চারদিকে আওয়ামী লীগের পতনের শব্দ শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী। গতকাল নয়াপল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, গত কয়েকদিন ধরে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নানা রকম দুঃস্বপ্নে অস্থির ও শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। মানুষের বাকস্বাধীনতা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, চলাফেরার স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা গণতন্ত্রকে হরণ করে যে শূন্যতার সৃষ্টি করেছেন তাতে ধেয়ে আসা প্রতিবাদী মানুষের টর্নেডোতে ভয় পেয়ে তারা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তাই কখনও ভয়ের কথা বলছেন, কখনও ধমকের সুরে কথা বলছেন। কিন্তু ধমক দিয়ে প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করা যাবে না। চারদিকে আপনাদের পতনের শব্ধ শোনা যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে সর্বত্রই জনগণ আজ সরকারের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে ধিক্কার তুলেছে।
এ জন্যই সরকারের মানসিক যন্ত্রণা বেড়ে গেছে। খালেদা জিয়া যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রতিহিংসার শিকার তার প্রমাণ মিলছে কয়েকদিন পর পর ক্ষমতাসীনদের উদ্ভট বক্তব্যে। বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকার প্রধান বাংলাদেশকে নিজের পৈত্রিক তালুক মনে করে বলেই দেশের প্রধান বিরোধী নেত্রী খালেদা জিয়াসহ বিএনপি ও বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের আজ তার আক্রোশের শিকার হয়ে মিথ্যা মামলায় কারাগারে জুলুম সইতে হচ্ছে। দেশের হাজার হাজার নেতাকর্মী মামলা-হামলায় বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত। প্রতিদিন গ্রেপ্তার চলছে নির্বিচারে। মিথ্যা মামলায় আসামি করাসহ নিজগৃহে অবরুদ্ধ করা হচ্ছে জাতীয় নেতাদের। এমন অবস্থায় অবৈধ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লাগামহীন উদ্ভট বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন।
প্রধানমন্ত্রী তার প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় বন্দি করে রাজনৈতিক ফায়দা লাভ করতে চেয়েছিলেন, শান্তিতে থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু রাজনৈতিক পরিস্থিতি তার নাগালের বাইরে চলে যাওয়ায় তিনি দিশাহারা হয়ে পড়েছেন।
রুহুল কবীর রিজভী বলেন, শিশু-কিশোররা রাস্তায় নেমেছিল নিরাপদ সড়কের দাবির আন্দোলনে। আবেগাপ্লুত অনেক স্লোগানে তারা মানুষের হৃদয়কে শুধু দোলাই দেয়নি বরং ঘুমন্ত বিবেককে জাগিয়েছে। কর্তব্য সম্বন্ধে সচেতন করেছে। এই আন্দোলনের সমর্থনকারীদের বলা হচ্ছে উস্কানিদাতা। অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ফেসবুক ব্যবহারকারী, রাজনৈতিক দল- যারা এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের হিড়িক চলছে। রিমান্ডে নিয়ে শেখানো বুলি স্বীকার করতে উৎপীড়ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্রীদের গ্রেপ্তার ও রিমান্ডে নেয়া নজিরবিহীন। এই সংবাদ মানুষের শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে, ভয়াল আতঙ্কের সৃষ্টি করছে পড়ুয়াদের অভিভাবক ও দেশবাসীর মনে। এসময় তিনি অবিলম্বে নিরাপদ সড়কের আন্দোলন ও কোটা সংস্কার আন্দোলনে গ্রেপ্তারকৃত শিশু-কিশোর-তরুণ ছাত্রছাত্রীদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারসহ তাদের রিমান্ডে নির্যাতন বন্ধ করার দাবি জানান। রিজভী আহমদ বলেন, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদকে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের নিজ বাড়িতে পুলিশ অবরুদ্ধ করে রেখেছে। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নির্দেশে তিনি অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। শুক্রবার দলীয় নেতাকর্মীরা তার সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাদেরকে পুলিশ বাধা দেয় এবং তার বাড়ি ও বাড়ির সামনে থেকে ১০ জনকে আটক করে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের সঙ্গে এ আচরণ সরাসরি গুণ্ডামি। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী তার মন্ত্রণালয় চালাতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। সড়কে মৃত্যুর মিছিল থামছে না। সড়কে শিশু-কিশোরদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা রাস্তায় নেমেছে। এসময় তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেবরা নিজেরাই নিজেদের অনাচার ও অপকর্মের দ্বারা ১/১১-এর পুনরাবৃত্তির পথ প্রশস্ত করছেন। এসময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমেদ আযম খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, প্রচার সম্পাদক শহিদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, সহ দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন, তাইফুল ইসলাম টিপু, জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ।