস্য ডা. প্রদীপ কুমার নাথ জানিয়েছিলেন, ৬ মেয়ে শিক্ষার্থীর আচরণে ভিন্ন কিছু প্রতীয়মান হচ্ছে। তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা জরুরি বলেও জানান তিনি। তবে এই টিম আনুষ্ঠানিকভাবে কি রিপোর্ট দিয়েছে তা জানা যায়নি।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর