একপাশের নিচের মাটি সরে যাওয়া এবং পাশ দিয়ে প্রবাহিত পাহাড়ি ছড়ার দিকে হেলে পড়ায় মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে অবস্থিত দেশের একমাত্র ক্লোরোফর্ম বৃক্ষ আফ্রিকান টিকওক গাছটি হুমকির মুখে রয়েছে। যেকোনো মুহূর্তে ঝড় তুফানে গাছটি উপড়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বিপন্ন প্রজাতির এই গাছটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য বন বিভাগ কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
বনবিভাগ সূত্র জানায়, মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আফ্রিকান টিকওক জাতীয় দু’টি দুর্লভ প্রজাতির বৃক্ষ ছিল। ২০০৬ সালের ৭ই জুলাই একটি গাছ ঝড়ে উপড়ে যায়। সেটির গুঁড়ির একাংশ এখনও উদ্যানে স্মৃতি হয়ে পড়ে আছে। লাউয়াছড়া উদ্যানের মূল ফটক থেকে ভেতরে প্রবেশ পথের দু’পাশে সারি সারি বিশাল আকৃতির নানা প্রজাতির গাছের একেবারে শেষ দিকে বন বিট কার্যালয় থেকে প্রায় ১০০ ফুট দূরে রাস্তার পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে বিরল প্রজাতির টিকওক বৃক্ষটি। আফ্রিকান টিকওক প্রজাতির ক্লোরোফরা এক্সেলসা (সাধারণত আফ্রিকান টাক, মভিলে বা ইরোকো নামে পরিচিত) ক্রান্তীয় আফ্রিকার একটি গাছ প্রজাতি। এটি ১৬০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়।
এ জাতীয় গাছ আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়। এর প্রাকৃতিক বাসস্থান রেইন ফরেস্ট, নিম্ন উপনিবেশ চিরহরিৎ বনে। বর্তমানে এই প্রজাতিটি আদি জন্মভূমি আফ্রিকাতেই রয়েছে ঝুঁকির মুখে। স্থানীয়ভাবে আফ্রিকান টিকওক ছাড়াও আবেং, আলা, বিভিন্ন নামে ডাকা হয়। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের এই গাছ নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে একসময় এলাকাবাসীর কাছে এটি অজ্ঞান গাছ হিসেবে পরিচিত ছিল। এই গাছের পাশ দিয়ে পথচারি হেঁটে অজ্ঞান হয়ে পড়তেন এমন কথা এক সময় প্রচার ছিল লোকমুখে। তবে এক গবেষণায় দেখা গেছে এই গাছে ফেনল ক্লোরোফর্মের উপস্থিতির কারণে একটু ঘুম ঘুম ভাব তৈরি হতে পারে। আবার প্রতিক্রিয়া হিসেবে নাক ও গলাতে জ্বালা এবং হাঁপানির সম্ভাবনা থাকে। এ সম্পর্কে সহকারী বন সংরক্ষক বলেন, ‘অজ্ঞান হয়ে পড়ার ধারণা ঠিক নয়। তবে ক্লোরোফর্মের উপস্থিতি যেহেতু আছে সেজন্য গাছটির অধিক সান্নিধ্য এড়িয়ে চলাই ভালো।’