চট্টগ্রাম মহানগরে স্থায়ী-অস্থায়ী ৮টি বৈধ পশুর হাটের পাশাপাশি আরও ১০টি অবৈধ পশুর হাটে কোরবানির পশু বেচাকেনার প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বৈধ হাটগুলো থেকে সরকার কোটি টাকার রাজস্ব পেলেও অবৈধ হাট থেকে কানাকড়িও পাচ্ছে না।
তবে অবৈধ হাটগুলোর আয়ের টাকা যাচ্ছে সরকারি দলের নেতাকর্মীদের পকেটে। বৈধ হাট থেকে পাওনা সরকারি রাজস্বের চেয়ে বহুগুণ বেশি টাকা এসব অবৈধ হাট থেকে তোলা হচ্ছে। যা নানা কুট-কৌশলে ইজারা না দিয়ে হাটগুলোর আয়ের টাকা পকেটে ভরছে সংশ্লিষ্টরা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ইজারা না হলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আওতায় ইজারা দেওয়া স্থায়ী-অস্থায়ী কোরবানির পশুর হাট-বাজারের মতো অবৈধ হাটগুলো থেকেও সরকারি নির্ধারিত মূল্যে হাসিল আদায় করা হয়। এসব কাজে প্রতিটি হাটে জড়িত সরকার দলীয় শতাধিক নেতাকর্মী।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন বৈধ পশুরহাটগুলোর শুধুমাত্র দুটি হাটই স্থায়ী।
সেগুলো হচ্ছে- নগরীর একে খান এলাকার সাগরিকা ও মুরাদপুর এলাকার বিবিরহাট। আর অস্থায়ী পশুর হাটগুলো হচ্ছে- নগরীর বাকলিয়া-চাক্তাই ঘিরে বসা কর্ণফুলী পশুরবাজার, পতেঙ্গা স্টিল মিল, পতেঙ্গা সিটি কর্পোরেশন উচ্চবিদ্যালয় মাঠ ও পোস্তারপাড় উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ পশুর বাজার।
এছাড়া নগরীর আরও ১০টি স্থানে পশুর হাট-বাজার বসে। সেগুলো হচ্ছে- নগরীর কমল মহাজন হাট ও সল্ট গোলা রেলক্রসিং পশুরহাট, বুুড়িশ্চর সিটি কর্পোরেশন উচ্চ বিদ্যালয় মাঠ, রাহাত্তারপুল, ওয়ারলেস কলোনী, পাহাড়তলি কলেজ মাঠ, অক্সিজেন মোড়, আগ্রাবাদ জাম্বুরি মাঠ, হালিশহর রাস্তার মাথা ও সদরঘাট পশুর হাট। যেগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ।
সূত্র জানায়, স্থায়ী পশুরহাট সাগরিকা ও বিরিহাট ইজারা থেকে প্রতিবছর প্রায় ২০ কোটি টাকা মতো রাজস্ব পায় সরকার। অস্থায়ী ৬টি হাট থেকে পায় প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো। কিন্তু অবৈধ পশুরহাটগুলো থেকে কানাকড়ি রাজস্বও পায় না সরকার। কারণ হাটাগুলোর কোন ইজারাদার নেই। অথচ ইজারা দেওয়া হাটগুলোর মতোই পশু বেচাকেনার উপর হাসিল আদায় করা হয় হাটগুলোতে।
স্থানীয় লোকজন জানান, অস্থায়ী হাটগুলোর মতো অবৈধ হাটগুলোতেও প্রতিবছর প্রচুর কোরবানির পশু বেচা-কেনা হয়। যা তত্ত্বাবধায়ন করেন নগরীর সরকারদলীয় শীর্ষ নেতারা। কয়েকজন নেতা বাজার কমিটি গঠন করে অবৈধ পশুরহাটগুলো পরিচালনা করেন। পশুর হাসিল আদায় যাচাই-বাছাইয়ে থাকেন নেতাদের অনুসারী ওয়ার্ড ও মহল্লা পর্যায়ের নেতাকর্মীরা। বেচাকেনা শেষে পশুর হাসিলের কোটি কোটি টাকা ভাগবোটোয়ারা করেন নেতাকর্মীরা।
এ ব্যাপারে নগরীর রাহাত্তারপুল পশুর হাটে কর্মরত চাঁন্দগাও থানার একটি ওয়ার্ডের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পশুরহাটে কর্মরত নেতাকর্মীরা কাজ করে পারিশ্রমিক পায়। কিন্তু মোটা অংকের আয়ের টাকা যায় শীর্ষ নেতাদের পকেটে। আর আয় ঠিক রাখার জন্য হাটগুলোর ইজারা হয় না।
তিনি বলেন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এসব হাট ইজারা দেওয়ার চেষ্টা করলেও সংঘবদ্ধ নেতাকর্মীরা ইজারা নেওয়ার জন্য দরপত্রও দেয় না। ফলে এসব হাট ইজারা হয় না। কিন্তু হাট তো বসে। বরং ইজারা না হওয়ায় সরকারি রাজস্বের টাকাও নেতাকর্মীদের পকেটে ঢুকে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে চসিকের এস্টেট অফিসার এখলাস উদ্দিন আহমেদ বলেন, অস্থায়ী হাটগুলো ইজারা দেওয়ার জন্য দরপত্র আহ্বান করেও ইজারাদার পাওয়া যায়না। সেখানে আর কোথায় পশু বেচাকেনা হয় তার ইজারাদার কোথায় পাব।
তিনি বলেন, নগরীতে সিটি কর্পোরেশনের ৬টি অস্থায়ী ও দুটি স্থায়ী পশুরহাট রয়েছে। এছাড়া কোরাবনির সময় এমনিতেই যেখানে-সেখানে পশু বেচাকেনা হয়। হাট বসে। যদিও আইনের চোখে সেগুলো অবৈধ। কিন্তু কিছুই করার নেই।
তিনি আরও বলেন, কোন অবস্থাতেই এবার সড়কের উপর পশুর হাট বসাতে দেয়া হবে না। যত্রতত্র পশু জবাইও করতে পারবেন না নগরবাসী। পশু জবাইয়ের জন্য ৩৪১টি স্থান নির্ধারণ করেছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। সেখানেই পশু জবাই করতে হবে। কোরবানির পশুর বর্জ্য ব্যবস্থাপনায়ও নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। ঈদের দিনেই পশু জবাই ও পশুর হাট থেকে বর্জ্য অপসারণ শেষ করতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নিয়মিত ২ হাজার কর্মচারীর পাশাপাশি আরও প্রায় ২ হাজার শ্রমিক নিয়োগ দেয়া হয়েছে।