মেরামতের অভাবে পঞ্চগড় পৌর এলাকার রাজনগর থেকে পূর্ব জালাশী পর্যন্ত করতোয়া নদীর তীর সংরক্ষণ বাঁধের উপর নির্মিত সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষ ও শত শত যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে। ১৮ বছর আগে নির্মাণ করা এ সড়কটির প্রয়োজনীয় মেরামত না করার কারণে প্রতিবছর বন্যায় বাঁধের বিভিন্ন অংশ ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি সড়কটিও ভেঙে যাচ্ছে। বিটুমিন উঠে গিয়ে ছোট-বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। পৌর এলাকার তুলারডাঙ্গা, কামাতপাড়া ও জালাশী মহল্লায় বন্যার সময় করতোয়া নদীর পানি প্রবেশ করায় ওই এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হতো। মানুষকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করতে ২০০০ সালে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজনগর থেকে পূর্ব জালাশী পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণ করে। বাঁধের উপর মানুষ ও যান চলাচলের জন্য পাকা সড়ক নির্মাণ করা হয়। বাঁধ ও রাস্তা নির্মাণের পর থেকে ওই এলাকায় ব্যাপক জনবসতি গড়ে উঠে।
এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে বিভিন্ন যানবাহন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও সড়কটি মেরামত করা হয়নি। গত দুই বছর আগে পূর্ব জালাশীর গরুহাটি থেকে শুরু করে সড়কের কিছু অংশ সংস্কারের কাজ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই অংশটি এখন চলাচলের উপযোগী থাকলেও বাকি অংশটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মাটি দিয়ে নির্মিত বাঁধের উপর সড়ক নির্মাণ করা হলেও সড়কের দু’পাশ যেন ভেঙে না যায় সেজন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। প্রতিবছর বর্ষাকালে প্রবল বৃষ্টিতে সরে যাচ্ছে বাঁধের মাটি। সে সঙ্গে ভাঙছে সড়কটিও। সড়কের অনেক স্থানের দু’পাশ ভেঙে সরু হয়ে গেছে। কিছু রিকশা-ভ্যানচালক বাইরে থেকে মাটি এনে ভাঙা অংশ ভরাট করে কোনো মতে চলাচল করছে। দ্রুত সংস্কার ও মেরামত করা না হলে সড়কটি দিয়ে যানবাহন চলা তো দূরের কথা মানুষও চলাচল করতে পারবে না- এমনটাই ধারণা করছে স্থানীয়রা। তুলারডাঙ্গা মহল্লার রিকশা-ভ্যানচালক আয়নাল, বাবলু, জয়নাল ও ময়জউদ্দিন বলেন, বাঁধের সড়কটি এখন আমাদের জন্য মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। অনেক স্থানে সড়কটি ভেঙে যাওয়ায় আমরা ভ্যানে করে কোনো মালামাল নিয়ে যেতে পারি না। তাই বাধ্য হয়ে নিজেদের উদ্যোগে আমরা বাইরে থেকে মাটি এনে সড়কটির গর্ত ভর্তি করে কোনো মতে চলাচল করছি। কিন্তু ভারি বৃষ্টি হলে মাটি সরে যাচ্ছে। পৌর এলাকার মধ্যে অবস্থিত জনগুরুত্বপূর্ণ এ সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন হওয়ায় পৌরসভা কর্তৃপক্ষ এটি মেরামত বা সংস্কারের দায়িত্ব নিতে পারছে না। তুলারডাঙ্গা মহল্লার বাসিন্দা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিটন সরকার বলেন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের উপর নির্মিত সড়কটি এখন অধিক গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে শতাধিক বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করে। হিন্দু সম্প্রদায়ের মরদেহ দাহ করার জন্য করতোয়া নদীর ধারে একটি শ্মশানঘাট রয়েছে। এই সড়কটি ব্যবহার করে তারা সেখানে মরদেহ নিয়ে যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে বাঁধ ও সড়কটি সংস্কার না করায় এটি এখন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে আমরা বার বার পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পৌরসভার দারস্থ হয়েছি। কিন্তু কেউ এই সড়কের দায় নিচ্ছে না। দ্রুত সড়কটি সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া না হলে আমরা এলাকার মানুষ ডিসি অফিস ঘেরাও করব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র তৌহিদুল ইসলাম সড়কটির বেহাল দশার কথা স্বীকার করে বলেন, এই বাঁধের সড়কটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কয়েক হাজার মানুষ ও যানবাহন এই সড়কটি দিয়ে চলাচল করে। এছাড়া জেলা শহরের পাশে নদীর ধারে হওয়ায় সকাল ও সন্ধ্যায় অনেক মানুষ ওই এলাকায় বেড়াতে যায়। কিন্তু সড়কটির এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে, সন্ধ্যা হলেই আর কেউ ওই সড়কে যেতে চায় না। সড়কটি পানি উন্নয়ন বোর্ডের। তারা দীর্ঘদিন ধরে সড়কটি মেরামত বা সংস্কার করছে না। আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অনুরোধ করেছি সড়কটি পৌরসভার কাছে দেয়ার জন্য। তারা তা দিচ্ছে না। আমি এনিয়ে জেলা সমন্বয় সভায় বেশ কয়েকবার আলোচনা করেছি। জেলা প্রশাসককে চিঠিও দিয়েছি। পৌরসভাকে এই সড়কটির দায়িত্ব দেয়া হলে আমরা সড়কটি সংস্কার করে মানুষ ও যান চলাচলের উপযোগী করা ছাড়াও সড়কের ধারে মানুষের বিশ্রাম ও বসার ব্যবস্থা করে দেব। এতে করে ওই এলাকায় সকাল-বিকাল-সন্ধ্যায় অনেক মানুষ বেড়ানোর সুযোগ পাবে। পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওসমান গনি বলেন, প্রায় ১৮ বছর আগে বাঁধ ও সড়কটি নির্মিত হলেও বরাদ্দের অভাবে দীর্ঘদিন ধরে মেরামতের কাজ হয়নি। গত দুই বছর আগে কিছু বরাদ্দ পাওয়ায় সড়কের গরুহাটি অংশে মেরামতের কাজ হয়েছে। গত অর্থবছরেও আমরা বরাদ্দের জন্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিলাম। কিন্তু বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। চলতি অর্থবছরেও আমরা বরাদ্দ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করব। পঞ্চগড় পৌরসভায় সড়কটির অবস্থান হওয়ায় পৌর কর্তৃপক্ষ সড়কটি দায়িত্ব নিতে চাচ্ছে। জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সভায় এ নিয়ে মেয়র সাহেব বেশ কয়েকবার আলোচনা করা ছাড়াও ডিসি মহোদয়কে চিঠি দিয়েছেন। বরাদ্দ না পেলে সড়কটির দায়িত্ব শেষ পর্যন্তু পৌরসভাকেই দিতে হবে।