কুড়িগ্রামের ইয়াকুব আলী, যিনি জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। দুই পায়ে কোন পুষ্টি না থাকায় অচল দুই পা। হতদরিদ্র সংসারে তার জন্ম হওয়ায় তেমন কোন চিকিৎসা করার সুযোগও হয়নি। ভিক্ষাবৃত্তি করেই সংসার চলতো এতদিন। তবে এখন আর ভাঙ্গা হুইল রিকশা নিয়ে ভিক্ষার জন্য রাস্তায় নামতে হয় না তাকে। ভ্রাম্যমান বাদামের দোকান করে কর্মসংস্থানের নজির গড়েছেন তিনি এবং সহকর্মীদেরকেও ভিক্ষা না করার জন্য উৎসাহ দিচ্ছেন ।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসন ভিক্ষামুক্ত কুড়িগ্রাম জেলা করার পরিকল্পনা হাতে নিলে তার প্রভাব পড়ে ফুলবাড়ী উপজেলায়। প্রশাসনের চাপের কারণে কিছুটা কমে যায় ভিক্ষা দেয়ার হার। বিপদে পড়ে যায় পঙ্গু ইয়াকুব আলীসহ অন্যান্যরা।
সে সময় একটি বাড়ী একটি খামার ফুলবাড়ী অফিসের সমন্বয়কারী একরামুল হক নিজেদের অর্থ সংগ্রহ করে ভিক্ষা ছেড়ে দেয়ার প্রস্তাব দেন ইয়াকুব আলীকে। এর সঙ্গে ১৫ কেজি বাদামও কিনে দেন তাকে । তার প্রস্তাবে রাজি হয়ে ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ মিলেছে ইয়াকুব আলীর। হুইল রিকসার পিছনে ব্যানার বেধে দেয়া হয়েছে ভিক্ষা ছেড়ে দিয়ে ভ্রাম্যমান বাদামের দোকান । প্রতিদিন ৪/৫ কেজি বাদাম বিক্রি হচ্ছে এখন । বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষার্থীরা ও রাস্তার পথচারী কিনছে তার বাদাম ।
ইয়াকুব আলী ও তার স্ত্রী নাজমা বেগম জানান, ' হামাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ের সংসারের জমি নাই। শুধু ৬ শতক ভিটে মাটি আছে। ভিক্ষা আর করবো না । যে কয়েকদিন বেঁচে থাকবো বাদাম বিক্রি করে সংসার চালাবো। খুঁজি খাওয়ার চেয়ে নিজে রোজগার করাই ভালো। প্রতিদিন বাদাম বিক্রি করে ২০০/২৬০ টাকা কামাই হচ্ছে। এতে ভালো চলছে আমার সংসার। যদি কেউ একটা নতুন হুইল চেয়ার কিনি দেইল হয় মোর বাদাম বিক্রি আরো বেশী হইল হয়। তাতে সংসারটা ভালো করি চলিল হয় '।
ফুলবাড়ী উপজেলার একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের সমন্বয়কারী একরামুল হক জানান এখনও ৪৮৯ জন নারী-পরুষ ভিক্ষুক রয়েছে। তাদের তালিকা ইউনিয়ন ভিত্তিক করা হয়েছে । ঋণ দিয়ে কিংবা বিভিন্ন ভাবে স্বাবলম্বী করার জন্য পরিকল্পনা রয়েছে ।
এ প্রসঙ্গে কুড়িগ্রামে জেলার প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা সুলতানা পারভীন জানান, উপজেলা ভিত্তিক ভিক্ষুক তালিকা করা হয়েছে। তাদেরকে পুণর্বাসন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কিছু টাকা জমা করা হয়েছে। আরো কিছু বরাদ্দ পাওয়া গেলে তাদেরকে নিয়ে পুণর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে ।