সরাইলের চারদিকে গবাদি পশুর মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে খুরা রোগ। ইতিমধ্যে গত একমাসে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে সহস্রাধিক পশু। আর মৃত্যু হয়েছে অর্ধশতাধিক পশুর। ঈদুল আজহার ঠিক পূর্ব মুহূর্তে পশুর মাঝে এ রোগ দেখা দেয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছে এখানকার কৃষক ও ক্ষুদ্র খামারিরা। স্থানীয় লোকজন এ রোগ প্রতিরোধে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তরের ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেও তারা কৃষকদের অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন। স্থানীয় কৃষক খামারি ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দপ্তর সূত্রে জানা যায়, এবার কোরবানির ঈদে সমগ্র উপজেলায় ৩০ হাজারেরও অধিক পশুর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু স্থানীয়ভাবে ২০ হাজার পশুর চাহিদা পূরণ সম্ভব। চাহিদার তিনভাগের একভাগ পশু রয়েছে কৃষকদের ঘরে।
স্থানীয় ক্ষুদ্র খামারিদের উৎপাদনের মাধ্যমে ১০ সহস্রাধিক পশুর চাহিদা মেটানোর সম্ভাবনা রয়েছে। বাকি ১০ হাজার এলাকার বাহির থেকে আমদানি হবে। এ লক্ষ্যেই ঈদুল আজহার বাজারে চড়া দামে বিক্রি করতে এখানকার কৃষকরা গবাদিপশু পালন করে আসছেন। খামারিরাও দিনরাত পরিশ্রম করছেন। কিন্তু গত এক মাস আগ থেকে এখানে গবাদিপশুর খুরা রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে আশঙ্কাজনক হারে। অরুয়াইল ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও মুক্তিযোদ্ধা কুতুব উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, দুই লাখ টাকায় একটি গাভী ক্রয় করেছিলাম। কিছুদিন আগে এটি খুরারোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে। শুধু অরুয়াইল গ্রামেই গত একমাসে খুরারোগে প্রায় ৩০-৩৫টি গরু মারা গেছে। স্থানীয়রা জানান, সরাইল সদর ইউনিয়ন, পাকশিমুল, অরুয়াইল, পানিশ্বর ও চুন্টা ইউনিয়নে কয়েক হাজার গবাদিপশু খুরারোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ রোগের ব্যাপকতায় এখানকার কৃষকরাও দিশাহারা হয়ে পড়েছে। আরিফাইল গ্রামের মতিউর রহমান বলেন, ২ সপ্তাহ আগে কোরবানির জন্য ৬৫ লাখ টাকায় একটি মহিষ কিনে বিপদে পড়লাম। খুরা রোগ দেখা দেয়ায় মহিষটি খাচ্ছে না। উচালিয়া পাড়ার ক্ষুদ্র খামারি সাদেক মিয়া জানান, উনার ৬টি গরুই খুরা রোগে আক্রান্ত হয়ে খাবার বন্ধ। পাকশিমুল গ্রামের সিদ্দিক মিয়া বলেন, কয়েকদিন আগে আমার একটি গরু এ রোগে মারা গেছে। চুন্টার বড়বুল্লা গ্রামের খামারি শাহেদ আলী জানান, ঈদে বিক্রি করার জন্য গত ৮-৯ মাস ধরে কয়েকটি গরু লালন পালন করে আসছিলাম। সবগুলোই এখন খুরা রোগী। কপালে কি লেখা আছে জানি না। কৃষক ঈসমাইল মিয়া জানান, উপজেলা প্রাণিসমপদ অফিসে গিয়ে খুরা রোগের কোনো ওষুধ পাওয়া যায়নি। প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাফ কথা ‘বাড়িতে গিয়ে খুরা রোগের টিকা দিলে ডাক্তার ফি লাগবে ১ হাজার টাকা। আর ভ্যাকসিনের জন্য দিতে হবে দুইশ’ টাকা। আমরা আওয়ামী লীগ করি। চাপাচাপি করে কিছু করতে পারবেন না।’ এমন অভিযোগ করেন সেখানকার অনেক কৃষক। আর প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা হচ্ছে- কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে গরু গুলোকে দ্রুত বড় করতে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ানো হচ্ছে। নরম ভাত খাওয়ানো হচ্ছে। ফলে সেখানকার গরুগুলো ফুডপয়জনে আক্রান্ত হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসমপদ কর্মকর্তা ডা. মুজিবুর রহমান শতাধিক গরু অসুস্থ হওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন, খাদ্যে বিষক্রিয়ার কারণে গরুগুলো মারা গেছে, খুরারোগে নয়। অভিযোগগুলো মিথ্যা।
আমরা সবসময় সরকারি দলের লোক। আমাদের কোনো দল নেই। তবে গত এক মাসে ৭টি বাছুর খুরারোগে মারা গেছে। অধিকাংশ গরু ফুটপয়জনে আক্রান্ত। খুরারোগের ভ্যাকসিন আছে। যা কৃষকদের বিনামূল্যে সরবরাহ করা হয়। কৃষকদের সচেতনতাই পারে এ রোগ প্রতিরোধ করতে।