× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, বুধবার , ১১ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৫ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

বদিউল আলম মজুমদারের বিবৃতি / স্বার্থান্বেষী মহল ষড়যন্ত্রের গল্প ফাঁদছে

শেষের পাতা

স্টাফ রিপোর্টার
১০ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের গাড়িবহর ও আমার বাড়িতে হামলার ঘটনাটি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র তথ্যের গল্প ফাঁদছে। বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। এটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য গণমাধ্যমগুলোকে তারা ব্যবহার করছে। রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এটিকে নিয়ে মহলবিশেষের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আশ্রয় নেয়াও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। গণমাধ্যমে পাঠানো ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিবৃতিটি তুলে ধরা হলো-

গত ৪ঠা আগস্ট ২০১৮, বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট আমার মোহাম্মদপুরস্থ ১২/২, ইকবাল রোডের বাসায় একটি নৈশভোজ শেষে ফেরার পথে বাসার সামনে একদল সশস্ত্র দুর্বৃত্ত কর্তৃক আক্রমণের শিকার হন। একই সময়ে দুর্বৃত্তরা আমার বাড়িতেও হামলা চালায়। এই হামলার ঘটনাটি নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহল নানাভাবে ষড়যন্ত্র তত্ত্বের গল্প ফাঁদছে এবং বিভিন্ন ধরনের অপপ্রচার চালাচ্ছে। ঘটনাটিকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার এ অপচেষ্টার প্রেক্ষিতে আমি এর বিবরণ নিম্নে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরলাম।

ঘটনার প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশে নিযুক্ত বিদায়ী মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটকে আমি এবং আমার স্ত্রী ব্যক্তিগতভাবে বহুদিন থেকেই চিনি।
গত ৩রা জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবস পালন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে আমি তাঁকে তাঁর বিদায়ের প্রাক্কালে আমার পরিবারের সঙ্গে একটি নৈশভোজে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ জানাই। রাষ্ট্রদূত তাতে সম্মতি জ্ঞাপন করেন এবং তারিখ নির্ধারণের লক্ষ্যে তাঁর প্রটোকল কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের অনুরোধ করেন। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ৯ই জুলাই আমি তাঁর প্রটোকল কর্মকর্তাকে একটি ই-মেইল পাঠাই। একই দিনে আরেকটি ই-মেইলের মাধ্যমে তিনি আমাকে ৪ঠা আগস্ট সন্ধ্যা ৭-৩০টায় নৈশভোজটি আয়োজনের সময় দেন। দূতাবাসের প্রটোকল অনুযায়ী নৈশভোজের স্থান, সময় ও অংশগ্রহণকারীদের তালিকা সবই ই-মেইলের মাধ্যমে তাদেরকে পাঠানো হয়। নৈশভোজের সময়, উদ্দেশ্য ও উপস্থিত অতিথিদের তালিকা নিয়ে স্বার্থান্বেষী মহলের অপপ্রচার যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও সর্বৈব মিথ্যা তা এই ই-মেইলগুলো দেখলেই যে কেউই বুঝতে পারবেন।

৪ঠা আগস্ট যা ঘটেছিল
৪ঠা আগস্ট ২০১৮, সন্ধ্যায় আমার বাসায় নৈশভোজে যোগ দেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাট, ড. কামাল হোসেন ও তার স্ত্রী ড. হামিদা হোসেন এবং এম হাফিজউদ্দিন খান। এই দুই দম্পতির সঙ্গে পারিবারিকভাবে আমরা বহুদিন থেকেই ঘনিষ্ঠ। অসুস্থতার কারণে জনাব খানের স্ত্রী উক্ত নৈশভোজে যোগ দিতে পারেননি। উপরিউক্ত চারজন ছাড়া আমি, আমার স্ত্রী, পুত্র, পুত্রবধূ ও দুই কন্যাসহ মোট দশজন নিয়ে ছিল এই নৈশভোজের আয়োজন।
রাত আনুমানিক ১১টার সময় রাষ্ট্রদূত যখন আমার বাসা থেকে চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে তাঁর গাড়িতে উঠতে যাচ্ছিলেন, তখন একদল দুর্বৃত্ত- যাদের সংখ্যা আনুমানিক ৩০-৪০ জন তাঁর গাড়িতে হামলা করে। তারা তাঁর গাড়ি এবং আমার ছেলে, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের কোচ, ড. মাহবুব মজুমদারের ওপর আক্রমণ করে। দুর্বৃত্তরা বার্নিকাটের গাড়ির পেছন পেছন ধাওয়া করে এবং ইট-পাটকেল ছুঁড়ে মারে। তারা পিস্তল ও লাঠিসোঁটা বহন করছিল এবং রাষ্ট্রদূতের গাড়িতে আগুন দেয়ারও উস্কানি দিচ্ছিল।

রাষ্ট্রদূতের গাড়ি দ্রুততার সঙ্গে স্থান ত্যাগ করার পর দুর্বৃত্তরা দোতলায় অবস্থিত আমার বাসায় হামলা চালায়। তারা আমার বাসায় ইটপাটকেল ছুঁড়ে জানালার কাঁচ ভাঙচুর করে এবং গেট ভেঙে বাসায় ঢোকারও চেষ্টা করে। যদি তারা আমাদের বাসায় ঢুকতে সক্ষম হতো, তাহলে আরো গুরুতর দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারতো। আমরা সঙ্গে সঙ্গে ন্যাশনাল ইমার্জেন্সি সার্ভিস ‘৯৯৯’ নাম্বারে কল করি। দুর্বৃত্তরা প্রায় আধা ঘণ্টা আমাদের বাসার সামনে অবস্থান করে ও তাণ্ডব চালায় এবং আমাদেরকে উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করতে থাকে। তারা দিনের বেলায় আমাদেরকে দেখে নেয়ার হুমকি দিতে থাকে।
আমাদের ‘৯৯৯’ নাম্বারে কল করার প্রেক্ষিতে হামলা শেষ হবার পর পুলিশ এলেও আমাদের সঙ্গে কথা না বলে এবং আমাদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা না করেই চলে যায়, যদিও আমরা তখন চরমভাবে আতঙ্কগ্রস্ত ছিলাম।

৫ই আগস্ট অভিযোগ দাখিল
৫ই আগস্ট ২০১৮, সকালে আমি আমার তিনজন সহকর্মীসহ উপরিউক্ত ঘটনাটির বিবরণ তুলে ধরে মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করি। আমি তাঁকে জানাই যে, দুর্বৃত্তদের হামলার কারণে আমি এবং আমার পরিবারের সদস্যরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এ ছাড়া চিঠিতে ঘটনাটি সম্পর্কে একটি মামলা গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানাই এবং একইসঙ্গে আমি এবং আমার পরিবারকে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা প্রদানেরও অনুরোধ করি। থানার পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তারা জানাবেন যে এ বিষয়ে মামলা হবে, না-কি এটি জিডি হিসেবে গ্রহণ করা হবে। কিন্তু পরবর্তীতে থানা থেকে আমাদেরকে কিছু জানানো হয়নি। যদিও আমরা গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পারি যে, আমার অভিযোগটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে।

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করার অপচেষ্টা
যদিও নৈশভোজের বিষয়টি ছিল নিতান্তই একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান এবং এর তারিখ নির্ধারণ করা হয় নিরাপদ সড়কের দাবিতে কিশোর বিক্ষোভ শুরুর ২০ দিন আগে, তথাপিও মহলবিশেষ এটিকে নিয়ে একটি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হাজির করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়েছে। এটিকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য গণমাধ্যমগুলোকে তারা ব্যবহার করছে এবং নৈশভোজটিকে ‘ষড়যন্ত্র সভা’, ‘গোপন বৈঠক’ বলে অভিহিত করছে। একইসঙ্গে সেই নৈশভোজের সঙ্গে কোনো ধরনের সংশ্রবহীন আরো কিছু বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের নাম তারা এতে জড়িয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পুলিশের বরাত দিয়ে বিডিনিউজ২৪.কম (৬ই আগস্ট ২০১৮) প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে আমার বাসার নৈশভোজে ড. কামাল হোসেন, দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, এম হাফিজউদ্দিন খান, বিচারপতি আব্দুর রউফসহ বেশ কয়েকজন উপস্থিত থাকার কথা বলা হয়। এটি একটি সর্বৈব অপপ্রচার, কারণ এই পারিবারিক অনুষ্ঠানে ড. হোসেন ও খান দম্পতি ব্যতীত বাইরের অন্য কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এবং কেউ উপস্থিতও ছিলেন না।

প্রসঙ্গত, আমার জানামতে রাষ্ট্রদূতের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপির) ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের। রাষ্ট্রদূত আমার বাসায় যখন আসেন তখন তাঁর সঙ্গে সিকিউরিটি প্রটেকশনের দুটি সরকারি গাড়ি ছিল এবং তাদের তৎপরতার ফলেই তিনি ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত প্রস্থান করতে সক্ষম হয়েছিলেন।

রাষ্ট্রদূতের ওপর হামলা বাংলাদেশের ভাবমূর্তি এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি এটিকে নিয়ে মহলবিশেষের অপপ্রচার ও ষড়যন্ত্র তত্ত্বের আশ্রয় নেয়াও অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এই ন্যক্কারজনক হামলা ও অপপ্রচারের তীব্র প্রতিবাদ এবং সকল মহলকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানাই। একইসঙ্গে আমি এ ঘটনার দ্রুত বিচার চাই এবং আমার ও আমার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানাই।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর