ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা ও হালুয়াঘাট উপজেলায় ব্যক্তি উদ্যোগে চাষ হচ্ছে দুর্লভ এবং দামি আগর গাছ। ২০০৮ সাল থেকে ফুলবাড়িয়ার বনাঞ্চল সন্তোষপুরে ৭৫ একরে, ২০১০ সাল থেকে মুক্তাগাছার রসুলপুর বনাঞ্চলের কাঁঠালিয়া ও খাজুলিয়া এলাকায় ২৫ একরে আগর বাগান তৈরি করে বন বিভাগ। এই বাগানে স্থানীয় উপকারভোগী কৃষককে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিয়ে চাষ শুরু করা হয়। এখন ব্যক্তি উদ্যোগকে আগর গাছের বাগান গড়ে উঠছে। বাজারজাত করতে পারলে আগর চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়ার বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। জানা যায়, আগরের এক কেজি কালো কাঠের বাজার মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা। একটি আগর কাঠসমৃদ্ধ প্রাপ্তবয়ষ্ক গাছের দাম পাঁচ থেকে পঁচিশ লাখ টাকা হয়ে থাকে। তবে গাছে আগর ও বা আতর হয় না।
মুক্তাগাছায় বন বিভাগের পাশাপাশি ব্যক্তি উদ্যোগেও চাষ হচ্ছে আগরের। সরজমিন মুক্তাগাছা উপজেলার ২নং বড়গ্রাম ইউনিয়নের তারা কান্দাহার গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, আগর গাছের বাগান। এই গ্রামেরই কৃষক এমএ খালেদ রোপণ করেছেন আগর গাছের বাগান। এমএ খালেদ জানান, তিনি ২০১২ সালে আড়াই একর জমিতে ১ হাজার আগর গাছ রোপণ করেছেন। এসব আগর গাছের বয়স প্রায় ছয় বছর। ছয় বছরে বাউন্ডারি, চারা, সার, কীটনাশক ও পরিচর্যা বাবদ ১০-১২ লাখ টাকা খরচ করেছেন। তিনি আশা করছেন ১৫-২০ বছর পর পূর্ণ বয়স্ক হলে কোটি টাকা আয় হতে পারে। তার এক ছোট ভাই সাইফুল মালেকও ৫০ শতাংশ জমিতে ৪০০ গাছ রোপণ করেছেন। খালেদ বলেন, সিলেটের বড়লেখায় ৩০০ আগর ও আতর কারখানা দেখে তিনি আগর গাছ চাষে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। সিলেট থেকে চারা সংগ্রহ করে আগর চাষ শুরু করেন। তিনি বলেন, হালুয়াঘাটেও ব্যক্তি উদ্যোগে আগর গাছের বাগান গড়ে উঠেছে। দিন দিন দেশে আগর চাষি বাড়ছে। আগর চাষে চাষিদের অভিজ্ঞতা বিনিময় ও সুফল পেতে সারা দেশের আগর চাষিদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন ‘বাংলাদেশ আগর গবেষণা ও উন্নয়ন ফাউন্ডেশন’ নামে একটি সংগঠন। তিনি এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক। বর্তমানে সংগঠনের সদস্য সংখ্যা ৬৫ জন। সংগঠনের কোষাধ্যক্ষ আক্তার হোসেন হালুয়াঘাট উপজেলার ধারা ইউনিয়নে ৭০০ আগর গাছের বাগান করেছেন, সেখানেই আগর এবং আতর উৎপাদনের কারখানা স্থাপন করা হয়েছে আগামী অক্টোবর মাসে কারখানাটি উৎপাদনে যাবে। কারখানাটি পরিচালনার জন্য সিলেটের বড়লেখা আগর ও আতর এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অভিজ্ঞ কবির চৌধুরীকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। খালেদ বলেন, আগর ও আতর উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ প্রযুক্তি ও বাজারজাতকরণে সরকারের আন্তরিক সহযোগিতা পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরি। মূল্যমান আতর বা সুগন্ধী বিদেশের বাজারে বিশাল চাহিদা রয়েছে। ফলে সম্ভাবনাময় আগর চাষ করে বদলে যেতে পারে বাংলাদেশি মানুষের ভাগ্য। জানা যায়, উপমহাদেশে রাজা-নবাবদের আমল থেকেই আতরের বাঙালিদের ঘরে এমনকি মধ্যবিত্তদের মাঝে কদর রয়েছে। আতর উৎপাদনের উপকরণ সংগ্রহ ও জ্বালানি কাঠ ছাড়াও ওষুধ, পারফিউম, পারফিউম জাতীয় দ্রব্যাদি, সাবান, শ্যাম্পো এসব তৈরিতে আগর তেল ব্যবহার হয়। আতর বাংলাদেশে তরল সোনা হিসেবেও বিবেচিত।
বাড়ির আঙিনায়, রাস্তার পাশে, পতিত জমি, টিলা-টেঙ্গর এমনকি পরিত্যক্ত জমিতে আগর গাছ লাগানোর পর ফলন পাওয়া যায়। পৃথিবীতে আগর আতর পণ্যের প্রায় ১৬০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের রপ্তানি বাজার রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় আগর উড চিপস ও আতরের চাহিদা প্রচুর।
মুক্তাগাছা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নার্গিস আক্তার জানান, চলতি সপ্তাহে কান্দাহার গ্রামের কৃষক এমএ খালেদের রোপিত আগরবাগান পরিদর্শন করেছি- যা প্রশংসাযোগ্য। বাজারজাতকরণের ব্যাপারে বাগানের উদ্যোক্তারাই ভালো করে জানেন। গাছের সমস্যা আমরা পরার্মশ দিয়ে সহযোগিতা করি। আগর আতর উৎপাদন অত্যন্ত লাভজনক ব্যবসা। এ ব্যবসায় অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে বেশি মুনাফা আয় করা সম্ভব বলে জানান কৃষি কর্মকর্তারা।