ইউরোপের শীর্ষ লীগগুলোর মধ্যে সবার আগে শেষ হলো ইংলিশ ফুটবলের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের বাজার। গত ১৭ই মে শুরু হয় প্রিমিয়ার লীগের গ্রীষ্মকালীন ট্রান্সফার উইন্ডো। ডেডলাইন ডে ছিল ৯ই আগস্ট। দলবদলের সময়সীমা শেষ হলেও ৩১ই আগস্ট পর্যন্ত খেলোয়াড় বিক্রি ও ধারের চুক্তিতে এবং ফ্রি এজেন্ট খেলোয়াড় সই করাতে পারবে ইংলিশ ক্লাবগুলো। স্পেন, ফ্রান্স ও জার্মানির ডেডলাইন ডে ৩১শে আগস্ট। ইতালিতে দলবদলের শেষ দিন ১৭ই আগস্ট। এই প্রথম ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ মাঠে গড়ানোর আগে ডেডলাইন ডে বেঁধে দেয়া হয়। শেষ দিনে ২৫ জন খেলোয়াড়ের আগমন ঘটে।
ডেডলাইন ডে’তে বাজিমাত করে এভারটন। বার্সেলোনা থেকে কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার ইয়েরে মিনা ও ধারের চুক্তিতে পর্তুগিজ ডিফেন্ডার আন্দ্রে গোমেজকে দলে ভেড়ায় এভারটন। গত ৮ বছরের মধ্যে এই প্রথমবার খেলোয়াড় কিনতে প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলোর খরচ তুলনামূলক কমেছে। গত বছর গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমে মোট ব্যয় হয় ১.৪ বিলিয়ন পাউন্ড। এবার অঙ্কটা নেমে এসেছে ১.২ বিলিয়ন পাউন্ডে। টাকার অঙ্কে ১৩ হাজার ৮৪ কোটির বেশি। গত বছরের তুলনায় এবার ক্লাবগুলোর খরচ ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড কমেছে। কিন্তু টানা তিন বছর মোট ব্যয়ের পরিমাণ ১ বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়েছে।
ইংলিশ ফুটবলে এবারের গ্রীষ্মকালীন দলবদলে সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় তরুণ স্প্যানিয়ার্ড গোলরক্ষক কেপা আরিজাবালাগা। থিবো কুরতোয়া রিয়াল মাদ্রিদে চলে যাওয়ায় অ্যাথলেটিক বিলবাও থেকে কেপাকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি গোলরক্ষক বানিয়ে দলে টানে চেলসি। তাকে পেতে রিলিজ ক্লজের পুরো ৭১.৬ মিলিয়ন পাউন্ড দিতে হয় চেলসিকে। ব্রাজিলিয়ান গোলরক্ষক অ্যালিসনের রেকর্ড ভেঙে দেন কেপা। গত মাসে ৬৬.৮ মিলিয়ন পাউন্ড দিয়ে রোমা থেকে অ্যালিসনকে আনে লিভারপুল। ২০০৩ সালে দলবদলের মৌসুম চালুর পর প্রথম ক্লাব হিসেবে টটেনহ্যাম এবার গ্রীষ্মকালীন বাজারে কোনো খেলোয়াড় কেনেনি।
খেলোয়াড় কেনায় এবার সবচেয়ে বেশি অর্থ ঢেলেছে লিভারপুল। ১৭৭ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয় করে তারা। অ্যালিসন ছাড়াও নাবি কেইতা (৫২.৮ মিলিয়ন পাইন্ড), ফাবিনহো (৪৩.৭ মিলিয়ন পাউন্ড), জাদরান শাকিরির (১৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড) মতো প্রতিভাবান খেলোয়াড় দলে ভেড়ায় অল রেডরা। ১২৮.৬ মিলিয়ন পাউন্ড খরচ করে তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে চেলসি। এর পরেই ফুলহ্যামের (১০৫.৩ মিলিয়ন পাউন্ড) অবস্থান। প্রথম বিভাগ থেকে প্রিমিয়ার লীগে উঠে আসা কোনো ক্লাব হিসেবে এই প্রথম ১০০ মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ের রেকর্ড গড়ে তারা। লেস্টার সিটিও ১০০ মিলিয়ন (১০৪.৩) পাউন্ড ব্যয় করে। এর পরে রয়েছে যথাক্রমে ওয়েস্টহ্যাম (৯৯ মিলিয়ন পাউন্ড), ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড (৮১.৭ মিলিয়ন পাউন্ড), আর্সেনাল (৭০ মিলিয়ন পাউন্ড)। খেলোয়াড় বিক্রি থেকে আয়ের শীর্ষে লেস্টার সিটি। গত মাসে লেস্টার থেকে ৬০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে আলজেরিয়ান উইঙ্গার রিয়াদ মাহরেজকে সই করায় বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ম্যানচেস্টার সিটি। ম্যানসিটির ক্লাব ইতিহাসে সবচেয়ে দামি ট্রান্সফার ফি’র রেকর্ড এটি। এ তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে নিউক্যাসল ইউনাইটেড (৪৩.৫ মিলিয়ন পাউন্ড)।
এবার ভিনদেশি লীগ থেকে খেলোয়াড় কেনায় খরচের রেকর্ড গড়েছে প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলো। ভিনদেশি লীগের খেলোয়াড় কিনতে এবার রেকর্ড ৮৮০ মিলিয়ন পাউন্ড ঢেলেছে ক্লাবগুলো। গতবার অঙ্কটা ছিল ৭৭০ মিলিয়ন পাউন্ড। এবার প্রিমিয়ার লীগের ক্লাবগুলো খেলোয়াড় কেনায় যে পরিমাণ অর্থ খরচ করেছে তার ৭২ শতাংশই ব্যয় করে বিদেশি লীগের খেলোয়াড় কেনায়। গতবার খরচকৃত মোট অর্থের শতকরা ৫৪ শতাংশ তারা এ খাতে ব্যয় করেছিল।
শীর্ষ পাঁচ ট্রান্সফার
খেলোয়াড় সাবেক ক্লাব বর্তমান ক্লাব ট্রান্সফার ফি
কেপা বিলবাও চেলসি ৭১ মিলিয়ন পাউন্ড
রিয়াদ মাহরেজ লেস্টার সিটি ম্যানসিটি ৬০ মিলিয়ন পাউন্ড
জরজিনহো নাপোলি চেলসি ৫৭ মিলিয়ন পাউন্ড
অ্যালিসন রোমা লিভারপুল ৫৫.৮ মিলিয়ন পাউন্ড
নাবি কেইতা লেইপজিগ লিভারপুল ৫০ মিলিয়ন পাউন্ড