× প্রচ্ছদ অনলাইনপ্রথম পাতাশেষের পাতাখেলাবিনোদনএক্সক্লুসিভভারতবিশ্বজমিনবাংলারজমিনদেশ বিদেশশিক্ষাঙ্গনরকমারিমত-মতান্তরবই থেকে নেয়া তথ্য প্রযুক্তি শরীর ও মন চলতে ফিরতে কলকাতা কথকতাসেরা চিঠিইতিহাস থেকেঅর্থনীতি
ঢাকা, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, শুক্রবার , ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ১৭ শওয়াল ১৪৪৫ হিঃ

‘শ্রম’ বিক্রির হাট !

অনলাইন

তালতলী(বরগুনা) প্রতিনিধি
(৫ বছর আগে) আগস্ট ১২, ২০১৮, রবিবার, ৫:৩১ পূর্বাহ্ন

বরগুনার তালতলী উপজেলা শহরের ভূমি অফিসের সামনের মাঠে প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ভীড় জমে ছাতা মাথায় পোঁটলাবাঁধা মানুষের। যারা বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার প্রান্তিক অঞ্চল থেকে কাজের সন্ধানে আসে। বছরের শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত আমন চাষাবাদের উপযুক্ত সময়। এ সময় শ্রমজীবী মানুষের চাহিদা থাকে বেশি। তাই তালতলীতে বসে শ্রম বিক্রির হাট। তবে রবিবার সাপ্তাহিক বাজার হওয়ায় শ্রম বিক্রির হাট বেশি জমজমাট থাকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে শুরু করে ১টা পর্যন্ত দর কষাকষি করে শ্রমজীবীদের শ্রম বিক্রি হলেও রবিবার চলে সন্ধ্যা পর্যন্ত। তালতলীর এ শ্রমবাজারটি ৫১ বছর ধরে চলে আসছে।
আজ রবিবার সরেজমিনে দেখা যায়, সহস্রাধিক শ্রমজীবী মানুষ হাটে আসে বিক্রি হতে এবং উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষ কৃষিকাজের জন্য তাদের কিনে নিয়ে যান।
চলতে থাকে অন্যান্য পণ্যের মতো দর কষাকষি। সকালের দিকে চাহিদা বেশি থাকে। শ্রমজীবীরা দামও বেশি পান। দুপুর গড়িয়ে বিকাল হলে চাহিদা কমে যায় এবং দামও কমে। তবে কোনো শ্রমজীবী অবিক্রীত থাকেন না।
স্থানীয়ভাবে শ্রমজীবীদের বলে দিনমজুর, আবার কেউ বলেন বদলা। ৬৫ বছরের বৃদ্ধ থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সের শ্রমজীবী মানুষ কাজের সন্ধানে দলে দলে ছুটে আসেন এ অঞ্চলে। এই মানুষগুলোর অধিকাংশই আশ্রয়হীন, হতদরিদ্র। ক্রেতাদের কাছে তারা কেউ কেউ এক সপ্তাহ, আবার কেউ কেউ এক মাস আমনের চারা রোপণের জন্য বিক্রি হন।
কয়েকজন শ্রমজীবীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দৈনিক ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায় তারা শ্রম বিক্রি করেন। তবে শ্রম কেনা মালিকের পছন্দের ওপর নির্ভর করে মূল্য। বৃদ্ধের চেয়ে জোয়ানদের চাহিদা বেশি। অনেকে শ্রমজীবীর শারীরিক গঠন দেখেও শ্রম ক্রয় করে থাকেন।
তালতলীর শ্রম বিক্রির হাট শ্রমজীবীদের অতি পরিচিত হওয়ায় বরগুনার ছোট গৌরিচন্না, ফুলঝুড়ি, শর্শিমুড়ি, আয়লা, চান্দখালী, বেতাগী, বকুলতলী, উত্তর বকুলতলী, ঝালকাঠির আমুয়া ও নলচিঠিসহ বিভিন্ন জেলার শ্রমজীবীরা এখানে আসেন। এই মানুষগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছেন স্বভাবে রসিক ও বয়াতি প্রকৃতির। সারা দিন কাজ শেষে মহাজনের বাড়িতে স্বাচ্ছন্দে বসেন কিচ্ছা ও গানের আসর নিয়ে। মনের সুখে গান গেয়ে কিংবা কিচ্ছা (গল্প) বলে অন্যকে আনন্দ দেন এবং নিজেরাও আনন্দিত হন।
কাজের সন্ধানে আসা বেতাগীর চন্দখালী গ্রামের সুমন, রশিদ, জামাল দৈনিক মানবজমিন কে বলেন, এ সময় গ্রামের বাড়িতে কোনো কাজকর্ম নেই। তাই এ অঞ্চলে কাজের সন্ধানে ছুটে এসেছি। এলাকায় এক দিন কাজ করলে দুদিন বসে খেতে হয়। এতে পরিবার-পরিজন নিয়ে খুব কষ্ট হয়। তারা আরও বলেন, এ অঞ্চলে কাজের চাপ বেশি হওয়ায় বদলার (শ্রমিকের) চাহিদা বেশি। দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকা হিসেবে সাত দিনের কাজের জন্য এক মহাজনের কাছে চুক্তিতে কাজে এসেছি।
তালতলীর নাওভাঙ্গা গ্রামের জনাব আলী জানান, শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি আমনের চারা রোপণের মৌসুম। এ সময় কৃষকের কাজের শেষ নেই। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাষাবাদ করতে হয়। তাই শ্রমিকের চাহিদা বেশি থাকে। এ অঞ্চলে যে পরিমাণ কাজের চাহিদা, সেই পরিমাণ শ্রমিক নেই। তাই বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা তালতলীর শ্রম বিক্রির হাট থেকে শ্রমিকদের ক্রয় করে আনতে হচ্ছে।
উপজেলার গ্রামের সোবাহানপাড়ার রাজা মিয়া দৈনিক মানবজমিন কে বলেন , আমনের চারা রোপণের জন্য দৈনিক জনপ্রতি ৫০০ টাকায় ছয়জন শ্রমিক তালতলী থেকে ক্রয় করে এনেছি। তাদের সঙ্গে চুক্তি ' আমার আমন ক্ষেতের সব চারা রোপণ করে যেতে হবে '।
অবশ্যই দিতে হবে *
অবশ্যই দিতে হবে *
অন্যান্য খবর