২৯শে জুলাই রোববার। বিমানবন্দরের পাশে অপেক্ষমাণ শিক্ষার্থীদের ওপর উঠে যায় একটি বাস। জাবালে নূর পরিবহনের সেই বাসচাপায় নিহত হন আবদুল করিম ও দিয়া খানম মিম নামের দুই শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সেই দুর্ঘটনায় আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। আবার নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের কাছে সাংবাদিকরা দুর্ঘটনার ব্যাপারে জানতে চাইলে হাসি মুখে ভারতে সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৩ জন নিহতের উদাহরণ দেন। এসব কারণে ক্ষোভে রাজধানীতে সড়কে নামেন শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের সেই রোশনাই ছড়িয়ে যায় সারা দেশে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা পেশ করেন ৯ দফা দাবি।
দাবি ১: বেপরোয়া চালকদের ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি আইনে সংযোজন করতে হবে।
পদক্ষেপ: করিম ও দিয়াকে চাপা দেয়া সেই বাসচালকসহ অপর বাসের চালক, দুই বাসের হেলপার ও জাবালে নূর পরিবহনের মালিককে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে।
দাবি ২: নৌপরিবহনমন্ত্রীকে তার বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
পদক্ষেপ: নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মৃত্যু নিয়ে সচিবালয়ে সাংবাদিকদের কাছে দেয়া বক্তব্যে আমি দুঃখিত ও লজ্জিত।
এতে যারা আহত হয়েছেন তাদের বিষয়টি ক্ষমাসুন্দরভাবে নেয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’ এ ছাড়াও নিহত দিয়া খানম মিমের বাসায় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও তার পরিবারের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন।
দাবি ৩: রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকদের গাড়ি চালানো বন্ধ করতে হবে।
পদক্ষেপ: আইনে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে নিষেধ রয়েছে। এরপরেও রাজধানীতে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ও লাইসেন্সবিহীন চালকদের ধরতে বিআরটিএকে নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সেইসঙ্গে জাবালে নূর পরিবহনের বাস দুটির নিবন্ধনসহ রুট পারমিট বাতিল করেছে বিআরটিএ। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী টার্মিনালে চেকপোস্ট বসানোর ঘোষণা দেন। এসব চেকপোস্টে চেক করা হবে গাড়ির ফিটনেস, লাইসেন্সসহ যাবতীয় বিষয়।
দাবি ৪: বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেয়া যাবে না।
পদক্ষেপ: এই দাবির বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসেনি।
দাবি ৫: শিক্ষার্থীদের চলাচলে এমইএসে ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে।
পদক্ষেপ: প্রধানমন্ত্রী ইতিমধ্যে সেনাবাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, করিম ও দিয়ার দুর্ঘটনাস্থলে আন্ডারপাস অথবা ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ করার। সেই সঙ্গে রমিজউদ্দিন স্কুল ও কলেজকে পাঁচটি নিজস্ব বাস প্রদান করেছেন তিনি।
দাবি ৬: প্রত্যেক সড়কে দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় স্পিডব্রেকার দিতে হবে।
পদক্ষেপ: প্রতিটি স্কুলের সামনে গতিরোধক নির্মাণের আশ্বাসও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ ছাড়াও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানান, প্রতিটি স্কুল-কলেজের পাশে ট্রাফিক পুলিশ থাকবে এবং রাস্তা পারাপারে সহযোগিতা করবেন তারা।
দাবি ৭: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
পদক্ষেপ: নিহত শিক্ষার্থী আবদুল করিম ও দিয়া খানম মিমের পরিবারকে ২০ লাখ টাকার পারিবারিক সঞ্চয়পত্র দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
দাবি ৮: শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।
পদক্ষেপ: এই দাবির বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসেনি।
দাবি ৯: শুধু ঢাকা নয়, সারা দেশে শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
পদক্ষেপ: এই দাবির বিষয়েও কোনো সুনির্দিষ্ট বক্তব্য আসেনি।