দল বেঁধে কাঁধে বস্তা আকৃতির ব্যাগ নিয়ে হাঁটছে বেশ কয়েকজন পথশিশু। এক হাতে ব্যাগ ধরে কাঁধের উপর ফেলে রেখেছে। অন্য হাতে ধরা একটি পলিথিন ব্যাগ। ফোলানো পলিথিনের মধ্যে মাঝে-মাঝে নাক-মুখ ঢুকিয়ে কিছু একটা শুকে নিচ্ছে ওরা। যারা বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত শুধু তারা জানেন, ওই পথশিশুরা খেলার ছলে পলিথিন ব্যাগে কেন নাক-মুখ ঢুকাচ্ছে। এই পথশিশুরা ভয়াবহ ড্যান্ডির নেশায় আসক্ত। সারা দেশের ন্যায় হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার পথশিশুদের মধ্যে ড্যান্ডির আসক্তি দেখা গেছে। শায়েস্তাগঞ্জে পথশিশুদের অনেককে দিনে-রাতে শহরের বিভিন্ন জায়গায় দাঁড়িয়ে বা হাঁটা অবস্থায় এই নেশা করতে দেখা গেছে।
বিভিন্ন কাজ আর ভিক্ষাবৃত্তির পাশাপাশি এই নেশা তাদের নিত্যদিনের। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, ড্যান্ডি এক ধরনের নেশা, এতে তীব্র গন্ধ না থাকায় এই পথশিশুরা যে নেশা করছে তা কেউ ধরতে পারবেন না। অল্প খরচে এই নেশা করা যায় বলে পথশিশুরা এতে ঝুঁকে পড়েছে। এতে একেক জনের কাছ থেকে ছড়িয়ে যাচ্ছে অন্যজনের কাছে। শায়েস্তাগঞ্জ পৌর শহরসহ বস্তি ও রেলওয়ে কলোনির নিম্ন আয়ের পরিবারের শিশুদের মাঝে সাধারণত এই আসক্তি দেখা যাচ্ছে। কোনো কোনো শিশু শপিংমলসহ বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করে কিছু টাকা বাসায় নিয়ে যায়, বাকি টাকা দিয়ে ড্যান্ডি নেশার সামগ্রী কিনে নেয়। কথা হয় পলাশ (১২) নামের এক পথশিশুর সঙ্গে, আগে প্রতিদিন সে এই নেশা করতো। এখন সে এই নেশা ছেড়ে দিয়েছে। তবে, তার সঙ্গী ২০/২৫ জন এখনো ড্যান্ডি নেশায় আসক্ত বলে জানিয়েছে। পলাশ এই প্রতিনিধিকে জানায়, রাবার, চামড়াজাত দ্রব্য ও জুতা তৈরিতে ব্যবহৃত এক ধরনের আঠা ৪০ থেকে ৫০ টাকায় কিনতে পাওয়া যায়। শায়েস্তাগঞ্জ থানা ও পৌর শহরের বিভিন্ন হার্ডওয়ারের দোকানে সলিওশান নামে এসব আঠা বিক্রি করা হয়। পলিথিনের ব্যাগে এই আঠা ঢুকিয়ে কিছুক্ষণ ঝাঁকিয়ে এতে নাক-মুখ ঢুকিয়ে শ্বাস টানতে হয়। এতে তারা কিছুক্ষণ আরাম অনুভব করে। পরবর্তীতে তাদের আর ক্ষুধা-নিদ্রা অনুভব হয় না। বিভিন্ন পেশার ব্যক্তিগণ বলেন, এই ড্যান্তির প্রধান উপকরণ হচ্ছে জুতা তৈরিতে সলিওশান। অসাধু বিক্রেতারা অধিক মুনাফার আশায় এই দ্রব্য পথশিশুদের কাছে অবাধে বিক্রি করছে।
তারা সবকিছু জেনে শুনেই এই মরণ নেশার দ্রব্য পথশিশুদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। যার কারণে এই পথশিশুরা ধীরে ধীরে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জনৈক ডাক্তার বলেন, ড্যান্ডি নেশায় যেসব সামগ্রী ব্যবহার করা হয় তা শ্বাসনালীতে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহের সৃষ্টি করে। এর ফলে শ্বাসকষ্টজনিত ব্যাধি ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ নেশায় আসক্তদের খাবারে অরুচিসহ ক্ষুধামন্দা রোগে আক্রান্ত হয়।